প্রথম পাতা
ঘুষের টাকা ফেরত দাবি
বাসায় ডেকে পেটানোর অভিযোগ প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে
স্টাফ রিপোর্টার
৮ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার
চাকরির জন্য দেয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়াকে কেন্দ্র করে ৩ জনকে বাসায় ডেকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে প্রতিমন্ত্রীকে ৯৪ লাখ টাকা দিয়েছিলেন তারা। চাকরি না হওয়ায় টাকা চাইলেও ফেরত দেননি প্রতিমন্ত্রী। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর
কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছিলেন তারা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিমন্ত্রী টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে ডেকে নিয়ে মারধর করেন তাদের। ওই বাসা থেকে প্রাণে বাঁচতে পাশের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে দেয়াল টপকে প্রবেশ করায় তাদের একজনকে আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা এমন অভিযোগ করলেও প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উল্টো অভিযোগ করা হয়েছে থানায়। রমনা মডেল থানায় দায়ের করা অভিযোগে প্রতিমন্ত্রীর বাসভবনের অফিস সহায়ক মো. মমিন চাঁদা দাবি ও নিরাপত্তাকর্মীর অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগ করেছেন ৪ জনের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী ৩ জনের মধ্যে আছেন আবু সুফিয়ান বিশ্বাস, জাহিদ হাসান ও নাসির হাওলাদার। আবু সুফিয়ান ডিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করায় তাকে আটক করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দায়ের করা অভিযোগে আবু সুফিয়ান আটক আছেন উল্লেখ করা হয়।
ভুক্তভোগী জাহিদ হাসান মানবজমিনকে বলেন, মন্ত্রী নিজে আমাদের লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন। একপর্যায়ে আমরা পালিয়ে আসলেও সুফিয়ান আত্মরক্ষার্থে ডিবি কার্যালয়ের দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। মন্ত্রীর পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্য দাবি করেন তিনি।
জাহিদ হাসান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য সুপারিশ করতে যান ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ’-এর আবু সুফিয়ান বিশ্বাসসহ কয়েকজন। আবু সুফিয়ান সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও খুলনা জেলার সভাপতি। ২০২২ সালের ৮ই জুন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বাসায় যান তারা। ওই সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ৪৮ জনকে নিয়োগের জন্য ৬ কোটি টাকায় রফা হয়। মন্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে লিটন ও ড্রাইভার মোমিনকে টাকা বুঝিয়ে দিতে বলেন মন্ত্রী। তখন অগ্রিম হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোলের উপস্থিতিতে লিটন ও মোমিনের কাছে ৪৮ জন চাকরি প্রার্থীর জন্য ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেন আবু সুফিয়ান ও নাসির হাওলাদার নামের এক চাকরি প্রার্থী। তবে ওই ৪৮ জনের কেউই চাকরি পাননি।
ভুক্তভোগী বলেন, অগ্রিম টাকা দেয়ার পরও চাকরি না হওয়ায় গত ১১ই জুন প্রতিমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে দেখা করেন আবু সুফিয়ানসহ অন্যরা। এ সময় মন্ত্রী তাদের টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও টাকা ফেরত পাননি ভুক্তভোগীরা। ফলে গত ১৪ই মে ৪৮ জনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন আবু সুফিয়ান। এতে ক্ষুব্ধ হন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। সম্প্রতি ঘোষিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি জাকির হোসেন। এতে ক্ষুব্ধ হন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ওপর। বৃহস্পতিবার তাদের টাকা ফেরত নেয়ার কথা বলে মন্ত্রীর বাসায় ডাকেন ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোল। কল্লোলের কথামতো সকাল ১১টায় মন্ত্রীর মিন্টো রোডের ১১ নম্বর বাসায় যান আবু সুফিয়ান, নাসির হাওলাদার ও জাহিদ হাসান নামের ৩ জন। ওই ৩ জন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোলের রুমে ঢোকার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওপর থেকে ওই রুমে আসেন মন্ত্রী। এ সময় মন্ত্রী তার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বাসার নিরাপত্তায় থাকা ৭ থেকে ৮ জন ওই রুমে প্রবেশ করেন। রুমের দরজা আটকে ৩ জনকে পেটাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মন্ত্রী নিজেও রড দিয়ে পেটাতে থাকেন। একপর্যায়ে ৩ জনের মধ্যে নাসির হাওলাদার ও জাহিদ হাসান প্রধান ফটক দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে যান।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মানবজমিন থেকে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ও তার ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোলের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোনকল দেয়া হলেও তারা কেউ সাড়া দেননি। এদিকে আবু সুফিয়ানের বিষয়ে জানতে ডিবি কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ এর কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মো. আবু সুফিয়ান ভূঁইয়া ফারুক মানবজমিনকে বলেন, সুফিয়ান বিশ্বাস খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন এবং কেমন আছেন আমাদের জানা নেই। তার ফোন খোলা রয়েছে। তবে কেউ রিসিভ করছে না। তিনি বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে চাকরি না দেয়ার বিষয়টি তার ব্যক্তিগত। এটা সাংগঠনিক কোনো বিষয় না। যেহেতু তিনি আমাদের সংগঠনের একজন সদস্য তাই তার খোঁজ রাখাটা আমাদের দায়িত্ব।
ওদিকে মন্ত্রীর পক্ষ থেকে দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ৩৫ নম্বর মিন্টো রোডের ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মো. রাসেল নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। পরে সকাল ১১টার সময় আসামি মো. আবু সুফিয়ান বিশ্বাসসহ অজ্ঞাত ৩ জন বাসভবনের গেটে জোরে ধাক্কা দিলে মো. রাসেল পকেট গেট খুলে পরিচয় জানতে চান। এ সময় সঙ্গে সঙ্গেই তারা জোরপূর্বক নিরাপত্তাকর্মীকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। মো. রাসেল প্রতিবাদ করলে আবু সুফিয়ান তার ইউনিফর্মের কলার ধরে কিল ঘুসি দেয়া শুরু করেন। এবং অজ্ঞাতরা তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র নেয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আসামি আবু সুফিয়ান তাকে বলেন, তোর মন্ত্রীকে খবর দে। আমাকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। আসামিরা নিরাপত্তাকর্মী মো. রাসেলের সরকারি কাজে বাধা প্রদানসহ ভীতি প্রদর্শন করে। তাদের হামলায় আহত রাসেলের চিৎকারে আনসার সদস্য মো. রাসেল, মহানুর এবং পুলিশ কনস্টেবল জাকারিয়া বাসভবনের ভেতর থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় অজ্ঞাত আসামিরা পালিয়ে যায় এবং সাক্ষীদের সহায়তায় ধাওয়া দিলে প্রধান আসামি আবু সুফিয়ান ডিবি পুলিশ হেড কোয়ার্টারের ভিতর ঢুকে পড়লে ডিবির নিরাপত্তা পুলিশের সহায়তায় তাকে আটক করেন।
অভিযোগের বিষয়ে রমনা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মানবজমিনকে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত অভিযোগ পাইনি। আবু সুফিয়ান ডিবি হেফাজতে আটক রয়েছে। আমাদের কাছে এখনো হস্তান্তর করা হয়নি।
পাঠকের মতামত
এসব নিয়ে লেখালেখি মানে আরও উস্কে দেয়া।
তুমিই আমার বাংলাদেশ।
একজন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ সাধারণ মানুষ করেন না। দেশের ও দলের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে ঘুষখোর প্রতিমন্ত্রীর উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মন্ত্রী নিজের কুর্কর্মের দোষ ঢাকার জন্য সাজানো নাটক করছে। এমন সাহস কারো নেই যে, মন্ত্রীর বাসায় গিয়ে চাঁদা দাবি করবে। বাকিটা পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে।
মন্ত্রী সাহেব চাঁদাবাজির শিকার? আশ্চর্য হইলাম!!
মন্ত্রীরা ঘুষ খাইছে,ধরা খাইছে, রড দিয়ে পিটিয়েছে। সব শেষ কথা হল "94 লাখ টাকা জয়বাংলা হয়েগেছে"।
Woow.
মহোদয় টাকা ফিরিয়ে দিন , জনগণ বাসায় উঠবে।
কী মন্তব্য করবো? চোর গেরস্ত সেজে গেল,আর গেরস্ত চোর??? আর ডি.বি পুলিশতো বহু আগে থেকেই গল্প বানানোতে দেলোয়ার জাহান ঝন্টুকে বোল্ড আউট করে বসে আছে!
সাবাশ বাংলাদেশ সাবাশ সাবাশ……
আমাদের মন্ত্রী মহোদয় মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার সাহেব, একজন ভালো মন্ত্রী ছিলেন ওনি রাস্ট্রপতি হওয়ার জন্য যোগ্য ওনাকে এবার দায়িত্ব দিলে দলের কোনো দুর্নাম হবে না!
দেশের একজন সম্মানিত মন্ত্রী চাঁদাবাজির ও হামলার শিকার হয়েছেন, এই অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য নয়।
চোট্টার কোন নীতি আদর্শ বা ধর্ম নেই,প্রয়োজন হলে দলীয় লোক কেন নিজের বউ বাচ্চাকে ছুড়ে ফেলতে দ্বিধা করবে না।