বাংলারজমিন
মানবজমিন-এর খবর প্রচারের পর শিকলে বাঁধা জীবনের অবসান
সিদ্দিক আলম দয়াল, গাইবান্ধা
২ জুলাই ২০২২, শনিবার
সাত বছর শিকলে বাঁধা মানসিক প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ আলী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরেছে। তিনি এখন মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ। স্বাভাবিকভাবে বাড়িতে কাজকর্ম করছে, সুস্থ আচরণ করছেন প্রতিবেশী আর স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে। তাকে সুস্থ করতে ও পায়ের শিকল খুলে দিয়ে জেলা প্রশাসনের খরচে জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান তার সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়িতে দিয়েছিলেন। গাইবান্ধা শহর থেকে অন্তত ৮ মাইল উত্তরের খোলাহাটি ইউনিয়নের উত্তর আনালেরতারি গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী। স্ত্রী হালিমা খাতুন, কিশোরী মেয়ে রেহানা আক্তার টুলিকে নিয়ে চারজনের সংসার। দীর্ঘদিন স্বাভাবিক জীবন কাটলেও বিয়ের পর থেকে রেহানা আক্তার টুলি মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। এক সময় তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজের বাড়ি খোলাহাটির আনালের তাড়ি গ্রামে পিতা মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে ফিরে আসে। তখন পিতা মোহাম্মদ আলী দিনমজুরের কাজ করতো। গ্রামবাসী রাজা মিয়া জানান, মোহাম্মদ আলীও হঠাৎ একদিন অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। যাকেই সামনে পেতেন লাঠি দিয়ে আঘাত করতেন। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর মোহাম্মদ আলী পুরোপুরি অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। হয়ে যায় মানসিক প্রতিবন্ধী। তার স্ত্রী হালিমা বেগমের পরামর্শে ও অবশেষে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় বাবা মোহাম্মদ আলী ও তার মেয়ে রেহানা আক্তার টুলিকে পায়ে শিকলে বেঁধে রাখা হয়। দিনরাত পিতা ও মেয়ের শিকলে বাঁধা জীবন কাটে অন্তত ৭ বছর। এলাকার সমাজকর্মী বলে পরিচিত লক্ষণ রায় জানান, তাদের এই শিকলে বাঁধা দুঃসহ জীবন থেকে কীভাবে মুক্ত করা যায়। তিনি আসেন সংবাদকর্মীর কাছে। বিষয়টি নিয়ে একই শিকলে বাঁধা বাবা ও মেয়ে’ এই সংবাদটি ছবিসহ দৈনিক মানবজমিন-এ প্রচার হয়। খবরটি নজরে আসে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক অলিউর রহমানের। তিনি ছুটে যান শিকলে বাঁধা প্রতিবন্ধীদের বাড়িতে। তারপর লোকজনের উপস্থিতিতে দু’জনের পায়ের শিকল খুলে দেন। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। দু’জন প্রতিবন্ধীর নামে দুটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেন। তারপর ২৭শে এপ্রিল তাদের চিকিৎসার সাহায্যের জন্য মোহাম্মদ আলীকে সরকারি খরচে পাঠিয়ে দেন পাবনার মানসিক হাসপাতালে। সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন রেখে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। অবশেষে মানসিক হাসপাতাল থেকে মানবিক জেলা প্রশাসক অলিউর রহমানের কাছে হাসপাতাল থেকে সুখবরটি আসে- মোহাম্মদ আলী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। সুস্থ মোহাম্মদ আলী ৩০শে জুন রাতে ফিরে আসেন তার বাড়িতে। এ ব্যাপারে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান বলেন, আমার জীবনে যতো ভালো কাজ করেছি তার মধ্যে এটি অন্যতম। শিকলে বাঁধা প্রতিবন্ধীকে শিকল মুক্ত করে সুস্থ জীবনে ফিরতে সহযোগিতা করেছি এটাই আমার জীবনে বড় আনন্দ, বড় খুশির খবর।