ঢাকা, ২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

বড় মনিরের বিরুদ্ধে এবার ঢাকায় মামলা

কলেজছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার
৩১ মার্চ ২০২৪, রবিবার
mzamin

ফের ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইলের আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে। এবার ঢাকায় এক কলেজছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধর্ষণ করেছেন। শুক্রবার রাতে ঢাকার তুরাগ এলাকার প্রিয়াংকা সিটি আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এ ফোন পেয়ে পুলিশ ওই এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠিয়েছে। তবে পুলিশ বড় মনিরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। কৌশলে তিনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় তুরাগ থানায় ভুক্তভোগী মামলা করেছেন। বড় মনির টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব এবং টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই। তিনি টাঙ্গাইল পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। 

তুরাগ থানায় করা মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামী দুবাই প্রবাসী। সেই সুবাদে তিনি বাবার সঙ্গে দক্ষিণখান এলাকায় বসবাস করেন।

বিজ্ঞাপন
দুই মাস আগে বড় মনিরের সঙ্গে তার ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে বড় মনির তাকে ‘ছোট বোন’ বলে ডাকতেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে বড় মনির ফোনে কথা বলতেন। একপর্যায়ে তাকে বড় মনির জানান, তার বাড়ি টাঙ্গাইলে। মঙ্গলবার রাত ১০টায় উত্তরা হাউজ বিল্ডিং মাসকট প্লাজার পেছনে এসে তাকে ফোন দেন বড় মনির। তিনি বলেন, ‌আপু আমি তো ঢাকায় এসেছি? তুমি কি আমার সঙ্গে একটু দেখা করতে পারবা? আমি সকালে টাঙ্গাইল চলে যাবো। পরে ভুক্তভোগী মাসকট প্লাজার পেছনে এসে বড় মনিরের সঙ্গে দেখা করেন। তখন বড় মনির তার গাড়িতে ভুক্তভোগীকে উঠান। কথাবার্তা শেষে তাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যান বড় মনির। পরদিন বুধবার বিকালে ভুক্তভোগীকে উত্তরা জমজম টাওয়ারের সামনে থাকার কথা বলেন বড় মনির। সেই অনুযায়ী ভিকটিম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জমজম টাওয়ারের সামনে আসেন। ঠিক ১০-১৫ মিনিট পর বড় মনির রিকশাযোগে আসেন এবং ভিকটিমকে রিকশায় করে তুরাগ থানা এলাকার প্রিয়াংকা সিটি নামে একটি ভবনের তৃতীয় তলায় নিয়ে যান। সেখানে তাকে ধর্ষণ করেন।
তুরাগ থানার ওসি মোস্তফা আনোয়ার মানবজমিনকে বলেন, এক ভুক্তভোগী টাঙ্গাইলের বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন। আমরা মামলার তদন্ত করছি। ভুক্তভোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, বড় মনিরের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে আমার মেয়ের পরিচয় হয়। দেখা করার কথা বলে একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে অস্ত্রের মুখে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। 

এর আগে ২০২২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর আরেক কিশোরীকে ধর্ষণ করেছিলেন বড় মনির। এ ঘটনায় গত বছরের ৫ই এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইলের সদর থানায় মামলা করেন কিশোরী। ওই মামলায় তিনি গত বছর গ্রেপ্তার হয়ে এখন জামিনে আছেন। সেই মামলায় বড় মনিরের স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়েছিল। টাঙ্গাইলের মামলার কিশোরী অভিযোগ করে বলেন, সম্পত্তি নিয়ে নিজ ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ হলে তিনি বিষয়টি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে জানান। কিবরিয়া সমস্যা সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ২০২২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর শহরের আদালত পাড়ায় একটি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে তাকে যেতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন বড় মনির। ঘটনা প্রকাশ করলে মেরে ফেলার হুমকিও দেন। ওইদিন ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখিয়ে’ বড় মনির পরে আরও কয়েকবার তাকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের ফলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ কথা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন। তাতে রাজি না হওয়ায় গত বছরের ২৯শে মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনির ওই কিশোরীকে তুলে নিয়ে যান এবং একটি কক্ষে তালাবন্ধ করে রেখে আবারো ধর্ষণ করেন। তার স্ত্রী নিগার আফতাবও সেখানে ওই কিশোরীকে মারপিট করেন। পরে মেয়েটির একটি সন্তান হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৫ই মে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. মাহমুদুল মহসীনের আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন বড় মনির। বিচারক তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে উচ্চ আদালতে জামিনের জন্য যান বড় মনির। তখন আদালত বড় মনির ও সদ্যজাত শিশুর ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। গত ৯ই অক্টোবর আপিল বিভাগে দাখিল করা ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভে জন্ম নেয়া নবজাতকের বাবা বড় মনির নন। পিবিআই’র প্রতিবেদনে নবজাতকের ডিএনএ’র সঙ্গে বড় মনিরের ডিএনএ মেলেনি বলে উল্লেখ করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পক্ষে থাকায় গত বছরের ৯ই অক্টোবর বড় মনিরকে জামিন দেন আপিল বিভাগ। অন্যদিকে গত বছরের ১৮ই নভেম্বর ওই ধর্ষণ মামলার বাদী কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পাঠকের মতামত

মেয়েটি আত্মহত্যা করেছিল নাকি হত্যা করেছি তদন্ত করে দেখা দরকার

সোহেল
৩১ মার্চ ২০২৪, রবিবার, ২:৩০ অপরাহ্ন

DNA রিপোর্টে কি পুনরায় করা যায় না। কারণ আগের রিপোর্টে প্রভাব খাটানো হতে পারে।

Md.Shahidul Islam
৩১ মার্চ ২০২৪, রবিবার, ৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status