প্রথম পাতা
লন্ডন এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ড
তিন সন্দেহ নিয়ে চলছে তদন্ত
শুভ্র দেব
৪ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবারডেমরার কোনাপাড়ার ধার্মিক পাড়া এলাকার তালাবদ্ধ গ্যারেজে অগ্নিকাণ্ডে অভিজাত পরিবহন লন্ডন এক্সপ্রেসের ১৪টি বাস পুড়ে যাওয়ার ঘটনার রহস্য এখনো উদ্ঘাটন হয়নি। সন্দেহজনক এই অগ্নিকাণ্ড নিয়ে নানা মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। দেশের পরিবহন সংশ্লিষ্ট থেকে শুরু করে মালিক পক্ষ, ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ঈদের আগে এ ধরনের ঘটনায় লন্ডন এক্সপ্রেসের মালিক পক্ষের বড় ধরনের ক্ষতির পাশাপাশি এই বাসের নিয়মিত যাত্রীরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। থানা পুলিশের পাশপাশি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি), এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ), ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর তদন্ত করছে। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এই অগ্নিকাণ্ড নিয়ে এখনো অন্ধকারে আছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, তিন সন্দেহ ঘিরে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। প্রথমত আগের রাতে ঝড়বৃষ্টিতে বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। মালিকপক্ষ সেগুলো মেরামত করলেও পরেরদিন শর্ট সার্কিট থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থল থেকে পোড়া তার আলামত হিসাবে উদ্ধার করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কেউ নাশকতার উদ্দেশ্যে এটি করেছে কিনা সেটির তদন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
সূত্রগুলো বলছে, লন্ডন এক্সপ্রেসের গ্যারেজে দুজন দারোয়ান দায়িত্ব পালন করেন। এরমধ্যে একজন ঘটনার সময় ছুটিতে ছিলেন। আরেকজন ইফতারের জন্য ঘটনাস্থলের কয়েকশ’ মিটার দূরে একটি এতিমখানায় ছিলেন। নাশকতার উদ্দেশ্য থাকলে ফাঁকা গ্যারেজ পেয়ে কেউ সুযোগটা নিয়ে থাকতে পারে। এজন্য এতিমখানায় ইফতার করা সেই দারোয়ানকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কেউ কেউ বলছেন, লন্ডন এক্সপ্রেস জমি দখল করে গ্যারেজ দিয়েছে। সেটিরও কোনো জের থাকতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনি এটিকে নাশকতা হিসাবে মন্তব্য না করলেও ফায়ার সার্ভিসের একটি সূত্র নাশকতা হিসাবে ধরে নিচ্ছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পূর্ব অভিজ্ঞতা সবমিলিয়ে তার এরকম ধারণা করছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইকবাল হোসাইন মানবজমিনকে বলেন, এখন পর্যন্ত নাশকতার কোনো সন্দেহ বা তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি বাউন্ডারি ছিল টিনের। সেই টিনে বিদ্যুতের লাইন ছিল। কয়েকদিন আগে লাইন ও বাউন্ডারি দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর কিছু পোড়া তার পাওয়া গেছে। এগুলো তদন্তের বিষয়। তবে আমাদের প্রাথমিক ধারণা বৈদুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন মঙ্গলবার মানবজমিনকে বলেছেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে হবে না। আর যদি এটাকে নাশকতা বলি সেটাও ভুল হবে না। তবে এটি প্রমাণ করার মতো কোনো উপায় নাই। সেই সক্ষমতা আমাদের নাই। তবে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এটা প্রমাণ করতে পারে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার রবিউল লেলীন বলেন, প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে ধারণা করলেও আমরা আরও কিছু বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্ত চলছে তবে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না।
লন্ডন এক্সপ্রেসের নির্বাহী পরিচালক নুরুল ইসলাম মৃধা গতকাল মানবজমিনকে বলেন, আমরা এই ঘটনাকে এখনো স্্েরফ অগ্নিকাণ্ড হিসাবে দেখছি। এখনি অন্যকিছু ভাবছি না। অনেকে বলছে আমরা যে জায়গায় গ্যারেজ করেছি সেটি জমি দখল করে করেছি। কিন্তু জমি দখল করলে আগুনের সঙ্গে কী সম্পর্ক। জমি দখল করলে থানায় জিডি থাকতো, অভিযোগ থাকতো। আগে জানতে হবে অভিযোগের সত্যতা কতোটুকু তারপর আসামি করতে হবে। গ্যারেজে ১৪টি বাস কেন রাখা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম রোজা থেকে ২০ রোজা পর্যন্ত আমাদের টিকিট বিক্রি ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। কারণ তখন যাত্রী হয় না। এটা শুধু আমাদের না। সব বাসের একই অবস্থা। তবে ২২ রোজার পর থেকে ঈদ যাত্রা শুরু হয়। অনেকেই তখন স্ত্রী-সন্তানদের বাড়ি পাঠানো শুরু করে। তাই ওই সময়টা আমাদের গাড়ির সার্ভিসিং করি, কিছু বাসে রং করা হয়। এজন্য ওই বাসগুলো গ্যারেজে রাখা ছিল। বাকি বাস দিয়ে বিভিন্ন রুটে সংক্ষিপ্ত পরিসরে সার্ভিস দেয়া হচ্ছিল। এরমধ্যে একদিন রাতে ঝড় তুফানে গ্যারেজের বাউন্ডারি, গেট, বিদ্যুতের তার, বাসসহ আরও কিছু জিনিস ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরদিন আমরা সবকিছু মেরামত করেছি। পরে রাতেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় আমি কাকে দোষারোপ করবো।
তিনি বলেন, গ্যারেজে আমাদের দুইজন দারোয়ান দায়িত্ব পালন করে। তাদের জন্য ভেতরে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তারমধ্যে একজন ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছে। আরেকজন পাশের একটি এতিমখানায় ইফতারের জন্য গিয়েছিল। কারণ আমরা যে টাকা দেই সেটি বাঁচানোর জন্য এতিমখানায় গিয়ে সে ইফতার করে। সবার সঙ্গে ইফতারও করা হয়, মসজিদে নামাজও পড়ে। ঘটনার সময় সে মসজিদে ছিল। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবকটি ইউনিট কাজ করছে। সবাই দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
তিনি বলেন, লন্ডন এক্সপ্রেসের মালিক নুরুল ইসলাম। তিনি ছাড়াও তার চার ভাই মালিক পক্ষে আছেন। পরিবার ও নিজের অসুস্থতার জন্য তিনি এখন থাইল্যান্ডে আছেন। লন্ডন এক্সপ্রেস ঢাকাণ্ডসিলেট-ঢাকা, সিলেট-কক্সবাজার-সিলেট ও ঢাকাণ্ডকক্সবাজার-ঢাকা রুটে চলাচল করে। এ পরিবহনের ২০টি বাস ছিল বলে জানান এই কর্মকর্তা।
অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা,এর সঠিক তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তি দেয়া উচিত।
বাংলাদেশে অনেক অগ্নিকান্ডে ভারতের ষড়যন্ত্র চলছে, সাবধান হওয়া জরুরী।
এটা ১০০% নাশকতা, এনা ও শ্যামলী পরিবহনের মালিক পক্ষের যে কেউ এইটা ঘটিয়েছে। সিলেট ও চট্রগ্রাম রোড়ে লন্ডন পরিবহন সব ট্রান্সপোর্ট থেকে সেরা সেবা দিয়ে আসছে। ফলস্বরূপ এনায়েত উল্লাহ ও শ্যামল ঘোষের পরিকল্পনার এই ক্ষতি করেছে তারা। ওদের মোবাইল ও কল লিস্ট চেক করলে সব কিছু পাওয়া যাবে।