দেশ বিদেশ
আরএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনারের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে ক্রসফায়ারের হুমকির অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে
৪ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবাররাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে ক্রসফায়ার ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার মহাপুলিশ পরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে এমন একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন আনোয়ার হোসেন নয়ন নামে এক ব্যবসায়ী। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। অভিযোগকারী নয়ন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর এলাকার আব্দুল লতিবের ছেলে। বর্তমানে তিনি রাজশাহী নগরীর যষ্টিতলা নিউমার্কেট এলাকায় বসবাস করছেন। আনোয়ার হোসেন নয়ন আরএমপি’র বোয়ালিয়া মডেল থানার মামলার বাদী। তার ভাই আব্দুল মতিনও রাজশাহীতে ব্যবসা করতেন। নিউমার্কেটে এশিয়ান স্কাইশপ, এশিয়ান ক্রোকারিজ ও নগরীর থিম ওমর প্লাজায় ‘কুইন্স পার্ক’ নামে একটি কসমেটিকসসহ বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে তার। এ ছাড়া এমএক্সএন মডার্ন হারবাল গ্রুপের ফুড সাপ্লিমেন্ট প্রডাক্টের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ তিনি। লিখিত অভিযোগে আনোয়ার হোসেন নয়ন বলেন, আমার ভাই আব্দুল মতিনের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নুরুন্নবী পলাশ টাকা হাতিয়ে নিতে ব্ল?্যাকমেইলের একটি পরিকল্পিত ছক তৈরি করেন।
এর আগে তার সুপারিশে আমার ভাই আব্দুল মতিনের মালিকানাধীন এশিয়ান স্কাইশপে ম্যানেজার পদে চাকরি নেন বন্ধু পলাশের শ্যালক মিনারুল হক মিঠু। ব্যবসার প্রয়োজনে তার প্রায় ১০টি ব্যাংকে লেনদেন। আমার ভাই ২০২২ সালের শেষদিকে বিদেশ যাওয়ার আগে বেশকিছু চেক স্বাক্ষর করে ম্যানেজার মিঠুকে দিয়ে যান। আমাকে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে যান তিনি। কিন্তু ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিতে ওই ম্যানেজার বিভিন্ন ব্যাংকের অন্তত ১০৮টি চেক কৌশলে চুরি করেন। নয়নের ভাষ্য, ওইসব চেক গোপনে তার দুলাভাই নুরুন্নবী পলাশকে সরবরাহ করেন ম্যানেজার মিঠু। তার ভাই মতিনের নামীয় সিটি ব্যাংকের একটি চেকে ৩ কোটি টাকা লিখে মামলা করেন নুরুন্নবী পলাশ। পলাশের আরেক বন্ধু আনারুল ইসলাম জয় ইসলামী ব্যাংকের একটি চেক ডিজঅনার করে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার আরেকটি মামলা করেন। এ ঘটনা জানার পর মতিন আর দেশে ফেরেননি। ওই প্রতারক সিন্ডিকেট তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দেশে আসার পথ বন্ধ করে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলে নেয়ার চেষ্টা করেন। লিখিত অভিযোগে নয়ন বলেন, পরে আমার ভাইয়ের পরামর্শে নুরুন্নবী পলাশকে প্রধান আসামি করে মামলা করি। মামলার পর নগরীর তেরখাদিয়ার ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে আসামি নুরুন্নবী পলাশকে গ্রেপ্তার ও আমার ভাইয়ের নামীয় ৩টি চেক উদ্ধার করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বোয়ালিয়া মডেল থানার এসআই গোলাম মোস্তফা।
যার একটিতে ৩ কোটি টাকা ও দুইটি চেক ফাঁকা ছিল। সেই থেকে পলাশ কারাগারে আছে। মামলার তিন নাম্বার আসামি আনারুল ইসলাম জয় হাইকোর্ট থেকে পাওয়া জামিনের মেয়াদ শেষে আত্মসমর্পণ করলে জামিন নামঞ্জুর করে তাকেও কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন রাজশাহীর সিএমএম আদালত। এ মামলায় প্রতারণা চক্রের সদস্য দুই বন্ধু এখন কারাগারে আছে। তার ভাইকে ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ম্যানেজার দিয়ে চেক চুরি করে পলাশ ও তার বন্ধু জয় মোট ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকার মামলা করেছে। ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার মামলা করেছে জয়। লিখিত অভিযোগে নয়ন আরও বলেন, এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজশাহীর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলামের বডিগার্ড পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি আমাকে ফোন করে মামলার সাক্ষীদের নিয়ে তার অফিসে যেতে বলেন।
আমি তার কথামতো গত ২৮শে নভেম্বর বিকাল ৩টায় দুজন সাক্ষী সঙ্গে নিয়ে আরএমপি কার্যালয়ে যাই। তার অফিসে ঢুকতেই আমাকে অশ্লীল অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে বলেন, ‘এ মামলা তুলে না নিলে তোকে গুলি করে ক্রসফায়ার বলে চালিয়ে দিবো। বুদ্ধি থাকলে তুই দ্রুত এ মামলা তুলে নিবি। না হলে তুই ও তোর পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে ১০০টা মামলা হবে।’ এ সময় থানা পুলিশের কর্মকর্তাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন তিনি। বলেন, এ মামলা যারা নিয়েছে, সেই.... বাচ্চাদের ব্যবস্থা করবো। ওই পুলিশ কর্মকর্তা প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে আমাকে গালিগালাজ, ক্রসফায়ার ও মিথ্যা মামলার হুমকিসহ মানসিক টর্চার করেছে। এমন পরিস্থিতিতে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা উল্লেখ করে নিরাপত্তা ও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন নয়ন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে তাকে ডাকা হয়েছিল। তিনি দুই-তিন জনকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। মামলার বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। আইজিপি কার্যালয়ে দেয়া অভিযোগের বিষয়টি তিনি জানেন না। এমন অভিযোগ দেয়া হলে তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।