ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

শমসের মবিনের এলাকায় তৃণমূল বিএনপি’র খোঁজে

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৬ নভেম্বর ২০২৩, রবিবারmzamin

আওয়ামী লীগই ভরসা কিংস পার্টি বলে খ্যাত বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন দল তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর। তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের পর নিজ এলাকা সিলেট-৬ আসনে বিএনপি ও বিরোধী বলয়ের ভোটব্যাংক হারিয়েছেন তিনি। গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও তার নিজের কিংবা দলের কোনো ভোটব্যাংক নেই। এ কারণে শমসের মবিনের প্রার্থী হওয়া নিয়ে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা। তাকে ঘিরে জল্পনারও অন্ত নেই। তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন ভোটাররাও। 

ভিআইপি প্রার্থীদের এলাকা সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার) আসন। এ আসনে তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান হিসেবে প্রার্থী হতে ঘোষণা দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। ইতিমধ্যে তিনি এলাকায় এসে কার্যক্রমও শুরু করেছেন। গত সংসদ নির্বাচনে তিনি এ আসন থেকে বিকল্প ধারার হয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন। প্রতীক বরাদ্দের আগে তিনি নির্বাচন থেকে সরে যান। এর আগে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি সিলেট-১ আসন থেকে বিএনপি’র হয়ে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি ছেড়ে দেয়ায় তিনি সিলেট বিএনপি’র রাজনীতি থেকেও হারিয়ে গেছেন। তবে তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান হওয়ায় তাকে নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নিজ এলাকা সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের বিএনপি’র নেতারা। এমনকি তাকে এলাকায় অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করা হয়। 

এখন এলাকার বিএনপি ও বিরোধী বলয়ের নেতাকর্মীরা তার ঘোর বিরোধী। তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারপারসন হলেও নির্বাচনী এলাকায় দল একেবারেই অপরিচিত। ভোটের মাঠে থাকা অচেনা এই দলকে এখনো ভালোভাবে চিনেই না এলাকার ভোটাররা। গোলাপগঞ্জে দলের আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও বিয়ানীবাজারে এখনো অস্তিত্ব নেই। অতীতে নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় না থাকায় নির্বাচনী আসনে ভোটব্যাংক গড়ে তুলতে পারেননি। ব্যক্তি ইমেজকে পুঁজি করে নির্বাচনী  বৈতরণী পাড়ি দেয়া কষ্টকর হবে বলে মনে করছেন রাজনীতিকরাও। তৃণমূল বিএনপি’র গোলাপগঞ্জের আহ্বায়ক ছানাউর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন; গোলাপগঞ্জে তারা নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছেন। এই আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে ভোটার টানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে তারা সফল হচ্ছেনও। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মতো তাদের নিজস্ব কোনো ভোটব্যাংক না থাকলেও শমসের মবিন চৌধুরীর ইমেজকে কাজে লাগিয়ে তারা ভোটার টানতে চাচ্ছেন। সেখানে তারা অরাজনৈতিক সংগঠনকে টার্গেট করে কাজ করছেন।

বিয়ানীবাজারে তাদের কোনো কমিটি রয়েছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান; এ প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই। তবে; একটি কমিটি গঠনের চেষ্টা চলছে বলে শুনেছেন। বিয়ানীবাজারের রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে- এখনো ওই এলাকায় তৃণমূল বিএনপি’র কোনো কমিটি নেই। ফলে শমসের মবিন চৌধুরীর পক্ষে কেউ-ই মাঠে সক্রিয় নয়।  ভোটের মাঠে শুধু আলোচনায় আছে তার নাম। নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন যতই এগিয়ে আসছে, নিজ এলাকার রাজনৈতিক, সামাজিক মহলে তাকে ঘিরে নানা গুঞ্জন ও আলোচনার ডালপালা মেলছে। কী করতে চাচ্ছেন শমসের মবিন। কেমন হবে তার পলিসি সেটিও এখন আলোচনা মানুষের মধ্যে। গোলাপগঞ্জ বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুল আহাদের মতে; শমসের মবিন চৌধুরী একজন ভিআইপি ব্যক্তি। এটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বিএনপি ও বিরোধীরা তার উপর ক্ষুব্ধ থাকায় ভোটব্যাংকও নেই। আওয়ামী লীগের সহযোগিতা ছাড়া তার এমপি হওয়া কষ্টকর হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আর গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফুর রহমান শমসের মবিন চৌধুরী কিংবা তৃণমূল বিএনপিকে নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে নারাজ। তবে একজন রাজনৈতিক কর্মী হবে তিনি জানান- বাস্তবে এলাকার ভোটারের সঙ্গে শমসের মবিনের তেমন সম্পর্ক নেই। তার দলের কার্যক্রমও তেমনটি নেই। ফলে আগামীতে কী হয়, সেটি দেখার বিষয়। তিনি বলেন- মার্কা হিসেবে নৌকা নিয়ে যে প্রার্থী হয়ে আসবেন তিনি সহ আওয়ামী লীগ নেতারা তার পক্ষে মাঠে সক্রিয় থাকবেন এবং জয়ের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। 

বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান জানিয়েছেন- নিজ এলাকায় শমসের মবিন চৌধুরীর ভোটব্যাংক আছে বলে জানা নেই। তার দলেরও তেমন অবস্থান নেই। তিনি বলেন- জোটবদ্ধভাবে কেউ যদি নৌকার প্রার্থী হয়ে আসেন তবে তার পক্ষে আওয়ামী লীগ কাজ করবে। এখানে কোনো ভিন্ন মত থাকবে না। তবে শমসের মবিন চৌধুরীকে নিয়ে তেমন আগ্রহী নয় সিলেট কিংবা স্থানীয় বিএনপি। স্থানীয় নেতারা শমসের মবিন চৌধুরীকে দলত্যাগী উচ্ছিষ্ট নেতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। 

জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন- বিএনপি ছাড়ার পর শমসের মবিনের অবস্থান শূন্যের কোঠায়। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে তিনি ওয়ার্ডের মেম্বারও হতে পারবেন না। মীর জাফরের মতো রাজনীতি কোনো পতিত মানুষ ছাড়া কেউ করতে পারে না বলে জানান তিনি। এদিকে তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারপারসন হওয়ার পর স্থানীয় গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার বিএনপি’র পক্ষ থেকে শমসের মবিন চৌধুরীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে এ ঘোষণার কয়েকদিনের মাথায় নিজ এলাকায় এসে প্রকাশ্যেই কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন শমসের মবিন চৌধুরী। তাকে নিয়ে স্থানীয় বিএনপি বর্তমানে নীরব ভূমিকাই পালন করছে। বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার হোসেন জানিয়েছেন- শমসের মবিন নিজ এলাকায় প্রশাসনিক শেল্টারেই যাওয়া-আসা করছেন। নতুবা কী হতো বলা মুশকিল। এলাকায় তার কোনো জনভিত্তি নেই। গত নির্বাচনে বিকল্প ধারা থেকে প্রার্থী হয়ে পরিস্থিতি খারাপ দেখে নিজেই মাঠ থেকে সরে গিয়েছিলেন। এরপর নির্বাচনেও হাতে গোনা কয়েকটি ভোট পেয়েছিলেন। তাকে নিয়ে এলাকার ভোটারের মধ্যে তেমন আগ্রহী নেই বলে মন্তব্য করেন সরওয়ার। 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status