ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

যবিপ্রবিতে চাকরি প্রার্থী ১৭ জনকে অপহরণ

যবিপ্রবি প্রতিনিধি
৮ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) লিফট অপারেটরের নিয়োগ পরীক্ষা দিতে এসে ১৭ জন চাকরি প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। অপহরণের শিকার চাকরি প্রার্থীদের দাবি পরীক্ষা দিতে আসার সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে তাদের ধরে নিয়ে যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে আটকে রাখা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রায় ৬ ঘণ্টা পর গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অপহরণের মামলাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির কথা জানিয়েছেন যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন। 

অপহরণের ঘটনায় বেলা ১২টায় শ.ম.র হলের প্রভোস্ট ড. মো আশরাফুজ্জামান জাহিদ হলে তল্লাশি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানান, হলে কোনো অপহৃত পাওয়া যায়নি। কিন্তু অপহৃত চাকরি প্রার্থীরা জানান, তারা বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত হলের ৩০৪, ৩০৯নং রুম ও পাঁচতলার বিভিন্ন কক্ষে ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে হল প্রভোস্টেকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। অপহরণের শিকার একজন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ইজিবাইক থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে শহীদ মসীয়ূর রহমান হলের ৩০৯নং রুমে নিয়ে গিয়ে বলেন, তোরা পরীক্ষা দিতে আসছিস, এডমিট কার্ড কোথায় থেকে পাইলি? ঐ রুমে আমিসহ ৬ জন চাকরি পরীক্ষার্থী ছিলাম। এ ছাড়াও হলের ৩০৪নং রুম ও পাঁচ তলার একাধিক রুমে আমরাসহ প্রায় ২০ জনের মতো আটক ছিলাম। আমি বের হতে চাইলে আমাকে মাথায় ও নাকে-মুখে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারে। আমার চেয়ে রুমের অন্যান্য পরীক্ষার্থীকে অনেক বেশি মারধর করে। তারপর সাড়ে ৩টার দিকে ওরাই পালবাড়ি নিয়ে ছেড়ে দেয়।

আরেক পরীক্ষার্থী জানান, আমাকে মেইন গেট থেকে ৩০৪ নম্বর রুমে নিয়ে যায়। বলে তুমি তো অনেক ভালো ছেলে নাস্তা হবে, ডিনার হবে, বাসায় ফোন দিয়ে বলো ভাইয়েরা আছে খুব ভালো ব্যবহার করছে। এখানে কয়েকদিন থাকলেও সমস্যা নাই। কিছুু সময় পর পাশের কক্ষ থেকে একজন বলে চাকরি বড় নাকি জীবন বড়? তারপর আমি  ওয়াশরুমে যাই, ফিরে এসে বলি পরীক্ষা দিবো। তখন তারা বলে যাও তুমি পরীক্ষা দাও। তখন ফোন রেখে পাঠিয়ে দেয়, বলে পরীক্ষা শেষে প্রধান ফটক থেকে ফোন নিয়ে চলে যাবি। তবে অন্য সবাইকে আটকে রেখে আমাকে কেনো ছাড়লো সেটা আমি জানি না। ভুক্তভোগী একজন পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমি বেলা সাড়ে ৯টার সময় পরীক্ষার জন্য আমার মেয়ের জামাই মো. আরিফুল ইসলামকে নিয়ে আসি। তখন কিছু ছেলে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের ভেতর থেকে জামাইকে ক্যান্টিনের দিকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ পাই। দীর্ঘক্ষণ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে আমি রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে অভিযোগ জানাই। পরবর্তীতে উপাচার্য স্যারকেও অভিযোগ জানাই। 

এ বিষয়ে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল বলেন, অপহরণের বিষয়ে আমি অবগত নই, আমাদের কাছে এই রকম কোনো অভিযোগ আসে নাই। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এর সঙ্গে জড়িত না। কে বা কারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে  ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এই রকম অপকর্ম করে থাকতে পারে। যদি ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এর সঙ্গে জড়িত থাকে আর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো। যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত নয়। ছাত্রলীগ কখনোই নিয়োগের সঙ্গে জড়িত ছিল না। আমাদের কোনো কর্মী যদি পরীক্ষা দেয়, তবে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আমরা ভিসি স্যারকে জানাই। পরীক্ষার্থী যদি যোগ্য হয় তবে তাকে চাকরি দেয়া হয়। পরীক্ষার্থী অপহরণের বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আজ যবিপ্রবিতে লিফট অপারেটর পদের চাকরির পরীক্ষা ছিল। সকাল ১০টার দিকে আমি জানতে পারলাম কিছু পরীক্ষার্থীকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩০৪নং রুমে ছাত্রলীগ সভাপতির কর্মীরা আটকে রাখছে। আমি হলের প্রভোস্টকে বিষয়টি দেখার জন্য পাঠাই এবং প্রভোস্ট আমাকে জানায় রুমে কাউকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু বেলা ১২টার দিকে যখন আমি অফিসে আসি তখন তাদের অভিভাবকরা আমার সঙ্গে দেখা করে তাদের স্বজনদের অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে। তিনি বলেন, বিকাল ৩টার দিকে অপহরণকারী পরীক্ষার্থীদের ছেড়ে দেয়া হয়। তারা আমাকে জানায়, তাদেরকে হলের তিন তলার ৩০৪নং রুম, ৩০৯নং রুম ও পাঁচতলার বিভিন্ন রুমে আটকে রাখা হয়। পরে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক। এর সুষ্ঠু তদন্ত করে কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status