ঢাকা, ১৮ মে ২০২৪, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

তারা এখন পাঙাশের কাঁটা কিনছেন

নাইম হাসান
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবার
mzamin

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। এমন পরিস্থিতিতে খরচের হিসাব মেলানো কঠিন হয়ে পড়েছে ভোক্তাদের। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের কষ্টের সীমা নেই। আমিষের চাহিদা মেটাতে অনেকে বাজার থেকে মাথা-লেজসহ পাঙাশের কাঁটা কিনছেন। যা দিয়ে শাক-সবজি রান্না করে কোনো রকম দিন পার করছেন তারা। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। গত রোববার যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নাজমা আক্তার নামে এক মাঝ বয়সী নারী পাঙাশের কাটা কিনছেন। 

জানতে চাইলে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, পাঙাশের কাঁটা কিনলাম। তিনটা মাছের কাঁটা ৫০ টাকা। একটার জন্য ২০ টাকা করে রাখে।

বিজ্ঞাপন
তিনটা কিনায় ৫০ টাকা রেখেছে। নাজমা বলেন, বাজান আমাদের মতো মানুষের তো ক্ষমতা নাই এত দামে মাছ কিনে খাওয়ার। আগে পাঙাশ মাছ ছেলে-মেয়েকে খাওয়াইছি ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে। এখন পাঙাশ মাছই আড়াইশ’ টাকা ছাড়িয়েছে। আমার পক্ষে এত দাম দিয়ে মাছ নেয়া সম্ভব না। তাই এখান থেকে মাছের কাঁটা কিংবা ৫/৬ টা করে মাথা নেই। বাজারে দেখা যায়, কিছু দোকানি পাঙাশ মাছের কাঁটা বিক্রি করছেন। প্রতিটি মাছের মাথা থেকে কাঁটাসহ লেজ পর্যন্ত ছোটো এই টুকরোগুলোর দাম ২০ টাকা। এই বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন রেস্টুরেন্ট থেকে বিভিন্ন মাছের অর্ডার আসে। মাছের স্যুপ তৈরিতে তারা সলিড মাছ কেনেন। কাঁটাবিহীন পাঙাশ বিক্রি হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। এসব মাছের বেচে যাওয়া কাঁটাগুলো চলে আসে এই বাজারে। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় এই কাঁটা বিক্রি। আধা ঘণ্টার মধ্যেই বেচাকেনা শেষ হয়। এই বাজার বাদেও কাপ্তান বাজার, ঠাটারি বাজারেও এভাবে পাঙাশের কাঁটা বিক্রি হয়। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এভাবে মাছের কাঁটা খেয়ে কোনো ভাবে জীবনধারণ করছে তারা। ২-৩ দিন পর পর দয়াগঞ্জ থেকে মাছের কাঁটা কিনতে আসেন উল্লেখ করে নাজমা বেগম বলেন, আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করি। ৪টা মেয়ে আছে। বড় মেয়েটা প্রতিবন্ধী। আমার স্বামী কিডনির রোগী। 

মাছ বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, এখানে সব ঠিকা (পিস) বিক্রি করি, কেজি না। পাঙাশ মাছ ২০ টাকা পিস। মাছের এই কাঁটার জোগান কোন জায়গা থেকে আসে- জানতে চাইলে একটি আড়ত দেখিয়ে তিনি বলেন, সাপ্লাইয়ের দোকান আছে। আমি ১৫ টাকা করে কিনি, ২০ টাকা করে বিক্রি করি। আজ আমরা ৩০০ কেজি পাঙাশ কাটছি। এখান থেকে ১৩০ পিস মাথাসহ কাঁটা বের হয়েছে। এ সময়ে দোকানে একজন ভদ্রমহিলা এলেন। গজার মাছের কাঁটার দাম জিজ্ঞেস করলেন তিনি। বিক্রেতা বলেন, একদাম দেড়শ’ টাকা। দরদাম করে ১০০ টাকায় এই গোজার মাছের কাঁটা বিক্রি করা হয়। রাশিদা আক্তার নামের ওই নারীকে জিজ্ঞেস করা হয়- কীভাবে খাবেন এই মাছ? বলেন, ‘শাক দিয়ে রান্না কইরা খামু।’ এর আগে কখনো তিনি এই মাছের কাঁটা কেনেননি বলে জানান তিনি। 

মাছের কাঁটা কিনতে এসে ফিরে যাচ্ছিলেন রানা। তিনি বলেন, অনেকে শাক দিয়ে খাওয়ার জন্য মাছের এই কাঁটা নেয়। দেশের যে অবস্থা, এরমধ্যে ছোট মাপের পাঙাশ মাছ কিনতে গেলেও ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা লাগে। মানুষ এখানে ২০ টাকা করে পাচ্ছে। শাক দিয়ে যদি খায়, এটাও বহুত ভালো। যে হারে দাম বাড়ছে, এগুলো খাওয়াই অনেক কিছু।

বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য মতে, মানভেদে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে, পাঙাশের কেজি ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, শিং মাছের কেজি ৫০০ টাকা, ছোট সাইজের শৈল মাছের দর ৫০০ টাকা, মাঝারি সাইজের শৈল ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সরপুঁটি প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়ায় মাছের কাঁটা খেতে বাধ্য হচ্ছে উল্লেখ করে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, মাছ-মাংসের দাম অনেক বেড়ে গেছে। মানুষ কেনার সামর্থ্য হারিয়েছে। যারা মাছ কিনতে পারছে না তারা এভাবে কাঁটা খেয়ে মাছের স্বাদ নিচ্ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারও তো আর আয় বাড়েনি। এভাবে মাছের কাঁটা খেয়ে তারা কোনো ভাবে জীবনধারণ করছে। আগে পাঙাশ-তেলাপিয়া মানুষ খেতো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা মাছ উৎপাদনে চতুর্থ। এর সঙ্গে মিল পাওয়া যায় না। এখন প্রচুর পরিমাণে দেশে মাছ আমদানি হচ্ছে।

পাঠকের মতামত

HUM

MOMIN
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবার, ১২:৩০ পূর্বাহ্ন

যারা একসময় বড় বড় মাছ কিনতো, তাদেরই তো অবস্থা খারাপ। কিছুই কিনতে না। গরীব মানুষ আর কি করবে।

Mozammel
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:২৯ অপরাহ্ন

হায়রে আমার সোনার বাংলাদেশ! আমাদের এই করুন পরিনতি কিসের প্রায়শ্চিত্ত?

সারোয়ার
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:৫২ অপরাহ্ন

মাছের কাঁটায় ও উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে।

আব্দুল হালিম
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ৯:২২ অপরাহ্ন

আয় বেড়েছে। কেনার ক্ষমতা আছেতো এখন!

অনিন্দ্য শাকিল
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ৯:০০ অপরাহ্ন

৭৪ এর প্রতিধ্বনি

sumon
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ৮:৫৮ অপরাহ্ন

লে ঠেলা লে জনগণ !

খ ম আনছার
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ৬:০৯ অপরাহ্ন

মেগা প্রজেক্টের মেগা উন্নয়ন সাথে ভোট ডাকাতি।

sanzida
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ১:৪৫ অপরাহ্ন

কেউ কাটা বিহীন মাছ খাচ্ছে বলেই কাটা'টা আমরা কিনতে পারছি,ওঁরা যদি কাটা সহ মাছটা কিনে নিতো তাহলে আমাদের কাটা টুকু জুটতো কি? জিডিপির গ্রোথ দেখিয়ে যারা বাগাড়ম্বর করে তাদেরকে পাঙাশের কাটা ভেংচি দিচ্ছে।

ইতরস্য ইতর
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:৩৪ অপরাহ্ন

মিথ্যা রটনা বাদ দিন। একমাত্র আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের জন্য সবাই ভালো আছি। ওনারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিজেরটা বাদ দিয়ে কিভাবে দেশের ***

Muhammad Rakibul Has
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status