ঢাকা, ২ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

বিবিধ

বাবা দিবসে বাবাকে লেখা চিঠি

(১ বছর আগে) ১৮ জুন ২০২৩, রবিবার, ৪:৪৪ অপরাহ্ন

mzamin

প্রিয় আব্বু,

সপ্তম আসমানের ওই ওপারে জানি ভালোই আছো। পৃথিবীর মায়া ছেড়ে গিয়ে ওপারে থাকা মানুষগুলো কি মন্দ থাকে! জানি খুব আয়েশ করে বসে আকাশ থেকে আমাদের দেখছো তুমি। আমাদের দিনলিপি, আমাদের যাপিত জীবন, তোমার রেখে যাওয়া শিক্ষা আর আদর্শে কেমন আছি আমরা, কেমন কাটছে আমাদের দিন তা তোমার অজানা নয়। তাই আর নতুন করে কি লিখব তোমাকে। তবুও মাঝে মাঝে দিশেহারা হলে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করে, মনে হয় চিৎকার করে বলি, “আব্বু, আমার জন্য একটু দোয়া করো”। জানি, এই কথাটা পড়ে তুমি খুব হাসবে, ভাববে, “এতো বড় হয়ে গেছি, এক বাচ্চার মা হয়ে গেছি তাও আমার ছেলেমানুষি গেলোনা” ভাববে, “তোমার ছোট্ট অপু বুঝি আর কখনো বড় হবে না”

আব্বু, সত্যি জানিনা বড় হয়ে ওঠা কাকে বলে? তবে পরিবর্তনটা এখন ঠিক ঠিক অনুভব করতে পারি, খুব বুঝতে পারি, আমি আর আগের মতো সেই ছোট্ট অবুঝ শিশুটা নেই, আমি এখন চাইলেই আর আগের মতো বাচ্চা বাচ্চা আবদার করতে পারিনা! আগের মতো সপ্তাহের সেই হাটের দিনটার জন্য আর তীব্রতর প্রতীক্ষা করে থাকতে হয়না আমাকে, এখন আর আম্মুর কড়া শাসন থেকে পালিয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না, লাল নীল রেশমী চুড়ি, হলুদ ফিতে, কাজল, স্নো, পাউডার কিংবা মোয়া, গজা, বাতাসা কেনার জন্য বাচ্চা বাচ্চা আবদারের সময় বুঝি এখন ফুরিয়েছে।

তোমার কাঁধে ওঠার দিন চলে গেছে কবেই, বরঙ তোমার চলে যাওয়ার দিন তোমার হাত দুখানাকেই নিজের কাঁধে তুলে নিতে পেরেছিলাম আমি। মাটির ব্যাংক ভেঙে আর আমার পয়সা বের করতে হয়না, এ টি এম বুথের ভিতরে ছকছক করে আঁকা বোতাম খটাখট চেপে, হাতের উপর বের হয়ে আসা কাগজের নোটে চাইলেই এখন আমি মানিব্যাগটা ভরাতে পারি। তবুও নিজের চুড়ি, ফিতা, বাতাসা কেনার ইচ্ছে হয় না। তার বদলে বাসায় ফেরার সময় হাতে থাকে বাজারের ব্যাগ কিংবা সংসারের টুকিটাকি জিনিস।

তবুও, দিন, সপ্তাহ, মাস শেষে মনে হয় কিছুই করতে পারিনি আমি। কিছু করা হলো না তোমার আর আম্মুর জন্য। চির বৈরী বাস্তবতার কঠিন কষাঘাতে পিষ্ট হয়েছি বারবার, হেমলকের কঠিন বিষে নীল হলেও বলতে পারিনা কিছুই! সংসারের টানাপোড়েন আর জীবন যুদ্ধে ছুটে চলা দুর্নিবার গতি সামলাতে সামলাতেই হিমশিম অবস্থা এখন আমার নিত্যকার রুটিন।

আব্বু, অনেক কিছুইতো তোমাকে দেবার ইচ্ছে ছিলো, হয়ত পারিনি তার কানা কড়িও। সাধ, সাধ্য, পরিস্থিতি আর বাস্তবতা কোনটাই আমার অনুকূলে ছিলো না। প্রতিকূলতার বিপরীতে সাঁতার কাটতে কাটতে আমি যে বড্ড পরিশ্রান্ত। তুমি যখন অসুখে বিছানায় শয্যাশায়ী ছিলে, আঙুল মুছে দুচোখের দূরত্বে চৌকাঠ থেকে ফিরে এসেছি বারবার। হৃদয় কাঁপতো, হাত পা শীতল হয়ে যেতো। এত প্রতীক্ষা, বিবিধ অসাঢ় সংশয়, সামাজিক আকাশ, আর অনেকটা ঈশ্বরবাদে বিতাড়িত আমাদের উলটো রথের কথা তখন কেউ হয়ত জানতে চায়নি। না জানুক, তবুও শারীরিক অনুপস্থিতিতে কতটা ভুল ফুল হয়, অনবদ্য অর্গান কতটা বোধের জন্ম দেয়, কেউ কেউ তো জানুক। কেউ মানুক আর নাই মানুক, বলা হোক বা নাই হোক, তবুও তোমায় ভালোবাসি, অনেক ব্যাখ্যাতীত ভাষায়।

সামান্য একফোঁটা শান্তির জন্য তুমি ভীষণ তৃষিত ছিলে, সব কটা ছেলে মেয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেই যেন তোমার শান্তি। আমাদের নিশ্চিত ভবিষতের জন্য তোমার অনিমেষ ব্যাকুলতা, আমাদের সুস্থতা, স্বচ্ছলতাকে পরিপক্ক ভাবে আমাদের সাথে বেঁধে দেওয়ার জন্যই তুমি দুহাতের মাঝে আবদ্ধ করেছো লোভনীয় অসংখ্য ঋতুকাল, নিজের সুখের ঘরে তালা দিয়েছো সেই কবেই। সেই সব কিছু বলার বা ব্যাখ্যা দেবার শব্দকোষ আমার জানা নেই।

জানো আব্বু, আমি পূনঃজন্মে বিশ্বাস করিনা, তবু বারবার আমি তোমার ঔরসেই জন্ম নিতে চাই। বারবার শুনতে চাই, তোমার দরাজ কন্ঠ। বাবা, তুমি বলতে, স্বপ্ন দেখার কোন বয়স হয়না, কোন সময় হয়না, লাগে না কোন কারন, কেবল স্বপ্নগুলোর পিঠে রঙ চড়াতে লাগে এক দুর্নিবার অদম্য ইচ্ছেশক্তি।

আচ্ছা, ইচ্ছেগুলো কি কখনো মৃত হয়? অথবা কোনো স্বপ্ন? প্রতিবার বিস্তৃর্ণ অঞ্চল জুড়ে শুধু ছড়িয়ে থাকে আমার অতৃপ্ত ইচ্ছেদের দীর্ঘশ্বাস, কখনো প্রাচীন ভাঙাবাড়িতে, কখনো ব্যস্ত রাস্তায়, আবার কখনোবা আধুনিকতার সভ্যতায়, প্রতিবার পথ হারানোর ভয়ে আমি কোথাও যেয়ে এক ফোটা শান্তি পাইনা, তাই তো কল্পনায় রোজ ফিরে আসি একই পথে, চেনা ঠিকানায়, সেই স্বপ্নময় ছোট্ট গ্রাম, ঢেউয়ের দোলায়, ডিঙ্গি নৌকায়, শাপলা তোলা সবুজ দিঘি, পানের বরজ, বেত ফল অথবা জারুল, কৃষ্ণচূড়া বন।

প্রতিবার প্রতিজন্মে চোখ খুলেই যেন দেখি তোমার হাস্যজ্জল মুখ, ঠিক আগের জনমের মতো। প্রতিবার যেন হেঁটে যাই পাশাপাশি, শক্ত করে আঙুল জড়িয়ে ক্ষেতের আইল ধরে, প্রতইবার যেন ভালোবাসি আগের চেয়েও অনেক বেশি!

ইতি,
তোমার আদরের অপু

বিবিধ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বিবিধ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status