প্রথম পাতা
উদ্বেগ আতঙ্ক
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৭ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার
সমপ্রতি তৈরি পোশাক খাতের প্রধান ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে বাংলাদেশের ওপর সম্ভাব্য বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রপ্তানিকারকরা। এরই মধ্যে দেশের তৈরি পোশাক পণ্যের বৈশ্বিক ক্রেতারা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের ক্রয় আদেশে নতুন শর্ত যুক্ত করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীতে স্টক হোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, বড় দুই বাজার থেকে নানা ধরনের চাপ আসছে। ‘ইউএস থেকে ইস্যু আছে আপনারা দেখেছেন যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন মেমোরেন্ডাম সাইন করেছেন। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওরাও বাংলাদেশ ভিজিট করে গেছে, সেটারও প্রেশার। ক্রেতারা এরই মধ্যে ক্লজ দিয়ে গেছে যে, স্যাংশন হলে পেমেন্টতো দূরের কথা তারা গুডস নেবে না, গুডস দিলেও পেমেন্ট দেবে না। এই ক্লজে আমাদের ব্যাংক এলসি খুলবে না।’ বর্তমান এই সংকট উত্তরণে এ খাতের সব অংশীদারের সহযোগিতা চেয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শর্তে তারা বলেছেন, এ ধরনের সম্ভাব্য কোনো নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়িত হলে তারা পণ্য বা অর্থপ্রদানের দায়ভার গ্রহণ করবেন না। এই শর্ত বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য একটি নেতিবাচক ধাক্কা; যা স্থানীয় রপ্তানিকারকদের অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
বিষয়টি স্বীকার করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, একজন বায়ার (ক্রেতা) ইতিমধ্যেই তাদের নতুন এলসি (লেটার অফ ক্রেডিট)-এ এমন একটি ধারা যুক্ত করেছে যে, বাংলাদেশ যদি কোনো নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়, তাহলে তারা পণ্য নেবে না; বা যদি পণ্য চালানের পরে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়িত হয়, তবে তারা ওই পণ্যের জন্য পেমেন্ট করতে সক্ষম হবে না।
সম্প্রতি এক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দেশের একটি পোশাক কারখানাকে শর্ত দিয়েছে। বুধবার তার স্পষ্টিকরণ করেছে বিজিএমইএ সভাপতি। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্ব বাণিজ্যের দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে; মানবাধিকার এবং পরিবেশগত কারণে ক্রমবর্ধমান অগ্রাধিকার পাচ্ছে, অন্যদিকে ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলোও বাণিজ্যকে প্রভাবিত করছে। তাই বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করার জন্য এই বিবৃতি দেয়ার তাগিদ অনুভব করছি। তিনি বলেন, বিজিএমইএ’র একজন সদস্যকে বিদেশি ক্রেতার কাছ থেকে এলসি’র একটি অনুলিপি আমাদের নজরে এসেছে। অনুলিপিতে রয়েছে- “জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, যুক্তরাজ্য যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে ওই সব দেশ বা অঞ্চলের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবো না। এ অবস্থায় নিষেজ্ঞার কারণে হওয়া যেকোনো ধরনের বিলম্ব বা লেনদেন বাতিলের তথ্য প্রকাশের দায় নেবো না।
ফারুক হাসান বলেন, এই বক্তব্যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা সঠিক নয়। উল্লেখ্য যে, এলসি একটি নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছ থেকে এসেছে এবং এটি কোনো দেশের দ্বারা সংবিধিবদ্ধ আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি নয়। সুতরাং এটিকে বাংলাদেশের উপর বাণিজ্য প্রয়োগ বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পরিমাপ হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করা উচিত নয় বলে বিজিএমইএ তাদের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন। তবে কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এমন শর্ত দিয়েছে কিংবা কোন পোশাক কারখানাকে এমন শর্ত দেয়া হয়েছে, তা জানাননি বিজিএমইএ সভাপতি।
স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পোশাক উদ্যোক্তারা ইতিমধ্যেই কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং ক্রেতাদের থেকে উদ্ভূত সর্বশেষ এই শর্ত তাদেরকে আরও শঙ্কিত করে তুলেছে।
বিশ্বব্যাপী পোশাক ব্যবসা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছে ঠিক তখনই এই সমস্যা হাজির হয়েছে উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এটি পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। এখন ব্যাংকগুলো এ ধরনের মাস্টার এলসি বা রপ্তানি আদেশের বিরুদ্ধে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খুলতে ইচ্ছুক নাও হতে পারে।
ফারুক হাসান বলেন, গত ব্ল্যাক ফ্রাইডে, থ্যাঙ্কসগিভিং এবং সাইবার মানডেতে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক পণ্যের বিক্রিতে একটি বড় উল্লম্ফন দেখা গিয়েছিল। পোশাক রপ্তানিকারকরা যদি আগামী ছয় মাস টিকে থাকতে পারেন, তাহলে সামনের দিনে তারা আরও শক্তি নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
বাংলাদেশ সিঅ্যান্ডএফ এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং অ্যান্ড বার্থ অপারেটর এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো এসোসিয়েশনের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিজিএমইএ। বন্দর পরিষেবার গুণমান উন্নয়ন নিয়ে ডাকা বৈঠকটিতে সম্ভাব্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বেশি। বাজার পুনরুদ্ধারের এই সময়ে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতা চেয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএ মান্নান কচি ও প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
সমপ্রতি এক অনুষ্ঠানে ইউরোপ ও সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ ব্যবসার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে; এর ফলে দোকানে মালামাল কমে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে চীন ও রাশিয়া বাদে ইউরোপের দেশগুলোসহ বেশির ভাগ দেশই তা অনুসরণ করতে পারে। সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলাদেশের পোশাকের ক্রেতা থাকতে পারে; তবে যাদের ক্রয়ক্ষমতা ভালো তারা অন্য দেশে বিকল্প খুঁজবে। যদি কোনো ক্রেতা অন্য কোথাও বিকল্প খুঁজে পান, তাহলে আগের দেশে ফিরতে তার কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।
বিশ্বব্যাপী অধিকার গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান ও সরকার থেকে বাংলাদেশের ওপর চাপ বেড়েছে। ‘দেশে যারা হুমকি দেয়, ভয় দেখায়; যারা ইউনিয়ন নেতা, শ্রমিক অধিকার রক্ষাকারী এবং শ্রমিক সংগঠনকে আক্রমণ করে’ তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের এই সতর্কবার্তা উদ্বেগজনক।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশি পোশাক কর্মী কল্পনা আকতারের নাম উল্লেখ করে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার রক্ষাকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। শ্রম অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে এমন সব দেশ ও ব্যবসায়ের ওপর গত ১৬ই নভেম্বর নতুন সতর্কতা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের এক-পঞ্চমাংশ রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, যার আর্থিক মূল্য ৪৭ বিলিয়ন ডলার। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রভাব রয়েছে। সমপ্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে শ্রম ও মানবাধিকার নিয়ে একই ধরনের উদ্বেগ দেখানো হয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমেছে। ইপিবি’র তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, জানুয়ারি-অক্টোবর ২০২৩ সময়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৮.৩৯ শতাংশ কমেছে।
এদিকে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ৫০ ভাগই হয়েছে ইইউ এবং যুক্তরাজ্যে। এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাই-নভেম্বরে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ১.৩০ শতাংশ। এ বছরের নভেম্বরে মোট রপ্তানি হয়েছে ৪.৭৮ বিলিয়ন ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের ৫.০৯ বিলিয়নের চেয়ে ৬.০৫ শতাংশ কম।
পাঠকের মতামত
অসুবিধা নেই, নিজের টাকায় ব্যাবসা করবো। সবজান্তার রাজ্য। হীরক রাজার দেশ।
বারবার দরকার শেখ হাসিনার সরকার
[৫] একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান লেটার অব ক্রেডিটে বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞায় পড়লে পোশাক না নেওয়ার শর্ত দিয়েছে উল্লেখ করে সভাপতি ফারুক বলেন, প্রথমবারের মতো ঋণপত্রের সাধারণ শর্তের মধ্যে বলেছে, বাংলাদেশ কোনো নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে তারা পণ্য নেবে না। যদি পণ্য জাহাজীকরণের পরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলেও অর্থ দেবে না ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।
দেশের স্বার্থে ব্যবসায়ীদের সোচাচার হওয়া উচিত।
এক ব্যক্তি রাজনৈতিক কারনে সমগ্র জাতির উপর বিপদ আসছে। এখনও সময় আছে নির্বাচন স্থগিত করে বিরধীদের জেল থেকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন।
আচ্ছা ...... এই ফুল ফুটেছে তাহলে !!!
গনতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ান।
চিন্তা কী? আমরাও নিষেধাজ্ঞা দিব! আমরাও তাদের কাছ থেকে কিছু কিনব না! আমরা আমাদের পন্য চীন, রাশিয়া ও ভারতে রপ্তানি করবো। আমাদের ছেলে মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় চীন, রাশিয়া ও ভারতে যাবে। কোন চিন্তা নাই। নাকে তেল দিয়ে ঘুমান।
কিছুই হবে না। নিশ্চিতে কাজ করে যান। মার্কিনী, ভারতীয়, চীনা এবং রাশিয়ার এজেন্ডা মূলত: এক জায়গায়ই, এসব কিছুই না শুধু মাত্র একটু দরকষাকষি ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে , তারাও আশ্বস্ত হয়ে ৭ জানয়ারী নির্বাচন নাটক অত্যন্ত সফলভাবে মঞ্চস্থ করবে। শেষ দৃশ্যের drop scene পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তালিয়া বাজাবে চার এই বিশ্ব মোড়ল, কে কি শব্দের অভিনন্দন বানি প্রদান করবে তার খসড়া ও প্রস্তুত। এই উপমহাদেশের ইতিহাসে আর একটি নতুন অধ্যায়ের সুচনা হবে বৌদ্ধ, হিন্দু, মোঘল,নবাব, বৃটিশ রাজা বাদশাহ রানীদের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায়। প্রশ্ন একটাই বংগোপসাগর উপকুলের এই পললভূমিতে ইতিহাসের এই অধ্যায়ের ব্যাপ্তি শতাব্দীর না যুগের। এটা এমনিই ভীতিকর সত্যি কথা যে মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশ করার সাহসিকতা ও দেখাতে পারবেনা।
বর্তমান সরকর পড়ত্যাদ করে তত্তাবধ্যায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলেই সবসমস্যার সমাধান হবে।
আওয়ামীলিগ কে যে কোন উপায়ে ফের ক্ষমতায় আনার ব্যাপারে ভারত মরিয়া।এর বহুবিদ কারনের মধ্যে আমার কাছে মনে হয় (আমি কোন রাজনৈতিক পার্টির সংগে সম্পৃক্ত নই) আমাদের পোষাক শিল্পের দিকে লোলুপ দৃষ্টি।আমাদের দেশে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন যদি না হয় তবে পশ্চিমারা বা আমেরিকা যে স্যাংশন দিবে সেটা সরাসরি আমাদের পোশাকশিল্পের উপর আসবে। ঠিক ঐ সময় আমাদের পোষাক শিল্পটা ভারত নিয়ে যাবে ।
কয়েকদিন আগে যেসব ব্যবসায়ী জয়ধ্বনি করেছিল শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার। বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দিলে সমস্যা কি? হাসিনা ক্ষমতায় থাকলেই তো তেলবাজেরা খুশি। এবার ঠ্যালা সামলাও