ঢাকা, ১০ মে ২০২৫, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

ফেরার এক পিতার আকুতি

মেয়ের সঙ্গে দেখা নেই ১৪ বছর, কথা হয় ভিডিও কলে

শরিফ রুবেল
৬ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার
mzamin

ফেরার এক পিতার করুণ আর্তনাদ- ছেলে, মেয়ের সঙ্গে দেখা নেই ১৪ বছর। গুমরে কান্নাই তার সম্বল। বলেন, ফেরার সময়ে ছেলে-মেয়ের সঙ্গে কদাচিৎ ভিডিও কলে কথা হয়। তাও ক্ষণিকের জন্য। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সাবেক ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রহমান সুমন। 

ওদিকে ২০২০ সালে বাবা মারা যায় রামপুরা থানা যুবদল নেতা কামাল আহমদ দুলুর। বলেন, লাশ দেখতে পারিনি। মা অনেকদিন অসুস্থ। মায়ের কাছে যেতে পারি না। ঢাকার অন্য জায়গায় কারও সঙ্গে দেখা করতে পারি না। পরিবারের সদস্যদেরও নজরদারিতে রাখে পুলিশ। পরিবারের কে কখন কোথায় যান, পুলিশ তারও খোঁজ রাখে। ফোনে কথা পর্যন্ত বলতে পারি না। ফোন ব্যবহার করলেই পুলিশ পিছু নেয়। প্রতিদিনই আমার বাসায় পুলিশ যায়। এলাকায় পুলিশের অনেক ফর্মা কাজ করে। পুলিশের চেয়ে এই ফর্মারা বেশি ভয়ঙ্কর। বাবার জানাজায় যাওয়ার চেষ্টা করেছি। যেতে পারিনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও আমাকে খোঁজে। পুলিশের তাড়ায় ঢাকায় থাকতে পারি না। ৪ বছর দুই জেলায় আত্মগোপনে ছিলাম। অনেক কষ্টে জীবন কাটিয়েছি। নিজের বাড়ি থাকতেও ৯ বছর বাড়িতে যেতে পারি না। ভোটের অধিকারের সংগ্রামে নেমে জীবন থেকে ১০টি বছর হারিয়ে গেছে। 

রামপুরা থানা যুবদলের আহ্বায়ক কামাল আহমেদ দুলু। গত সোমবার ঢাকার সিএমএম আদালতে মানবজমিন-এর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বলেন, একের পর এক মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে দিন কাটে আদালতে। রামপুরা, খিলগাঁও, হাতিরঝিল থানায় মামলা হলেই আমার নাম থাকে। আমি একজন কমন আসামি। এমন কোনো মামলা নেই, যেখানে আমার নাম নেই। আমি কোন চোরাবালিতে আটকে গেছি নিজেই বলতে পারি না। বাবার রেখে যাওয়া সম্পদের ওপর ভর করেই জীবন চলছে। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ৯ বছরে ৭৩টি মামলা হয়েছে। খিলগাঁও থানায় ১৭, রামপুরা ৩৭, হাতিঝিল ২, রমনা ১, শাহবাগ থানায় ২টি মামলা হয়েছে। মামলার পেছনে দৌড়ে এখনো সংসার করা হয়নি। এলাকায়ই যেতে পারি না। বিয়ে করবো কীভাবে? এমন একটা অনিশ্চিত জীবন হলে তার সঙ্গে কে মেয়ে দিবে? আসলে এই জীবনের কোনো অর্থই হয় না। 

তিনি মানবজমিনকে বলেন, কয়েকটি মামলার বিচার শুরু হয়েছে। মামলার কারণে এখন ঢাকায় থাকতে হয়। ঢাকায় একটা মেসে থাকি। প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিতে হয়। এমন কোনো দিন নাই, যেদিন আদালতে আসতে হয় না। এখন আদালতই আমার ঠিকানা। সাজা হলে কারাগারে যেতে হবে। 
রাজনৈতিক মামলা নিয়ে একই রকম পেরেশানিতে হাবিবুর রহমান সুমন। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। রামপুরা উলন বাজার এলাকার বাসিন্দা। রামপুরা, হাতিরঝিল, খিলগাঁও, রমনা, শাহবাগ, পল্টন ও খিলক্ষেত থানায় সুমনের নামে ১৩৫টি মামলা আছে। অনেক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে। ২০১০ সালের পরে হওয়া ২০টি মামলার বিচার শুরু হয়েছে। তবে তিনি আদালতে যান না। মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও খোঁজখবর রাখেন না। আগে হাজিরা দিতে নিয়মিত আদালতে যেতেন। ৩ বছর ধরে আর যান না। বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকতে হয়। ২০১০ সালের পরে আর বাড়িতে যেতে পারেননি সুমন। সুমনের বাসায় প্রায়ই পুলিশ আসে। তার সম্পর্কে তথ্য জানতে চায়। সুমন মানবজমিনকে বলেন, ১৪ বছর ধরে ছেলে-মেয়ের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে পারি না। আমি এক অভাগা পিতা। কয়েকদিন আগে আমার মেয়ে আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিল। বাবা তুমি কি আমাকে কখনো স্কুলে নিয়ে গেছো। তখন আমি তার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারিনি। ফোন কেটে দিয়ে নীরবে কেঁদেছি। আল্লাহ একদিন এই কান্নার বিচার করবে। দেশে থেকে ছেলে-সন্তান পরিবারের কাছে না যেতে পারার চেয়ে যন্ত্রণার কিছু নাই। এই যন্ত্রণা ১৪ বছর ধরেই বয়ে বেড়াচ্ছি। কষ্টের বিষয় হলো পুলিশ আমার পরিবারের সদস্যদেরও নজরদারিতে রাখে। তারাও ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। মাস খানেক আগে আমি এক আত্মীয়র বাসায় বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাই, বাসা থেকে বের হওয়ার পরেই পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। এই হলো আমাদের জীবন। 

আরেক ভুক্তভোগী আদিবুল হক আল আমিন। রামপুরা থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। পশ্চিম রামপুরা মহিলা কমিউনিটি সেন্টার গলি এলাকার বাসিন্দা। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ তার বাসায় গিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে এলাকায় যেতে পারেন না আল আমিন। ছোট ছোট ছেলে-মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না সরাসরি। পরিবারও নানা কষ্টে আছে। রামপুরাসহ বিভিন্ন থানায় আল আমিনের নামে প্রায় ৬০টি মামলা আছে। ২০২১ সালে আল আমিনের বাবা মারা গেলে তিনি বাবার জানাজায় যেতে পারেননি। ভয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ করতে পারেন না। মাঝেমধ্যে অন্যের ফোন দিয়ে কথা বলেন। 

অনিকুর রহমান জাফর। হাতিরঝিল থানা ছাত্রদলের সভাপতি। রামপুরার পূর্ব উলন এলাকার বাসিন্দা। নাশকতা, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা প্রদানের জন্য অন্তত ৬০টি মামলার আসামি জাফর। একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ২০১৩ সাল থেকে এলাকায় যেতে পারেন না। পরিবারের সঙ্গে দেখাও করতে পারেন না। দেশে থেকেও প্রবাসীর মতো জীবন পার করছেন তিনি। 

আসিফ সাত্তার শোভন। বাসা পূর্ব রামপুরায়। তিনি রামপুরা থানা যুবদলের সদস্য সচিব। ৭ বছর  ধরে এলাকাছাড়া। নিয়মিত বাসায় পুলিশ যায়। এলাকায় শোভনের খোঁজ করেন পুলিশ সদস্যরা। রামপুরা, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, শাহবাগ থানায় ৫১টি মামলা আছে শোভনের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে দীর্ঘদিন ধরেই নিজ এলাকায় যেতে পারেন না। প্রায়ই পুলিশ বাসায় এসে তার খোঁজ করে। পরিবারের সদস্যদেরও চাপ দেয় শোভনের অবস্থান জানাতে। তবে প্রায় দুই বছর ধরে তিনি ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করেছেন। পুলিশি হয়রানি এড়াতেই ঢাকা ছেড়েছিলেন। তবে সম্প্রতি মামলাগুলোর বিচার শুরু হওয়ায় প্রতিদিনই আদালতে যেতে হয়। তাই ঢাকার একটি মেসে থেকেই সকালে আদালতে আসেন আর রাতে মেসে ফিরেন।

পাঠকের মতামত

সরকার এমন কঠুর হওয়ার মূল কারণ এই তারেক রহমান মূলত ২০০১ টু ২০০৬ এ উনি শুরু করেছিলেন সহিংসতার রাজনীতি হাওয়া ভবন করে একের পর এক এক দুর্নীতি একুশে আগস্ট এর নির্মম গ্রেনেট হামলার সঠিক বিচার না করার কারনে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিনা বিচারে হত্যা সেই থেকে শুরু হল সহিংসতার রাজনীতি। এই একজনের কারণে আজ পুরো দলের নেতাকর্মী ভুক্তভোগী হচ্ছে। ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

Mohammed Sayed
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:৪০ অপরাহ্ন

নিশ্চয়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সর্ব জ্ঞানের অধিকারী। উনিই উত্তম ফায়সালা দিতে পারেন।

আশরাফ
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:৫৩ অপরাহ্ন

জাহান্নামের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা।

আব্দুল হালিম
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৯:২৯ অপরাহ্ন

Julomer Obsan hobe InshaaAllah

Nurul Alam Parvez
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৮:৩৮ অপরাহ্ন

হায় বাংলাদেশ ! এর নাম স্বাধীনতা!!

Abul Basher
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৮:২০ অপরাহ্ন

এই মজলুমদের একমাত্র ভরষার স্হল মহান আল্লাহ। হে আল্লাহ তুমি জালিমের হাত হইতে মজলুমদের রক্ষা কর।

মো: আজিজুল হক
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৭:৩৮ অপরাহ্ন

আয় স্যাংসন আয়...। দুধ মাখা ভাত কাঁকে খায়।

ইয়াকুব
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৭:৩৬ অপরাহ্ন

দেশটা জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছে।

Nur Abser
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:৫৭ অপরাহ্ন

এসব ঘটনার মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। মন্তব্য করার কোন ভাষা নাই।

মোঃ মোস্তাফিজুর রহমা
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:৫০ অপরাহ্ন

আল্লাহ্ তুমি কি এই অত্যাচার দেখছো না, এই সন্তান হারা পিতামাতার কান্না, স্বামী হারা বধুর কান্না, বাবা হারা অবুজ শিশু সন্তানদের কান্না কি আরশে আজিম এখনো পৌছায়নি। আমরা জানি মজলুম আর আল্লাহর মাঝ খানে কোন পর্দা থাকে না,আল্লাহ এবার তুমি বিচার কর, মাটির মানুষের পক্ষে আর এই অত্যাচার সইবার শক্তি নাই।

আব্দুল ওয়াজেদ মুন্সী
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:৩৩ অপরাহ্ন

এই সরকার দেশটাকে নরকে পরিণত করেছে। তবে এই অন্যায় অত্যাচারের খেসারত আওয়ামী লীগকে একদিন দিতেই হবে।

Digital
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৫:৪১ অপরাহ্ন

কেন এমন হয়ে গেল দেশটা? এখান থেকে কি পরিত্রাণের কোন উপায় নাই?

Anwar
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৫:৩৯ অপরাহ্ন

প্রতিবেদনে উল্লিখিত ব্যক্তিদের কাউকে ব্যক্তিগতভাবে চিনিনা, নিজে কোনো রাজনৈতিক দল করিনা। কিন্তু এদের নিরব কান্না আমাকে কষ্ট দেয়। আমাদের পুলিশলীগের সদস্যগণ এই বি.এন.পি কর্মীদের গ্রেফতার করার ব্যাপারে কেন এতটা মনোযোগী তা কিছুতেই বুঝতে পারছিনা। এর সামান্যতম নিষ্ঠা যদি এরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যয় করতেন তাহলে বাংলাদেশ হয়ে যেত একটি অপরাধমুক্ত দেশ। আরেকটি প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়, কোন মাননীয়দের খুশি করতে তারা এই রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণ করছেন। এই পুলিশলীগের সদস্যদেরও তো আপনজন আছেন।তাদের সঙ্গে যদি কেউ এমন আচরণ করে, তখন তাদের কেমন লাগবে?

Enamul Kabir Sarker
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১:৩৫ অপরাহ্ন

উফফ আল্লাহ আর কতো.....???

শাহ্ আলম মানিক
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:৫৭ অপরাহ্ন

আল্লাহ আপনাদের জন্য যথেষ্ট, এই ধৈর্যের নিয়ামত তিনি এত বেশি দিবেন আপনাদের জন্য অবশ্যই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ, ভাই আপনাদের কষ্টে এদেশের আপামর জনতা সত্যিই ব্যাথিত,জালিমদের বিচার মহান রব্বুল আলামীন এদেশের মাটতেই ইনশাআল্লাহ খুব শ্রীঘই দেখাবেন, আমরা হতাশ বা ক্লান্ত হতে পারি মহান রব নিশ্চয়ই তা নই,আপনাদের অকুতোভয় লড়াই চালিয়ে যান।

Md.Hasanul karim
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

স্বাধীন দেশের পরাধীন নাগরিক আহা আফসোস এজন্যই কি দেশ স্বাধীন হয়েছিল?এই দূর্বিষহ অবস্থার শেষ হবে কখন?

ফয়সাল আবেদীন
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status