প্রথম পাতা
হেঁটে ফিরোজায় ফিরলেন খালেদা জিয়া
ভালোবাসার জনস্রোত
স্টাফ রিপোর্টার
৭ মে ২০২৫, বুধবার
খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কে নেতাকর্মীদের ঢল -নিজস্ব ছবি
আবারো নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। প্রায় চার মাস পর লন্ডনে চিকিৎসা নিয়ে হাসিমুখে দেশের মাটিতে পা রেখেছেন তিনি। হুইলচেয়ারে করে ফিরোজা থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে বের হওয়া খালেদা জিয়া ওই বাসায় প্রবেশ করেছেন হেঁটে। শারীরিক ও মানসিকভাবে আগের চেয়ে চাঙ্গা খালেদা জিয়াকে ঘিরে তাই আবেগ আর উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন দলের লাখো নেতাকর্মী। সড়কে দাঁড়িয়ে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। খালেদা জিয়াও গাড়িতে বসে হাত নেড়ে অভিবাদনের জবাব দিয়েছেন হাসিমুখে। একই গাড়িতে ছিলেন খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমান।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নে বিপর্যস্ত খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের এমন ছবি বহুদিন পর দেখতে পেয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পত্নী ডা. জুবাইদা ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন। আবেগ জড়ানো তার এই ফেরায়ও উচ্ছ্বসিত বিএনপি’র নেতাকর্মীরা।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতারের আমীরের দেয়া বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্স লন্ডন থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় গতকাল সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা ১১টার দিকে তার গাড়িবহর গুলশানের বাসা ফিরোজার দিকে যাত্রা শুরু করে। তার দেশে ফেরাকে ঘিরে সকাল থেকে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত সড়কের দুইপাশে অবস্থান নেন। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পরই জনস্রোতে আটকে পড়ে গাড়িবহর। হাতে খালেদা জিয়ার ছবি, জাতীয় ও দলীয় পতাকা, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার হাতে নিয়ে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানান। ভিড় সামলাতে পুলিশ, র্যাব, সেনাসদস্যসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় অবস্থান নেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসায় ফিরতে খালেদা জিয়ার সময় লাগে দুই ঘণ্টারও বেশি। বাসায় পৌঁছে দুই পুত্রবধূর সহায়তায় হেঁটেই তিনি ফিরোজায় প্রবেশ করেন। চিকিৎসা শেষে অনেকটা সুস্থ হয়ে খালেদা জিয়ার এই ফেরা গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সহজ করবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়ার সফর সঙ্গী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া এখন অনেকটা সুস্থ এবং মানসিকভাবে স্ট্যাবল।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিমানবন্দরে পৌঁছালে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পক্ষ থেকে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিমানবন্দর থেকে বেলা ১১টার পর তাকে বহনকারী গাড়ি ফিরোজার পথে রওনা দেয়। সেখান থেকে খিলক্ষেত, কুর্মিটোলা, নৌ-সদর দপ্তরের পাশের সড়ক হয়ে হয়ে ফিরোজায় পৌঁছায়। ফিরোজায় ও তার সামনের সড়কে সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।
ফিরোজায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান তার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, শামীম ইস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, জুবাইদা রহমানের বড় বোন শাহীনা জামান বিন্দু এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ছিলেন সেখানে।
বিমানবন্দরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান।
বিমানবন্দরে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘকাল ফ্যাসিবাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফ্যাসিবাদ বিদায় নেয়ার পর কারাবন্দিত্ব মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রায় ৪ মাস চিকিৎসা শেষে আজকে দেশে ফিরলেন। এটা আমাদের এবং জাতির জন্য একটা আনন্দের দিন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র উত্তরণের এই সময়ে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি একটি উল্লেখযোগ্য দিক। তার ফিরে আসা আমাদের গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সহজ করবে। দেশকে সঠিক ও বৈষম্যহীন পথে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
ওদিকে দলীয় চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেন নেতারা। প্রিয় নেত্রীকে দেখতে তারা অপেক্ষা করেন দীর্ঘ সময়। কারও হাতে খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, কারও হাতে তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, কারও হাতে জুবাইদা রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, জাতীয় এবং দলীয় পতাকা হাতেও আসেন কেউ কেউ। বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় পৌঁছানোর পথে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড় সামলাতে ট্রাফিক পুলিশও তৎপর ছিল। বিএনপি এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়, নেতাকর্মীরা যাতে সড়কে অবস্থান না করে ফুটপাথে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে দাঁড়ান।
গত জানুয়ারিতে কাতারের আমীরের পাঠানো বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সে করে লন্ডনে গিয়েছিলেন, একইভাবে কাতারের আমীরের পাঠানো এয়ার এম্বুলেন্সে চড়ে খালেদা জিয়া দেশে এলেন। তার সঙ্গে এসেছেন দুই পুত্রবধূ- তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরও এসেছেন তার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, লন্ডন বিএনপি’র সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদসহ ১৪ জন।
খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন:
শারীরিকভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন অনেকটাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। গতকাল গুলশানে চেয়ারপারসনের বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের তিনি একথা জানান। জাহিদ হোসেন বলেন, চিকিৎসা পরবর্তীতে উনার শারীরিক অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ, অনেকটুকু উনি (খালেদা জিয়া) সুস্থ আছেন এবং মানসিকভাবেও উনি অনেক শক্তিশালী আছেন। আপনারা উনার সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। অনেকটাই শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উনি ফিরোজায় ফেরত এসেছেন। যদিও ১৪ ঘণ্টার জার্নি এবং রাস্তার এই অবস্থায় উনি শারীরিকভাবে একটু অবসন্ন। তারপরেও মানসিকভাবে উনার অবস্থা অত্যন্ত স্থিতিশীল আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত এই চিকিৎসক বলেন, আপনাকে মনে রাখতে হবে বিএনপি’র নেতৃত্বের মধ্যে কোনো ধরনের গ্যাপ নাই। অনেকে বলেছিল সেই ১৯৮১ সালের ৩০শে মে মাসের ঘটনার (জিয়াউর রহমানের নিহত হওয়ার ঘটনা) পরে যে, বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আলহামদুলিল্লাহ বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদত বরণের পরে বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আবার ১/১১ করে বিএনপিকে নেতৃত্ব শূন্য করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তারেক রহমানের কোমর ভেঙে দেয়া হয়েছিল কিন্তু আল্লাহ’র কি অশেষ মেহেরবাণী তারেক রহমান আজকে আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় বিদেশের চিকিৎসায় অনেকটা সুস্থ।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার কথা, একজন মাঝে মাঝেই বলতেন এখনো যায় না কেন, এখনো যায় না কেন? উনিই (শেখ হাসিনা) চলে গেছেন কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া এখন বর্তমানে, আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া জানাই। কাজেই মনে রাখবেন যখনই প্রয়োজন, জাতির প্রয়োজনে বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দেবেন। আমাদের নেতা তারেক রহমানের যে নেতৃত্ব ইনশাআল্লাহ আরও সুদৃঢ় হবে এবং বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র পাবে এবং জনগণের অধিকার আদায় হবে এবং সকল অন্যায়-অবিচারের বিচার বাংলার মাটিতে হবে।
ডা. জাহিদ বলেন, যখনই প্রয়োজন এবং জাতির প্রয়োজনে বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দেবেন। উনি জনগণের নেত্রী, জনগণের পাশে থাকতেই পছন্দ করেন, সেজন্য আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ, দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ যারা উপস্থিত থেকে উনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন- তাদের উনি শুভেচ্ছা ও সালাম জানিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য কাতারের ‘রাজকীয় বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্স’ ‘বিনাভাড়ায়’ দেয়ার জন্য কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং কাতার কর্তৃপক্ষের প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কতৃজ্ঞতার কথাও জানান তিনি। জাহিদ জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডনে একদিন কম চার মাস ছিলেন। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে তার চিকিৎসা হয়েছে। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৫শে জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।
লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিমান কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের প্রতি খালেদা জিয়ার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথাও জানান ডা. জাহিদ।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসায় নিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিপি, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা যে দায়িত্ব পালন করেছেন সেজন্য তাদের প্রতি দলের চেয়ারপারসন এবং দলের পক্ষ থেকে কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ম্যাডামের চিকিৎসাধীন সময়ে লন্ডনে উনার ছেলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৮ই জানুয়ারি উনাকে রিসিভ করা থেকে শুরু করে সোমবার ৫ই মে পর্যন্ত উনি লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় এবং উনার বাসায় উনার পরিবারের সকল সদস্যদের তত্ত্বাবধায়নে বিশেষ করে উনার তিন নাতনির কথা বলতেই হয়, ব্যারিস্টার জায়মা রহমান, জাফিয়া রহমান, জাহিয়া রহমান তারা সব সময় তাদের দাদু অর্থাৎ আমাদের দেশনেত্রীর বেগম খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে প্রশান্তি আনার জন্য যে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেজন্য আমরা বিএনপি’র পক্ষ থেকে তারেক রহমানসহ তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সঙ্গে ইউকে বিএনপি’র এমএ মালেক, কয়ছর এম আহমেদসহ সকল প্রবাসী বিএনপি’র নেতাকর্মী ছাড়াও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দলের প্রবাসী নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার জন্য যে সহযোগিতা করেছেন এবং দেশবাসী সুস্থতার জন্য দোয়া করেছেন- সেজন্য দেশনেত্রী সবার কাছে তার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আল্লাহ’র কাছে আমরা শুকরিয়া জানাই তার রহমতে দেশনেত্রী অনেকটা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসতে পেরেছেন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় বহরের বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্স করে গত ৮ই জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে খালেদা জিয়াকে সরাসরি লন্ডন ক্লিনিকে নিয়ে যান তার বড় ছেলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২৫শে জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তার বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। বাসা থেকেই লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে তিনি চিকিৎসা দেন। নানা জটিল রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে বার বার চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলেও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তাকে সেই অনুমতি দেয়া হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা: বেগম খালেদা জিয়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর তার গুলশানের বাসা পর্যন্ত সড়কে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পাশাপাশি পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশও নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ সহায়তা দেন সেনা সদস্যরা।
সকাল থেকে ডিএমপি’র উত্তরা বিভাগ ও গুলশান বিভাগ যৌথ দায়িত্ব শুরু করে। ডিএমপি’র উত্তরা বিভাগ বিমানবন্দরসহ তাদের আওতাধীন এলাকায় মোড়ে মোড়ে এবং কিছুদূর পর পর পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। একইসঙ্গে গুলশানের আওতাধীন এলাকা বাসভবন ফিরোজাসহ বনানী ও খিলক্ষেত এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। পাশাপাশি ট্রাফিক উত্তরা ও গুলশান বিভাগ সড়কে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এসএসসি পরীক্ষার জন্য এবং হজযাত্রী ও বিদেশযাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সেজন্য পুলিশ সড়কে কাজ করেছে। কোনো অবস্থাতেই অকারণে রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থামলে সেই গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা ছিল। বিমানবন্দরেও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে পুলিশ। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নজরদারি করেছেন পুলিশ সদস্যরা। এ ছাড়াও বিভিন্ন ভবনের রুফটফেও পুলিশ সদস্যদের দেখা গেছে।
সকাল থেকে সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সড়কে থাকা গাড়ি তল্লাশি করা হয়। র্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর গাড়ি টহল দিতে দেখা যায়। সেনা সদস্যরা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনের সড়কে অবস্থান করা গাড়ি সরিয়ে দিয়েছেন। এতে কমছে যানজট। সকাল থেকে বিমানবন্দর সড়কের গণপরিবহনকে কোনোরকম জটলা করতে দেননি সেনা সদস্যরা। প্রতিটি গাড়িকে অযথা সড়কে না থাকতে সতর্ক করেছেন সেনা সদস্যরা। ছিল পুলিশের চেকপোস্টও। সড়কে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে সড়কে ছিটানো হয়েছে পানি।
পাঠকের মতামত
বেগম খালেদা জিয়াকে সুস্বাগতম