প্রতিদিন মাস্তুল মেহমানখানায় ১০০০ ইফতারের আয়োজন

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মাস্তুল ফাউন্ডেশন রমজান উপলক্ষে প্রতিদিন ১০০০ হাজার এর অধিক অসহায় ও নিম্নআয়ের রোজাদারদের  মাস্তুল মেহমানখানায় ইফতার ও সেহারীর আপ্যায়ন করছে। অসহায় ও নিম্ন আয়ের রোজাদাররা রমজানের ইফতারের আমেজ থেকে যাতে বঞ্চিত না হয় তাই এই উদ্যোগ।  

প্রতিদিন অসংখ্য বৃদ্ধ, শিশু, দিনমজুর ও অস্বচ্ছল পরিবার  রায়েরবাজার বাড়ইখালী এলাকায় অবস্থিত মাস্তুল মেহমানখানায় মেহমান হয়ে ইফতার গ্রহন করার জন্য ভিড় জমায়। মেহমানখানা থেকে প্রতিদিন সাধ্য অনুযায়ী ইফতারের আয়োজন থাকে ; কখনও বিরিয়ানী আবার কখনও খিচুড়ি আবার কখনও থাকে ডিম, সবজী ও ভাত । সাথে থাকে ইফতারের বুট, মুড়ি,পিয়াজু ও বেগুনি ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেরিবাধে অবস্থিত এক মুদি দোকানদার তার পরিবার নিয়ে মেহমানখানায় প্রতিদিন ইফতার করে যান। তিনি বলেন, আল্লাহ আমাদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন, মেহমানখানায় এসে পেট ভরে পরিবার নিয়ে ভাল মন্দ খেতে পারি নাইলে জিনিসের যা দাম, দোকানে মাল তুলতে যেয়ে দেনায় আছি; পরিবার কে নিয়ে  ইফতার করার সামর্থ্য আমার নাই।

মেহমানখানার স্বেচ্ছাসেবক বাবুর্চি কাওসার জানান, প্রতিদিন ১০০০ রোজাদারদের জন্য ইফতার আয়োজন করা হয়। তারপরও অসংখ্য  রোজাদারদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে খাবারের স্বল্পতার জন্য। খাবার দিতে না পারলে তাদের মুখ দেখে আমাদের খুব খারাপ লাগে কিন্তু কিছুই করার থাকে না ।

মেহমানখানার আরেক অতিথি বৃদ্ধা রহিমা খালা বলেন, এই মেহমান খানার পাশের এই বস্তিতে আমি থাকি, বয়স হইছে তাই কেউ আর বাসায় কাম দিতে চাই না। এইবার ইফতার সেহরী কেমনে করতাম ভাবতে আছিলাম। আল্লাহ রহম করসে গরীবের লাইগ্যা মেহমানখানায় খাবার আছে।

মাস্তুল ফাউন্ডেশনের হেড অফ অপারেশন রায়হান রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি এই সকল রোজাদারদের ইফতারের ব্যবস্থা করতে। প্রতিদিন ১,০০০ ইফতারের আয়োজন নিয়ে মাঠে নেমেছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন শতাধিকের উপর রোজাদারদের ফেরত যেতে হচ্ছে । ফান্ডের স্বল্পতার জন্য আমরা  নিজেরা জানি না মেহমানখানা থেকে আর কতদিন ইফতারের এই আয়োজন করতে পারব। আপনারা সহযোগিতার হাত বাড়ালেই আমরা পারব ইনশাআল্লাহ।  

মাস্তুল ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান। মাস্তুলের প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছে দাফন-কাফন সেবা প্রজেক্ট, যার মাধ্যমে করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩০০০ এর অধিক লাশ দাফন হয়েছে। মাস্তুলের রয়েছে নিজস্ব স্কুল, মাদ্রাসা এবং শেল্টারহোম যেখানে আবাসিক/অনাবাসিক মিলে শতাধিক পিতামাতাহীন/ অনাথ/ এয়াতিম শিক্ষার্থী রয়েছে । এর বাহিরে কয়েক জেলায় প্রজেক্ট স্কুলগুলোতে হাজারের অধিক সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সকল শিক্ষার উপকরন দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পুষ্টিকর খাবার, শিশু অধিকার, মৌলিক চাহিদা নিশ্চয়তা করা হচ্ছে। মাস্তুল ফাউন্ডেশনের রয়েছে সেলাই প্রশিক্ষন কেন্দ্র, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যার মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম করে তোলা হচ্ছে। এর বাহিরে যাকাত স্বাবলম্বী প্রজেক্টের মাধ্যমে ১০০০ জনের বেশি মানুষকে স্বাবলম্বী করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে বৃদ্ধ বাবা-মা দের জন্য মাস্তুল বৃদ্ধাশ্রম এবং মাস্তুল মেহমানখানা, যেখান থেকে শতাধিক অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের একবেলা পেট পুড়ে খাওয়ার ব্যাবস্থা হয়।