প্রথম পাতা
ইউএনও-ওসি বদল ‘আইওয়াশ’
মো. আল-আমিন
৩ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)কে পর্যায়ক্রমে বদলি করার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন এমন ইউএনও এবং ছয় মাসের বেশি দায়িত্বে রয়েছেন এমন ওসিদের বদলি করে নির্বাচন আয়োজন করবে ইসি। নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তকে আইওয়াশ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, নির্বাচনে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে ইসি’র এমন সিদ্ধান্ত। নির্বাচনে মূল দায়িত্ব পালন করা ডিসি ও এসপিদের বদল না করে ইউএনও ও ওসিদের বদল করার সিদ্ধান্ত লোক দেখানো ছাড়া কিছুই না। এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ইসি নির্বাচনে মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে ইসি এমন সিদ্ধান্ত নিলে তা কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য হতো।
তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনাররা গত এক সপ্তাহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল ঘুরে দেখেছেন। মাঠপর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতেই এমন সিদ্ধান্ত এসেছে। যদিও কয়েকদিন আগেই নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছিল, প্রশাসনে রদবদল করার কোনো চিন্তা ইসি’র নেই। এতে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে কোনো অনিয়ম ও অত্যাবশ্যক হলেই কেবল বদলির চিন্তা করবে। তবে হঠাৎ করে বদলির সিদ্ধান্তে ইউটার্ন নিয়েছে ইসি।
ইউএনওদের বদলির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পাঠানো চিঠিতে ইসি বলেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পর্যায়ক্রমে বদলি করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব ইউএনও’র বর্তমান কর্মস্থলে এক বছরের অধিক চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে, তাদেরকে অন্য জেলায় বদলির প্রস্তাব ৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো প্রয়োজন। অন্যদিকে ওসিদের বদলির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, প্রথম পর্যায়ে যেসব থানার ওসিরা বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের বেশি সময় আছেন, তাদের অন্য জেলায় বা অন্য কোনো থানায় বদলির প্রস্তাব ৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো প্রয়োজন।
ইসি সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ-আল মামুন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। একইদিন বিকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীও কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে বদলির বিষয়ে তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়। একইদিন কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে চিঠিও পাঠায় ইসি।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত লোক দেখানো মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসিদের বদলি করা হলেও নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, নিয়ন্ত্রক হলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি)। যদিও প্রশাসনের সবাই এখন দলীয়। তারা ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসিদের বদলির সিদ্ধান্তটি ‘আইওয়াশ’। তাদেরকে বদলি করে যেখানে দায়িত্ব দেয়া হবে সেখানেও তারা ঠিক একই কাজ করবে। এই নির্বাচনে এগুলো করা আর না করা সমান। মূল জায়গায় তো ঠিক নাই। তিনি বলেন, ইসি এটা দিয়ে নির্বাচনে বৈধতা আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু এটা করে তারা নির্বাচনে বৈধতা আনতে পারবেন না। সবাই অংশগ্রহণ করলেই না আপনি এটা করতে পারতেন। এই সিদ্ধান্ত মন্দের ভালো।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসবে এটা প্রত্যাশিত ছিল। নির্বাচন কমিশনের যে দাঁত ও নখ আছে, সেটি শতভাগ পূরণ করতেই সম্ভবত এমন আদেশ প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, বদলির বিষয়ে ৬ মাসের একটি সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। ফলে, এমন সিদ্ধান্তে নির্বাচনে খুব একটা প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না।
এ বিষয়ে ইসি’র অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচন কমিশনাররা গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সফর করেছেন। নির্বাচন কমিশনারদের কাছে মাঠপর্যায় থেকে যে তথ্য এসেছে তার ভিত্তিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কমিশন অনুভব করেছে বদলি দরকার। নির্বাচন কমিশন বসে গত ৩০শে নভেম্বর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, বড় আকারে রদবদল করা হলে পুলিশ-প্রশাসনে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে, এর দায়ভার ইসি কেন নেবে? আরও একটা কথা বলেছিলেন, একশ কোটি টাকা ব্যয় হবে, এ টাকা কে দেবে-এমন বিষয় সামনে আনলে তিনি বলেন, একশ কোটি টাকা কেন ব্যয় হবে? তাহলে ওই কমিশনারের কাছে জানতে চাইতে হবে।
ডিসি ও এসপি বদলির কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা-জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আমার জানা নেই। পরে যদি কোনো সিদ্ধান্ত হয়, তখন বলতে পারবো। যদি নির্বাচন কমিশন বসে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে এটা হতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু না।
দুই জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন: নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে পরিবর্তন এনেছে সরকার। এরমধ্যে ময়মনসিংহের ডিসি মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে উপ-সচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের ডিসি দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীকে ময়মনসিংহের নতুন ডিসি করা হয়েছে। আর জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে সংযুক্ত উপ-সচিব মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরীকে সুনামগঞ্জের ডিসি করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত
ইসি নতুন নাটক মঞ্চস্থ করছে। দেশের আপামর বোকা জনগণ আপনাদের এই লোক দেখানো নাটক বুঝতে পারছে। আপনারা যে মেরুদন্ডহীন তাহা বিগত কয়েকটি উপ নির্বাচন ও সিটি নির্বাচনে দেশের জনগণ দেখেছে।
ইসি’র অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ ..........................!
পাবলিক একমত।
Preplan. Akhon ichchamoto jaigamoto unader post jora hobe
ইসির লোক দেখানো নাটক। পাবলিক সবই বুঝে