প্রথম পাতা
ভোটের মাঠে সরব স্বতন্ত্র প্রার্থীরা
কাজী সোহাগ
৮ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার
নৌকা প্রতীক বরাদ্দের পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠে ডামি প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহ দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। সাংগঠনিকভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে না- এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছে একাধিকবার দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে একাধিক বৈঠকেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাড় না দেয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। ওইসব আসন থেকে নৌকা প্রতীক সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলেও স্বতন্ত্রদের বিষয়ে কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এরপরই দেশের বিভিন্ন আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অনেকটা উন্মুক্তভাবে নির্বাচনী এলাকায় ভোট নিয়ে কাজ করছেন। নীরবে জনসংযোগ করছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে নৌকা প্রতীক পাওয়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে। তাদের অনেকে এখনও নির্বাচনী এলাকায় যাননি। রাজধানীতে বসে এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নিজের নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ভোটের মাঠ নিজেদের অনুকূলে মনে করছেন না ওইসব নেতাদের কেউ কেউ। তারা এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের নিষ্ক্রিয় করার। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে যাচ্ছেন ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌকা প্রতীক পাওয়া কয়েকজন প্রার্থী মানবজমিনকে বলেন, দলের সিদ্ধান্তর বাইরে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। দল এবার নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু আমরা যারা নৌকা প্রতীক পেয়েছি তাদের জন্য বড় ধরনের অসুবিধার মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে। এতে নির্বাচনী এলাকায় স্থানীয় নেতা ও কর্মীদের মধ্যে বিভেদ দেখা দিয়েছে। নির্বাচনে কে কার পক্ষে কাজ করবে এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থা দেখা দিয়েছে।
তারা জানান, ক্ষমতায় থাকার সময় অনেক ধরনের কাজ করতে হয়েছে। উন্নয়ন, সামাজিকসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ তদারকি করতে হয় স্থানীয় সংসদ সদস্যদের। এতে সবাইকে সব সময় খুশি করা সম্ভব হয় না। আবার কাজ করতে গিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্তও নিতে হয়েছে। ফলে সংক্ষুব্ধ নেতাকর্মী থাকতেই পারেন। নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় এখন অনেক সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে। তাই ব্যক্তিগতভাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে ওইসব স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়া যায় কি না সে চেষ্টা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী একাদশ জাতীয় সংসদের হুইপ মো. সামশুল হকের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিনের বদলি চেয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে দেয়া এক লিখিত অভিযোগে এমন দাবি জানিয়েছেন নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
অভিযোগে তিনি বলেন, আমি চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী। আমি অনুভব, পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, আমার আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মো. সামশুল হক চৌধুরী মহান জাতীয় সংসদের হুইপ এবং বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য হুইপের ক্ষমতায় গত ১২ই নভেম্বর নিজের পছন্দের ওসি বদলি করে আনেন। মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নামে এই ওসি’র নানাশ্বশুর বাড়ি পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে এবং হুইপের দূরসম্পর্কের আত্মীয়। এমন অভিযোগের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে একাধিক চিঠি দিয়েছেন নৌকা প্রতীক পাওয়া প্রার্থীরা। তাদের সবার চিঠির অভিযোগের ভাষা প্রায় একই। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বলে অভিযোগে জানানো হয়। এজন্য সাংগঠনিকভাবে দলের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক মানবজমিনকে বলেন, আমি নিজেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর চাপে রয়েছি। অনেক নির্বাচনী এলাকার নৌকা প্রতীক পাওয়া প্রার্থীরা আমাদের কাছে আসছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে। তাদের বক্তব্য ভোটের মাঠ নাকি স্বতন্ত্রদের দখলে। তাই নিজের নির্বাচনী এলাকায় নৌকার জন্য তারা ভোটারদের কাছে ঠিকমতো যেতে পারছেন না। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।
এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মানবজমিনকে জানান, ১৭ই ডিসেম্বরের পর পরিস্থিতি হয়তো কিছুটা পাল্টাবে। দল স্বতন্ত্রদের বিষয়টি অনুধাবন করে নতুন কোনো কৌশল নেবে। এদিকে নৌকা প্রতীকের পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সম্ভাব্য আসনগুলোতেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের এখন নিয়মিত বৈঠক চলছে। ওইসব বৈঠকের আলোচনায় বড় অংশজুড়ে থাকছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তৎপরতা নিয়ে।