দেশ বিদেশ
গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিকদের মুক্তির দাবিতে ৩৭ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি
স্টাফ রিপোর্টার
১০ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবারগার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনসহ গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতৃবৃন্দ এবং শতাধিক শ্রমিকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ৩৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক। শনিবার সন্ধ্যায় এক যৌথ বিবৃতিতে এই দাবি জানান তারা। বিবৃতিদাতারা বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের অন্যতম নেতা বাবুল হোসেনসহ গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতৃবৃন্দ এবং শতাধিক শ্রমিকের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি মজুরি আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে ৩ জন এবং আগুনে পুড়ে ১ জনসহ মোট ৪ জন নিহতসহ এযাবৎকালে মজুরি আন্দোলনে সকল হত্যার ঘটনার তদন্ত এবং নিহতদের জন্য ন্যায় বিচার এবং এক জীবনের সমান ক্ষতিপূরণেরও দাবি জানান তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘ আন্দোলন- সংগ্রামে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবি উঠলেও মজুরি বোর্ড প্রথমে ১০ হাজার ৪০০ এবং সর্বশেষ ৭ই নভেম্বর মজুরি ১২,৫০০ টাকা চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়। যেটি শ্রমিকদের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে না। একই সঙ্গে এই বাজারে এই মজুরিতে চলা দুরূহ। এ অবস্থায় শ্রমিকরা টিকে থাকা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে মজুরি পুনর্বিবেচনা করে ২৫ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন করে। অথচ তাদের গণতান্ত্রিক দাবি বিবেচনায় না এনে উল্টো তাদের উপর যে হত্যা-নির্যাতন, ১৩ (১) ধারা প্রয়োগে কারখানা বন্ধ রাখা ও শ্রমিকের বেতন না দেয়া, ছাঁটাইসহ দমন-পীড়ন নেমে আসে, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।
বিবৃতিদানকারীরা আরও বলেন, প্রায় ১৫০ বছর পুরনো বৃটিশ আমলে তৈরি আইন ১৮৬০ দণ্ডবিধির ১৪৩, ১৪৭, ১৪৯, ৩০৭, ৩২৫, ৪২৭, ৪৩৬ মোট ৭টি ধারায় ৩০শে অক্টোবর গাজীপুরের ভোগড়ায় শ্রমিক আন্দোলনে ১১০০/১২০০ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে গাড়ি পোড়ানোর মিথ্যা মামলায় বাবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই ধারাগুলো মূলত শ্রমিক হয়রানির অস্ত্র হিসেবে বতর্মানে ব্যবহৃত হচ্ছে। আগুন দিয়ে গাড়ি পোড়ানোর সঙ্গে হত্যার চেষ্টা, দাঙ্গা ও বেআইনি সমাবেশের সদস্য হওয়ার কথাও উল্লেখ আছে। মামলায় উল্লিখিত অপরাধে বাবুলের যুক্ততা ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তারা মত দেন।
বিবৃতিদানকারীরা হলেন- শিক্ষক, লেখক ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকার সংগঠক ও শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহ্বায়ক হামিদা হোসেন, সমাজ সংগঠক খুশী কবির, লেখক ও নৃ-বিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও কিউরেটর তানজিম ওয়াহাব, নারীপক্ষের সদস্য মাহীন সুলতান, নারী আন্দোলন সংগঠক ফরীদা আখতার, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. হারুনুর রশীদ, শিক্ষক লায়লা পারভীন, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দীনা সিদ্দিকী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেউতি সাবুর, যুক্তরাষ্ট্রের উস্টার স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টারডিসিপ্লিনারি স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক নাফিসা নিপুণ তানজীম, মানবাধিকারকর্মী রোজিনা বেগম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মির্জা তাসলিমা সুলতানা, ড. সাঈদ ফেরদৌস, মানস চৌধুরী, সাংস্কৃতিককর্মী অমল আকাশ, বিথী ঘোষ, শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান।
এছাড়া নাট্যশিল্পী বন্যা মির্জা, নৃ-বিজ্ঞানী ও গবেষক ড. নাসরিন খন্দকার, নৃ-বিজ্ঞানী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. নাসরিন সিরাজ, লেখক ও গবেষক সায়েমা খাতুন, যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. সাদাফ নূর, কানাডার ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক হানা শামস আহমেদ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিট্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মাইদুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামলী শীল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অপরাজিতা দেব, পারফর্মিং আর্টিস্ট ঋতু সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী সাদিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহা মির্জা, আলোকচিত্রী খন্দকার তানভীর মুরাদ তপু, জান্নাতুল মাওয়া এবং তাসলিমা আখতার।