প্রথম পাতা
‘আমার কলিজার টুকরাকে ফিরিয়ে দিন’
স্টাফ রিপোর্টার
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার
২০২৩ সালের ২৯শে আগস্ট রাত আনুমানিক ১২টায় র্যাবের পোশাক এবং সাদা পোশাক পরিহিত ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বড় নালগ্রামের মৃত আব্দুর রবের ছেলে ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি রহমাতুল্লাহ (২০)কে তুলে নিয়ে যায়। গত ৫ মাসে র্যাব কার্যালয়, বিভিন্ন ডিবি অফিস, বিভিন্ন থানা ও হাসপাতাল ঘুরেও তার সন্ধান পায়নি পরিবার। নিখোঁজ রহমাতুল্লাহকে ফিরিয়ে দেয়ার আকুতি জানিয়েছেন তার মা মমতাজ বেগম। গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আকুতি জানান তিনি। এ সময় আমার কলিজার টুকরা রহমাতুল্লাহকে ফিরিয়ে দিন বলে কেঁদে ওঠেন মা মমতাজ। তিনি বলেন, আমি কাকে নিয়ে বেঁচে থাকবো। আমার শাস-প্রশ্বাস রহমাতুল্লাহ। নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিন আগে থেকেই প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিল। কিছু খেতে পারছিল না। আমার পাশেই ঘুমিয়ে ছিল, আমার পাশ থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো, আজও ফিরে এলো না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বলে দিন, আমি কোথায় কার কাছে গেলে সন্তানকে ফিরে পাবো। এভাবে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে যান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রহমাতুল্লহ’র বড় বোন রাজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, আমার বাবা ২০১৩ সালের ১৮ই এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন। সংসারে আমি বড় মেয়ে, আমার মেঝ ভাই ওবায়দুর বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছে। তার স্ত্রী সাথী আক্তার আমার মা মমতাজ বেগম ও আমাদের সবচেয়ে ছোটভাই রহমাতুল্লাহ একই বাড়িতে থাকে। গত ২৯শে আগস্ট দিবাগত রাতে আমাদের বাড়ি থেকে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্যরা বাড়ির মূল ফটকে কড়া নাড়ে। আমার মা ঘরের দরজা ও মূল ফটক খুলে বাইরে বের হলে তাদের কয়েকজন ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে এবং আমার ভাই রহমাতুল্লাহকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। কি কারণে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বলে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। পরের দিন আমার মা মানিকগঞ্জ ও ধামরাই যাওয়ার পর পুলিশ কোনো তথ্য দেয়নি। পরবর্তীতে ৭ই অক্টোবর ২০২৩ সালে ধামরাই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করে। গুম হওয়ার ৫ মাস পরেও আমার ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মা প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমার ভাই কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না, তার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো মামলা ছিল না। তারপরও সে যদি কোনো অন্যায় করে থাকে দেশের প্রচলিত আইনে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে পারতো, আমরা জানতে পারতাম সে কি অপরাধ করেছে। কিন্তু এখন আমরা কিছুই জানি না। তিনি বলেন, সারা দেশে আমার ভাইয়ের মতো শত শত মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। মায়ের ডাক তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমার ভাইয়ের পাশেও দাঁড়িয়েছে। আমি সবাইকে ফেরত চাই। মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলির সভাপতিত্বে এবং মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা’র পরিচালনায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রহমাতুল্লাহ’র বড় খালা সায়রা খাতুন। অন্যান্য ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঝুমুর আক্তার, বেবি আক্তার, মিনু আক্তার, ইমন ওমর, হ্যাপি আক্তার সুমনি, লামিয়া আক্তার মিম।