দেশ বিদেশ
কঙ্কালের সূত্র ধরে যেভাবে ঘাতক গ্রেপ্তার
স্টাফ রিপোর্টার
৩০ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবারআঁখি আক্তার (২৪)। স্বামী ওমর ফারুক কর্মসূত্রে বিদেশ থাকেন। স্বামীর অবর্তমানে প্রতিবেশী রুমান শিকদারের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন আঁখি। বিষয়টি জানতে পেরে দেশে এসে স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় স্বামী। পরে উভয়ের স্বজনদের মধ্যস্থতায় পুনরায় আঁখিকে ঘরে তোলেন ওমর ফারুক। কিছুদিন যেতে না যেতেই আঁখি আবারও রুমানের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান। একপর্যায়ে গত মার্চ মাসে আঁখি রুমানের সঙ্গে ঘর থেকে পালিয়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন।
এর সপ্তাহখানেকের মাথায়ই এলাকাবাসীদের নিয়ে সেখানে হাজির হয় স্বামী ওমর ফারুক। তখন সকলে বিয়ের জন্য চাপ দিলে রুমান আঁখিকে বিয়ে করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কষ্ট পেয়ে আঁখি তার সকল অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চেয়ে স্বামীর ঘরে ফিরে যান। একই সঙ্গে বাইরে রাত কাটানোর কথা কাউকে না বলতে রুমানকে অনুরোধ করেন। কিন্তু রুমান শিকদার এলাকায় ফিরেই সকলকে ঘটনাটি জানিয়ে দেয়। এতে চরম ক্ষিপ্ত হয় আঁখি ও তার স্বামী। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২২শে মার্চ রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফোন করে কৌশলে রুমানকে বাড়িতে ডেকে নেয় আঁখি।
কথা বলার একপর্যায়ে পেছন থেকে লোহার রড দিয়ে মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে রুমানের মৃত্যু নিশ্চিত করে আঁখি ও তার স্বামী ওমর ফারুক। এরপর লাশ বস্তাবন্দি করে প্রতিবেশী মো. আলাল মোল্লা (৩৫)কে ফোনে ডেকে নেয় তারা। আলালের সহযোগিতায় আঁখি ও তার স্বামী বস্তাবন্দি রুমান শিকদারের লাশ বাড়ির পেছনের সিংহ নদীতে ফেলে দেয়। গতকাল সকালে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানান পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা।
কুদরত-ই-খুদা জানান, হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই মাস পর গত ২১শে মে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ডাইঘাট এলাকায় সিংহ নদী খনন করার সময় মাটির সঙ্গে একটি কঙ্কাল উঠে আসে। বিষয়টি ভেকুচালক এলাকাবাসীকে জানালে তারা ৯৯৯-এ ফোন করেন। পরে পুলিশ গিয়ে কঙ্কালটি উদ্ধার করে। এ সময় খবর পেয়ে কঙ্কালের সঙ্গে শার্টের অংশ বিশেষ দেখে রুমান শিকদারের কঙ্কাল বলে শনাক্ত করেন তার মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তানরা।
এ ঘটনার পরদিন ২২শে মে এসআই মাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পরে কঙ্কালের ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে জানা যায়, লাশটি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার বাঘাশুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের জনৈক আবু শিকদারের ছেলে রুমান শিকদারের। তবে পুলিশ ৩ মাস তদন্ত করেও কোনো কূলকিনারা না পাওয়ায় গত ২২শে আগস্ট মামলাটির তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তদন্তের একপর্যায়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আঁখি আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার দেয়া তথ্যে আলাল মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা উভয়ই রুমান শিকদারকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। একইসঙ্গে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।