ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

ভারতকে পিয়াজ চিনি রপ্তানি বাড়াতে অনুরোধ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

কূটনৈতিক রিপোর্টার
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবারmzamin

রমজান মাসে দেশে পিয়াজ ও চিনির অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারতের সহায়তা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। রমজানের আগেই ৫০ হাজার টন পিয়াজ এবং ১ লাখ টন চিনি বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য দিল্লিকে অনুরোধ করেছেন তিনি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশকে ২০ হাজার টন পিয়াজ এবং ১০ হাজার টন চিনি রপ্তানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। দিল্লি ফেরত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। ৯ই ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক ভোগ্যপণ্যের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে, পিয়াজ, চিনি, ডাল এবং মসলা জাতীয় কিছু পণ্য। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। হাছান মাহমুদ বলেন, আমি তাকে (ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীকে) বলেছি, এসব ভোগ্যপণ্যে যেন বিশেষ কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। যাতে কমপক্ষে আমরা তাদের থেকে সঠিক মূল্যে এবং আমাদের প্রয়োজনে ইমপোর্ট করতে পারি। কমপক্ষে এটুকু সুবিধা যেন তাদের থেকে নিতে পারি।

সীমান্ত হত্যা বন্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার রোধের তাগিদ: এদিকে সীমান্ত হত্যা পুরোপুরি বন্ধে নন-লিথাল ওয়েপন (প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র) ব্যবহারে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। নন-লিথাল ওয়েপন ব্যবহার অপারেশনাল করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছি (ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে)। সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সীমান্তে যাতে নন লিথাল অস্ত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলো নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তিনি (জয়শঙ্কর) আমার সঙ্গে একমত যদি নন-লিথাল ব্যবহার হয় তাহলে সীমান্তহত্যা বন্ধ করা সম্ভব হবে। সেটি কীভাবে অপারেশনাল করা যায় এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। কিছু বিষয়ে আমাদের ঐকমত্য হয়েছে।

তিস্তা ও গঙ্গা চুক্তি: আগামী মাসে ভারতের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ভারতের নির্বাচনের পর দীর্ঘদিন আটকে থাকা তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তিসহ গঙ্গা চুক্তি নবায়ন নিয়ে ঢাকা ও দিল্লি কাজ করতে সম্মত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিস্তা চুক্তি এবং গঙ্গা চুক্তি নবায়ন নিয়ে আলোচনা করেছি। তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো সমস্যা নেই। আপত্তিটা রাজ্যের। ভারতের নির্বাচন আগামী মাসে। তার (ভারতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী) সঙ্গে যেটা আলোচনা হয়েছ, নির্বাচনের পর এ বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাবো এবং একইভাবে গঙ্গার পানি বণ্টনের নবায়নের বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে আলোচনা করেছি। গঙ্গা চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থান জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ জানান, এটা নিয়ে তাদের দ্বিমত নেই। তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর (জয়শঙ্কর) সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করেছি। নয়া দিল্লি সফরকালে ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সেই সাক্ষাতে তাকে মৌখিকভাবে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং তিনিও সফরের বিষয়ে সম্মতি জানান। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানো। 

মিয়ানমার ইস্যু: দিল্লি সফরে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন হাছান মাহমুদ। মিয়ানমার ইস্যুতে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে আমাদের গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটা আমাদের সবার কমন সমস্যা। এ থেকে উত্তরণে আমরা একযোগে কাজ করবো কীভাবে, সেটা নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করেছি। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারতের সহায়তা চেয়েছি। মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত কীভাবে কাজ করবে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, দুই দেশ তাদের (মিয়ানমারের) সঙ্গে সীমান্ত শেয়ার করি। সুতরাং, মিয়ানমারে কোনো পরিস্থিতি হলে সেটা আমাদের যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং উদ্বিগ্ন করে তাদেরও (ভারতকে) করে। প্রতিবেশীকে নিয়ে দু’জনের উদ্বেগ। সুতরাং আমাদের অনেকগুলো বিষয় আছে, একসঙ্গে কাজ করার মতো। বিশেষ করে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সবসময় ভারতের সহায়তা চেয়েছি, এবারও চেয়েছি। আমরা আঞ্চলিক উপ-আঞ্চলিক ফোরামে একযোগে কাজ করি। সেটাতে কীভাবে সহযোগিতা বাড়ানো যায়, আলোচনা করেছি।

ভিসা ইস্যু: ভারতের ভিসা পেতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের বিড়ম্বনার বিষয়টি দিল্লি সফরে তুলেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানো নিয়ে আলোচনা করেছি। ভিসা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি। ভিসা দেয়ার পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, আমরা বলেছি ভিসার বিষয়টি তারা যাতে আরও সহজ করেন। দিল্লি সফরে উষ্ণ অভ্যর্থনায় মন্ত্রী আপ্লুত বলেও সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।

মিয়ানমারের সেনা-বিজিপি সদস্যদের ফেরত এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ: ওদিকে চলমান সংঘাতের কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ (বিজিপি) বিভিন্ন সংস্থা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ফেরত বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মিয়ানমার তাদের নিয়ে যাবে। আমি দিনক্ষণ বলতে চাই না। কারণ এটা গোপনীয়। এটাতে নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত আছে। মিয়ানমার নৌ-বাহিনীর জাহাজ বাংলাদেশে নোঙ্গর করা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, কখন কোন জাহাজ ভিড়বে সেটা আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বলতে পারি না। এটা টেকনিক্যাল পার্ট বা এটা বলার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করি না। মিয়ানমার পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, দেখুন, আমরা এ ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। আমরা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছি। তাদের অভ্যন্তরীয় বিষয়ে এখানে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হোক- সেটা আমরা চাই না। আমাদের এখানে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই সেটাও বলার সুযোগ নাই। আমাদের এখানে মর্টার শেল এসে পড়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আর সেটার কড়া প্রতিবাদ আমরা জানিয়েছি। চলমান সংঘাতের জেরে আশ্রিত সেনা ও বিজিপি সদস্যের কেউ রোহিঙ্গা নিধনে জড়িত কিনা? তা তদন্তের যে দাবি উঠছে সে বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে, তাদের নাগকিদের ফেরত পাঠানো। রাখাইনের সিথুয়ে থেকে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ মিশন সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের মিশনে যারা কর্মরত আছে তাদের আপাতত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

পাঠকের মতামত

আমরা আজ পরাধীন দেশে পরিণত হয়েছি

Maksud
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ১০:২৯ অপরাহ্ন

ভারতীয় পণ্য মানুষকে কিনতে বাধ্য করার জন্যই দেশে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্ট করছে স্বৈরশাসক। দেশীয় পণ্য বেশি দামে কিনে অথবা কম কিনে হলেও বারোটা হতে আসা পণ্য বয়কট করতে হবে।

golamgopal
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status