ঢাকা, ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

বড় দুই বাজারে পোশাক রপ্তানি কমায় দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

এমএম মাসুদ
২৯ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবার
mzamin

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজারগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ কমেছে। এরমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো নিয়ে বৃহত্তম বড় বাজার। আর একক বড় বাজার হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। উভয় বাজারে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বিজিএমইএ’র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারে আগের বছরের চেয়ে পোশাকের রপ্তানি কমে গেছে। 

উদ্যোক্তারা জানান, দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। এরমধ্যে ৫০ শতাংশই পোশাক রপ্তানি হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। আর একক রাষ্ট্র হিসেবে রপ্তানি আয়ের ২০ থেকে ২২ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তবে রপ্তানি আয়ের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউতে রপ্তানি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বাজারে রপ্তানি কমে আসার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে উদ্যোক্তাদের।

বিজ্ঞাপন
এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে রপ্তানি খাতে বিপদ আসতে পারে বলে মনে করেন তারা। 

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) পরিসংখ্যান এবং ইইউ’র পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাট প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ কমে গেছে। অন্যদিকে ২০২৩ সালের প্রথম ১১ মাসে ইইউ’র দেশগুলোয় বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। 
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন এবং শ্রম অধিকার রক্ষার ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা আগামী দিনে রপ্তানিতে প্রভাব ফেলবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কিত রপ্তানিকারকরা।

বিজিএমইএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরোপের বাজারে ২০২৩ সালে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। ২০২৪ সালেও ইতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি কোথায় যায়, সেটি এখন দেখতে হবে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নমুখী। 

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা এবং অনিশ্চয়তার বিষয়গুলো কয়েক মাস ধরেই আলোচনায়। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার কথা উল্লেখ করে গত বছরের মে মাসে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর নভেম্বরে বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার রক্ষায় নতুন নীতি-কাঠামো ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে এটি। ওই ঘোষণায় বলা হয়, বিশ্বজুড়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, শ্রমিক অধিকারের পক্ষের কর্মী, শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যে বা যারা হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করবে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনবে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য, ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যত ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে, তা প্রয়োগ করা হবে। এসব কারণেই কি তৈরি পোশাক রপ্তানি কমছে, প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের?

তবে রপ্তানি কমে আসার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রমনীতির কোনো সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএ। সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে আসা অবশ্যই উদ্বেগের। তবে এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চাহিদা কমে এসেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা নীতির মধ্যে নীতি সুদহার বাড়িয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর প্রভাবে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে। একই কারণে অন্যান্য দেশের রপ্তানিও কমেছে বলে জানান তিনি।

এদিকে সম্প্রতি ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কর্মকর্তারা বলেছেন, মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশকে ডিউ ডিলিজেন্স বা নিয়মকানুন যথাযথভাবে পালন করতে হবে। নিয়ম না মানলে নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের জন্য ব্র্যান্ডগুলোকে বাধ্য করা হবে। 

অটেক্সার পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৬৭৯ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯০৪ কোটি ডলার। 

রপ্তানিকারকরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ইইউতে পোশাকের চাহিদা কমেছে। যার কারণে গত এক বছরে আমদানি কমিয়েছে অঞ্চলটির দেশগুলো। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশসহ প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর ওপর। তবে চলতি বছর পোশাক খাতের রপ্তানি নিয়ে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা। আগামী মাসগুলোয় বাংলাদেশ থেকে ইইউ’র পোশাক আমদানি ফের ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘যেখানে যত বেশি মার্কেট শেয়ার থাকবে, সেখানকার মার্কেটে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে সে প্রভাব বড় শেয়ারধারীর ওপর তত বেশি পড়বে। ইইউ’র পোশাক আমদানির বড় দুই অংশীদার বাংলাদেশ ও চীন। সেজন্যই মূলত বাংলাদেশ ও চীন থেকে আমদানির হার এবং পরিমাণও অনেক কমেছে।’

পাঠকের মতামত

ভারত-চীন-রাশিয়া আছে তারা কিনবে?

shahidul islam
২৮ জানুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ৮:৪৮ অপরাহ্ন

হাসি

afnatbarn
২৮ জানুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ৭:২৮ অপরাহ্ন

ভারত-চীন-রাশিয়া আছে না? তারা কিনবে? নাকি শুধু আমাদের থেকে লুট করবে?

আজাদ আবদুল্লাহ নাসিম
২৮ জানুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ৭:২৫ অপরাহ্ন

উদ্যোগতারা আপনারা ঘুম থেকে উঠুন, গণতন্ত্রের কথা বলুন।

মো: আজিজুল হক
২৮ জানুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ৭:২৫ অপরাহ্ন

কোন সমস্যা নাই। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে দাঁড়ান এবং রাজনীতি ব্যবসা শুরু করুন তাহলে পোশাক ব্যবসা করা লাগবে না। রাজনীতি ব্যবসা করলে আপনি টাকা রাখার জায়গা পাবেন না।

Md.Ashadujjaman
২৮ জানুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ৬:০৯ অপরাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status