দেশ বিদেশ
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের ছড়াছড়ি, আটক ৮৩
স্টাফ রিপোর্টার
৯ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবারসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে অন্তত ৮৩ জনকে আটক করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের কাছে থাকা ডিজিটাল ডিভাইস আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত হওয়া এই পরীক্ষায় ৩ বিভাগের ১৮টি জেলায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ জন। মোট ৫৩৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে জানান, রংপুরে ১৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। নগরীর বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র ও এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে বেশকিছু মোবাইল ফোন ও ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) কার্যালয় প্রাঙ্গণে পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বিটু এক্স ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীর প্রশ্নপত্রের উত্তর প্রদানের চুক্তি করে প্রতারক চক্র। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে এবং গতকাল সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ও পরীক্ষা কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১৯ জনকে আটক করে। এর মধ্যে রংপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজসহ ৩টি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, ডিভাইস জালিয়াতির সিন্ডিকেটের সদস্যসহ ১১ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। তাদের কাছ থেকে ১১টি ডিজিটাল ডিভাইস, ৮০টি ফোন ও প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আটককৃত পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর আগেই পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে ডিভাইসসহ আটক করা হয়। পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, অসাধু চক্রটি ডিজিটাল ডিভাইসের অপব্যবহার করে জালিয়াতির চেষ্টা করেছে। পুলিশ পরীক্ষার আগের রাতে, সকালে ও পরীক্ষা শুরুর আগেই কেন্দ্র থেকে তাদের আটক করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত ডিআইজি কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান, উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুজাহিদুল ইসলামসহ পুলিশের কর্মকর্তারা।
স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রিক ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতি করে পরীক্ষা দেয়ায় কুড়িগ্রামে ১১ জনকে আটক এবং বহিষ্কার করা হয়েছে ৪ জন পরীক্ষার্থীকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ৪৫টি কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২৬ হাজার ৮০৫ জন। এরমধ্যে গতকাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ২০ হাজার ৭১ জন। পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকেন ৬ হাজার ৭৩৪ জন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন বলেন, আটক পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্টাফ রিপোর্টার, ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, জালিয়াতির অভিযোগে ঠাকুরগাঁওয়ে ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে বেশকিছু মোবাইল ফোন ও ডিভাইসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। গতকাল সকালে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র ও এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে পরীক্ষায় ৭ জন জালিয়াতি করে। তাদের বিভিন্ন আইনে মামলা দেয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৪ জন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে এবং বাকি ৩ জন ওয়ে মার্কশিট পূর্ণ করে বাসা থেকে নিয়ে আসে। আটককৃতরা হলেন, রানীশংকৈল উপজেলার আলশিয়া গ্রামের মো. হুমায়নের ছেলে মো. সেহানুর, রানীশংকৈল উপজেলার বাজেবকশা গ্রামের টঙ্কনাথ বর্মণের ছেলে পঞ্চানন চন্দ্র, পীরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের শমেরুলের স্ত্রী মোছা. আর্জিনা, পীরগঞ্জ উপজেলার টাটুয়াপাড়া গ্রামের আলিম উদ্দিনের ছেলে ওমর ফারুক, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী গ্রামের আনিসুর রহমানের স্ত্রী হাসনাহেনা, রুহিয়া থানার মধুপুর গ্রামের আজহারুল ইসলামের স্ত্রী রোজিনা খাতুন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আলেকসিথি গ্রামের হাসান আলীর ছেলে আনোয়ার খালেক।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের অভিযোগে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল নীলফামারী সদরে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে তাদের আটক করা হয়।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, পরীক্ষা কেন্দ্রে ইলেকক্ট্রেনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশ নেয়ায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন লালমনিরহাট সরকারি মজিদা কলেজ এর পরীক্ষা কেন্দ্রে হাতিবান্ধার পশ্চিম বেজ গ্রাম আবু বক্কর সিদ্দিকের পুত্র আশিক সিদ্দিকী (২৫), লালমনিরহাট সদর উপজেলার আদর্শ পাড়ার তরুণী কান্ত বর্ম্মনের কন্যা তুলী রানী রায় (২৯), লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা ভেলাগুড়ি জাওরানী গ্রামের কমমেশ্বর চন্দ্রের পুত্র পুরুঞ্জন (৩০), আদিতমারী সরলখা সাচিত্র নাথ রায়ের কন্যা তৃপ্তি রানী (২৬), ফাকল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে একজন জন, সে হলেন জেলার কালীগঞ্জ বৈরাতি তুষভাণ্ডারের রইজ উদ্দিনের কন্যা রাফিয়া সুলতানা (৩১), নেছারিয়া আলিম মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে জেলার হাতিবান্ধা পূর্ব সারডুবির মো. সামিউলের পুত্র মো. রবিউল ইসলাম (৩১), বর্ডার গার্ড পরীক্ষা কেন্দ্রে হাতিবান্ধা ভেলাগুড়ি জাওরানীর নুর জামান এর কন্যা মোছা. নাজমুননাহার (৩০), সরকারি কলেজ এ কেন্দ্র জেলার আদিতমারী গোবর্ধন কাজী মামুনুর রশিদের কন্যা মাহবুবা রায়হানা (২৬), সরকারি কলেজ পরীক্ষা ও কেন্দ্রের হাতিবান্ধার জাওরানী ক্যাম্পের পাশে দুলাল মিয়ার কন্যা লাভলী খাতুন (৩০), সরকারি কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে পাটগ্রামের রাহিন পাড়ার আজিজার রহমানের কন্যা আফরিন আক্তার (৩১), জেলার আদিতমারী নামুড়ির বাবুল হোসেনের কন্যা সোহাগী (৩১)। হাতিবান্ধার পার শেক সুন্দর গ্রামের দুলাল হোসেনের কন্যা সাহেরা খাতুন (৩১), জেলার কালীগঞ্জের রুদ্রেশ্বর গ্রামের দুলাল হোসেনের কন্যা খদিজা খাতুন। ১৩ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা দিচ্ছিল। পরীক্ষা কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডিভাইস শণাক্তে যন্ত্র নিয়ে কেন্দ্রে গেলেই তাদের আটক করা হয়। লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওমর ফারুক জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে সার্ভার আইনে মামলা দায়ের করা হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানায়, লালমনিরহাট জেলায় পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৬৩২৪ জন। উপস্থিত ছিলেন ১২৪২৭ জন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, কয়েকটি কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালীন সময় ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে নকল করছিল তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও মোবাইলের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে পরীক্ষা দেয়ার সময় ৩৫ জন পরীক্ষার্থীকে আটক করেছে র্যাব। গতকাল সকাল ১০টায় গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়ার সময় তাদের আটক করা হয়। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-১৩ গাইবান্ধার ক্যাম্প কমান্ডার এএসপি মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও মোবাইল ব্যবহার করে পরীক্ষা দেয়ার সময় ৩৫ জন পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। পরে তাদের কাছ থেকে ২২টি মাস্টার কার্ড, ১৯টি ব্লুটুথ ও ১৬টি মোবাইল এবং ব্যাংক চেক উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞেসাবাদে পরিক্ষার্থীরা জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত জালিয়াতি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।
পাঠকের মতামত
কারিকুলাম পাল্টে, গণহারে জিপিএ ফাইভ দিয়ে, স্কুলে শাসন বন্ধ করে, দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ করেও এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস নিশ্চিত করা যাচ্ছে না - এবার তাই স্কুলের শিক্ষক নিয়োগে অযোগ্যদের ঢোকানোর পাঁয়তারা। বই খুলে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল কোন সালে - মনে আছে?
সবগুলো তো আর ধরা পড়ে নি। পরীক্ষা বাতিল করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। ধৃতদের কঠিন শাস্তি দিতে হবে। যাতে পরে কেউ এমন করতে ভয় পায়।