ঢাকা, ২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

জ্বালানি তেলের দাম কমার প্রভাব নেই কোথাও

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
২ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার
mzamin

দেশে জ্বালানি তেলের দাম দু’দফায় লিটারে ডিজেল ও কেরোসিনে কমেছে ৩ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ চালু করেছে সরকার। তবে জ্বালানি তেলের দাম কমার প্রভাব নেই কোথাও। সেটা নিত্যপণ্যে বা পরিবহনে। ফলে দফায় দফায় জ্বালানি তেলের দাম কমানোর হিস্যা অনুযায়ী বাস ও পণ্য পরিবহনের ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়েছে  যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত নতুন দর। বর্তমানে নতুন দামে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটারে ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১০৬ টাকা দরে। আগের চেয়ে যা সোয়া ২ টাকা কম।  যা ১লা এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম কমার পরে আগের নির্ধারিত ভাড়া দিতে চাইছেন না যাত্রীরা। এই নিয়ে বিভিন্ন বাসের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয় বাস শ্রমিকদের সঙ্গে।

বিজ্ঞাপন
তবে ভাড়া কমানো সংক্রান্ত বিষয়ে গতকাল বিআরটিএ একটি সভা করেছে। 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন এ ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বালানির দাম নির্ধারিত হচ্ছে। দু’দফায় মিলে লিটারে ৩ টাকা কমেছে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম। এ সুবিধা কিন‘ সাধারণ মানুষ পায়নি। এখন ১০৬ টাকার মধ্যে সরকারের পকেটে যাচ্ছে ১৬ টাকা।  আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, লিটার ১০০ টাকা করা যেতে পারে। এর আগেও লিটারে ৫ টাকা কমেছিল। তখনো কিন‘ পরিবহন ভাড়া কমেনি। এবার দু’দফায় মিলে লিটারে ৩ টাকা কমেছে, পরিবহন মালিকরা কিছু বলছে না। যদি দাম বাড়ে তখনই বলে ওঠে পরিবহন ভাড়া বাড়াতে হবে। 

এদিকে, দফায় দফায় জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর হিস্যা অনুযায়ী বাস ও পণ্য পরিবহনের ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দাবি করেন, এরই মধ্যে  দু’দফা জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে অথচ বাস ও পণ্যবাহী পরিবহনের ভাড়া কমানোর কোনো উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি। এর আগেও ৩ পয়সা হারে কমিয়ে বাস ভাড়ার তালিকা পুনঃনির্ধারণ করা হলেও যাত্রীসাধারণ এই ৩ পয়সা কমানোর সুফল পায়নি। তখন থেকে সরকার পরিবহন মালিকদের বিশেষ সুবিধা দিতে এহেন ছোট ছোট অংকের হারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো হচ্ছে কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিসি’তিতে জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর হিস্যা অনুযায়ী বাস, লঞ্চ ও পণ্য পরিবহনের ভাড়া কমানোর দাবি জানান তিনি।

কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এম শামসুল আলম বলেন, এতে সাধারণ মানুষ কোনো সুফল পায়নি। দাম নির্ধারণ করার কথা ছিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)। জ্বালানি বিষয়ে অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আইন রহিত করার ফলে আমরা কোনো সুফল পাচ্ছি না। জ্বালানির সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। সরকারকে জ্বালানি প্রাইস স্ট্যাবিলাইজ্‌ড ফান্ড গঠন করার পরামর্শ দিয়েছিলাম আমরা। তেলের দাম বেড়ে গেলে সেখান থেকে ভর্তুকি দেয়ার কথা বলেছিলাম। আর কমলে উদ্বৃত্ত এখানে জমা দিতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন‘ তারা সেটা শোনেনি। উদ্বৃত্ত টাকা নয়-ছয় হচ্ছে। অস্বচ্ছতা রয়েছে দাম কমানো বা বাড়ানোর পুরো প্রক্রিয়ায়। 

প্রথম দফায় গত ৮ই মার্চ থেকে দর কার্যকর হয়। ওই দফায় প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনে দাম কমেছে ৭৫ পয়সা। পেট্রোল কমেছে ৩ টাকা ও অকটেনে কমেছে ৪ টাকা। অকটেনের দাম কমে হয় ১২৬ টাকা, পেট্রোলে কমে হয় ১২২ টাকা। যা দ্বিতীয় দফায় অপরিবর্তিত রয়েছে । 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগে ভোক্তা পর্যায়ে তেমন কোনো সুফল মিলছে না। তেলের দাম কমলেও পরিবহন ভাড়া কমে না কোথাও। কিন‘ দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে ভাড়া বেড়ে যায়। এ অবস্থায় তেলের দাম সি’তিশীল রাখতে বিকল্প উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থাৎ যখন বিশ্ববাজারে দাম কম এবং দেশে বেশি থাকে, তখন বাড়তি মুনাফা আলাদা তহবিলে রাখতে হবে। আবার যখন বিশ্ববাজারে দাম বাড়বে, তখন দেশে দাম না বাড়িয়ে ওই তহবিলের অর্থ দিয়ে সমন্বয় করতে হবে। 

জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের সূত্র নির্ধারণ করে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয় গত ২৯শে ফেব্রুয়ারি। এতে বলা হয়, দেশে ব্যবহৃত অকটেন ও পেট্রোল ব্যক্তিগত যানবাহনে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিলাসদ্রব্য (লাঙারি আইটেম) হিসেবে সব সময় ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রোলের দাম বেশি রাখা হয়। অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি করে সব সময়ই মুনাফা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসি। মূলত ডিজেলের ওপর বিপিসির লাভ-লোকসান নির্ভর করে। দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশই ডিজেল। দীর্ঘ সময় ধরে ডিজেল বিক্রি করেও মুনাফা করছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরও আগেই দাম কমানোর সুযোগ ছিল।

ভর্তুকির চাপ এড়াতে ২০২২ সালের আগস্টে গড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের দাম। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২৩ দিনের মাথায় ওই মাসের শেষ দিকে প্রতি লিটারে ৫ টাকা করে কমানো হয় দাম। ডিজেলের দাম কমলে বাস ও ট্রাক মালিকদের খরচ কমবে। সেচের ব্যয়ও কমবে। অকটেন ও পেট্রোলের দাম কমলে ব্যয় কমবে গাড়ি ও মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের। যদি বাস ও ট্রাক ভাড়া না কমে, তাহলে পণ্যের পরিবহন ব্যয়ও কমবে না। সাধারণ মানুষ সুফল পাবে না।
এদিকে, ডিজেলের দাম দু’দফায় লিটারে ৩ টাকা কমায় বাস ভাড়া কিলোমিটারে ৩ পয়সা কমতে পারে। গতকাল রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ সদর দপ্তরে ভাড়া নির্ধারণ কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, ভাড়া কমানোর সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করলে তা কার্যকর হবে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status