দেশ বিদেশ
নিষেধাজ্ঞার কারণ দেখছি না: কাদের
স্টাফ রিপোর্টার
১০ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশি-বিদেশি চাপ থাকলেও উদ্বিগ্ন নয় আওয়ামী লীগ। যারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন, তারা তো ১৫ই আগস্ট ও ২১শে আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং জোট সরকারের নিপীড়নের কথা বলেন না। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মতো যৌক্তিক কারণ দেখছি না।
গতকাল ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। নির্বাচনকে ঘিরে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব নিয়ে আমরা বিচলিত নই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচনের পরেও বিভিন্ন রকমের চাপ আসতে পারে। বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির অশুভ পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে। এসব মোকাবিলা করার মতো মানসিক শক্তি, রাজনৈতিক শক্তি, দৃঢ়তা আমাদের আছে। আওয়ামী লীগ বারে বারে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই আজকের আওয়ামী লীগ। এই আওয়ামী লীগের পথ-পরিক্রমা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই বারে বারে আমরা গণতন্ত্রের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়েছি। এখনো গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার যে লড়াই, সেই লড়াইয়ে যত বাধাই আসুক, যত ষড়যন্ত্রই হোক, আমরা এই নির্বাচন অবশ্যই সফল করা এবং এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করার যে লড়াই তাতে আমরা অবিচল। আমরা পাহাড়ের মতো অনড়। ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের যৌক্তিক কারণ দেখছি না। যারা নির্বাচনের বিরুদ্ধে নাশকতা করছে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৯ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে মানবাধিকার কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে। আওয়ামী লীগ মানুষের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জন্মলগ্ন থেকেই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা ভাসানী থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই অব্যাহত রেখেছেন। আওয়ামী লীগ জনগণের সবধরনের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ১৩ দেশের ৩৭ ব্যক্তির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ৭৫তম বার্ষিকীর প্রাক্কালে গতকাল (শুক্রবার) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়। যে অপশক্তি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে বা করার অপচেষ্টা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য অনুযায়ী এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে তারা নিষেধাজ্ঞা দেয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন গণতান্ত্রিক শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো ও এ পথকে মসৃণ করার লক্ষ্যে আমরা বিরামহীন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আমাদের নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। সুতরাং নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিক কোনো কারণ আমরা দেখছি না। বরং নির্বাচনকে যারা বাধাগ্রস্ত করবার জন্য সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে, জ্বালাও-পোড়াও, গুপ্ত হামলা করছে এদের ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। সেতুমন্ত্রী বলেন, এদেশে মানবাধিকারের ইতিহাস বড়ই ট্র্যাজিক। শুরু করি যদি ১৫ই আগস্ট এ সপরিবারে অবলা নারী, অবুঝ শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীকে বর্বরোচিত যে হত্যাকাণ্ড, এ ব্যাপারে মানবাধিকার নিয়ে যারা কথা বলে তাদের অনেককেই দেখেছি নীরব। তাদের অনেকেই স্বৈরশাসকদের তাঁবেদারি করেছে। এরা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে।
বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের অংশীদার বিএনপি
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের অংশীদার বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় কী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এখানে যারা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, আমাদের অর্থ বিভাগ নেত্রী প্রায় প্রতিদিনই এদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন। ভবিষ্যতে সংকট যাতে না হয়, সংকট এড়ানো যায়, সে ব্যাপারে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায় এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সক্রিয় এবং সচেষ্ট। বিএনপি নিজেরাই অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে, তারা কীভাবে দুর্ভিক্ষ আনবে গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা ষড়যন্ত্রের অংশীদার। এই ষড়যন্ত্রে অনেকেই আছে। দেশে আছে, বিদেশেও আছে। গণআন্দোলন করতে বিপুল জনগোষ্ঠী লাগে কিন্তু ষড়যন্ত্র করতে, গুপ্ত হত্যা করতে, নাশকতা করতে বেশি লোক লাগে না। আর লোক না থাকলে রাস্তার টোকাই ভাড়া করে বাসে আগুন লাগায়। আপনারা বলছেন, বিচলিত নন, কোনো চাপ অনুভব করছেন না। একইসঙ্গে জাতিসংঘের কাছে চিঠি পাঠানোর বিষয় সম্পর্কে বলবেন- গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, যেহেতু জাতিসংঘ থেকে কিছু কথা বলা হচ্ছে। জাতিসংঘ বিশ্বের সকল দেশের। আমরা জাতিসংঘের সদস্য। কাজেই অভিযোগের বিষয়টা রাজনৈতিক ব্যাপার জাতিসংঘের কাছে যায়। কিছু কিছু চাপের ব্যাপার নিশ্চয়ই আছে। তা না হলে এতকিছু হলো কেন! বাংলাদেশে গত কয়েক মাস কতো রকমের ঘটনা ঘটে গেল। এই নিষেধাজ্ঞা আসে, এই ভিসা নীতি আসে! এসব তো ছিল। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘকে জানিয়ে রাখলেন যে, আমরা ভালো নির্বাচন করছি। কোনো অসুবিধা নেই, অহেতুক যেন কেউ আমাদের চাপ না দেয়। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, অংশ নেয়নি। নির্বাচনের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন এ যাবত ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ আন্দোলন করে তারা ক্ষান্ত হয়নি, তারা এখন নাশকতার পরিকল্পনা করছে, বাস পোড়াচ্ছে, গুপ্ত হামলা চালাচ্ছে, গুপ্ত হত্যা করছে, ট্রেনে আগুন দিচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০টি পরিবহনে তারা আগুন দিয়েছে। লাইনের ওপর দাঁড়ানো ট্রেনে পর্যন্ত তারা আগুন দিয়েছে। মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপি সারা দেশে কর্মসূচির নামে নাশকতা করার পরিকল্পনা নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এ ব্যাপারে যারা নির্বাচনের পক্ষের শক্তি, তাদের অনুরোধ করছি, আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে এবং জনগণের মধ্যে যারা আজ নির্বাচনের পক্ষের শক্তি, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে এদের এই নাশকতা, গুপ্ত হত্যা, অগ্নি সন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে সতর্ক-সজাগ থাকবেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনোয়ার হোসেন, মেরিনা জাহান কবিতা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত
১৯৯৬ সালে আপনারা যখন বিরোধী দলে ছিলেন তখন তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী যৌক্তিক ছিল এবং আপনারা এই তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষঠায় ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন।এখন ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে তত্বাবধায়ক সরকারকে মৃত ঘোষনা করা তো জনগনের সাথে বেইমানী করা।অতএব,গলাবাজি করে লাভ নাই । মনে রাখবনে, বাংলাদশেরে জনগন সব বুজে ।