শরীর ও মন
শীতে ত্বকের সঠিক পরিচর্যা
ডা. দিদারুল আহসান
৪ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবার
শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। ফলে বায়ুম-ল ত্বক থেকে পানি শুষে নেয়। এই শুষে নেয়ার কারণে ত্বক, ঠোঁট ও পায়ের তালু ফাটতে থাকে। মানবদেহের ৫৬ শতাংশই হলো পানি। এর মধ্যে ত্বক নিজেই ধারণ করে ১০ ভাগ। ত্বক থেকে পানি বেরিয়ে গেলে ত্বক দুর্বল ও অসহায় হয়ে পড়ে। ত্বকের যেসব গ্রন্থি থেকে তেল আর পানি বের হয়ে থাকে, তা আর আগের মতো ঘর্ম বা তেল কোনোটাই তৈরি করতে পারে না। এতে ত্বক আরও শুকিয়ে যেতে থাকে। আমাদের ত্বকে ধর্মগ্রন্থি ও তেলগ্রন্থি থাকে, যেখান থেকে অনবরত তেল আর ঘাম বের হয়। এ ঘাম আর তেল মিলে দেহের ওপর তেল ও পানির মিশ্রণ বা আবরণী তৈরি করে, যা দেহ শীতল করে রাখে এবং ত্বক শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে, ত্বকের ফাটাভাব প্রতিরোধ করে।
যত্ন নিন ঠোঁটের: শীতকালে কমবেশি সবার ঠোঁট ফাটে। সেক্ষেত্রে তৈলাক্ত প্রলেপ ঠোঁটে ব্যবহার করে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ভ্যাসলিন, লিপজেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করে ঠোঁট ভালো রাখা যায়। মনে রাখতে হবে, জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিত নয়। এতে ঠোঁট ফাটা আরও বেড়ে যেতে পারে।
পায়ের যত্নে সচেতন হোন: শীতকালে কারও কারও পা ফাটে। সেক্ষেত্রে এক্রোফ্লেভিন দ্রবণে পা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর পা পানি থেকে তুলে শুকিয়ে ভ্যাসলিন মাখুন। গ্লিসারিন ও পানির দ্রবণ পায়ে মাখিয়ে ফাটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। পা ফাটা কম হলে অলিভ অয়েল বা নারিকেল তেল ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। বাজারে অনেক রকম ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়। যেমন পেট্রোলিয়াম, ভেজিটেবল অয়েল, ল্যানোলিন, সিলিকন, লিকুইড, প্যারাফিন, গ্লিসারিন ইত্যাদি।
ইকথায়োসিস: ইকথায়োসিস বিভিন্ন ধরনের। এ রোগের মধ্যে ভ্যালগারিস বেশি হয়। এটি জন্মগত রোগ। রোগটি শিশুকাল থেকেই লক্ষ্য করা যায়। নারী-পুরুষ উভয়েরই এ রোগ হতে পারে। আক্রান্ত হলে হাত ও পায়ের ত্বক ফাটা ফাটা এবং ছোট ছোট গুঁড়িগুঁড়া মরা চামড়া বা আঁইশ পায়ের সামনের অংশে বা হাতের চামড়ায় ফুটে ওঠে। তবে হাত ও পায়ের ভাঁজযুক্ত স্থানে থাকবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। শীত এলেই প্রতি বছর এর ব্যাপকতা বাড়ে। আক্রান্তদের হাতের রেখাগুলো খুব স্পষ্ট ও মোটা হয়, যা সাধারণ লোকের দেখা যায় না। একইসঙ্গে তাদের থাকে অ্যালার্জি। এ ধরনের রোগীর কারও কারও নাক দিয়ে প্রায়ই পানিপড়া অর্থাৎ সর্দি সর্দি ভাব থাকে। তাদের পারিবারিক ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, তাদের পরিবারে অ্যালার্জিক সমস্যা ছিল বা এখনো আছে। এ রোগ কখনো ভালো হয় না। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
শীত এলে বেশি বেশি তৈলাক্ত পদার্থ মাখলে ত্বক ভালো থাকে এবং ফাটা ভাব থাকে না। তবে যাদের ফাটা অবস্থা বেশি, তাদের ক্ষেত্রে আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড মাখলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। এটি পেতে অসুবিধা হলে গ্লিসারিনের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ত্বকে মাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
অ্যালার্জিমুক্ত থাকুন: হাঁপানির সঙ্গে অ্যালার্জির গভীর সংযোগ রয়েছে। ফুলের পরাগ, দূষিত বাতাস, ধোঁয়া, কাঁচা রঙের গন্ধ, চুনকাম, ঘরের ধুলা, পুরনো ফাইলের ধুলা দেহে অ্যালার্জিক বিক্রিয়া করে হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করে। যারা হাঁপানিতে ভুগছেন, তাদের এগুলোর সংস্পর্শ ত্যাগ করতে হবে। ছত্রাক দেহে অ্যালার্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টি করে। পনির ছত্রাক মিশিয়ে তৈরি হয়। কোনো কোনো পাউরুটি এবং কেক তৈরি করতেও ঈষ্ট জাতীয় ছত্রাক ব্যবহার করা হয়। আলু, পিয়াজও ছত্রাক দ্বারা দূষিত হয়। এ ছত্রাকও অ্যালার্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টির অন্যতম কারণ। ঘরের ধুলা হাঁপানিজনিত অ্যালার্জির অন্যতম কারণ। ঘরের ধুলায় একটি ক্ষুদ্র জীবাণু থাকে, যা ‘মাইট’ নামে পরিচিত। প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য এ ‘মাইট’ দায়ী। এজন্য ঘরের আসবাবপত্র, কম্বল, পর্দা, তোশক, বালিশে যে ধুলা জমে থাকে, তা পরিষ্কার করার সময় দূরে সরে থাকতে হবে। খাদ্যে অ্যালার্জির আশঙ্কা থাকে। যেমন দুধে অ্যালার্জি থাকে। গম, ডিম ও মাছে অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। আরও অনেক খাবার, পশুপ্রাণীর কামড় থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। ওষুধও হতে পারে অ্যালার্জির কারণ। যেসব অ্যালার্জির কারণ হবে, তা থেকে দূরে থাকলে আক্রান্ত হওয়ার আর আশঙ্কা থাকে না। শীতকালে ভালো থাকুন, নিজেদের সুস্থ রাখুন।
লেখক: চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ
সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা
০১৭১৫৬১৬২০০, ০১৮১৯২১৮৩৭৮