দেশ বিদেশ
দুইশ’ কোটি টাকা পাচার
চীনা নাগরিকের অভিনব প্রতারণার ফাঁদ
স্টাফ রিপোর্টার
২৬ নভেম্বর ২০২৩, রবিবারকোনো কাজ না করেই ঘরে বসে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দিনে আয় করা যাবে আট শ’ থেকে দুই হাজার টাকা। পাওয়া যাবে মোবাইল ফোনও। জামানত ছাড়াই দেয়া হবে মোটা অঙ্কের ঋণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক বিভিন্ন চায়না অ্যাপসে এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদে ফেলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রায় দুই শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। এরপর এ টাকা পাচার করা হয় বিদেশে। মূলত এসব অ্যাপস ডাউনলোড করলেই মুহূর্তেই গ্রাহকের মোবাইলের ছবি, ভিডিও, কন্ট্রাক্ট লিস্টসহ গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য চলে যেত প্রতারক চক্রের হাতে। এরপর চক্রের সদস্যরা সেগুলো ব্যবহার করে ভুক্তভোগীর ছবি ও ভিডিও কব্জায় নিয়ে ব্ল্যাকমেইল শুরু করতো।
প্রথমে সরাসরি ভুক্তভোগীকে নানাভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে তারা। তাকে না পেলে বাবা-মাসহ পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের নাম্বারে আপত্তিকর বিভিন্ন ছবি তৈরি করে পাঠানো হতো। এভাবে প্রলোভনের ফাঁদ পেতে গত ছয় মাসে ৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থ পাচার করা হয়েছে। সেই হিসাবে দুই বছরে অন্তত দুই শ’ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করেছে চক্রটি। এমনই ২৯টি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের তথ্য পেয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
গতকাল দুপুরে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, অ্যাপসটি চীনা নাগরিকদের তৈরি। এটির সার্ভার সিঙ্গাপুরে। আর কলসেন্টার বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে রয়েছে। পাকিস্তানি নাম্বার দিয়ে বাংলাদেশিদের কল করা হয়। আর বাংলাদেশি নাম্বার ব্যবহার করে ভারতীয়দের কল করা হতো। তিনি জানান, দেশে এখন পর্যন্ত এই চক্রের হাতে অন্তত দেড় হাজার মানুষ প্রতারিত হয়েছে।
চক্রটি অল্প টাকা দিয়ে ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো। এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়। তার আপত্তিকর ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন জনকে পাঠানোর হুমকি দিতো। পাশের দেশে এই সকল অ্যাপসের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়ে ৬০ জনেরও বেশি আত্মহত্যা করেছেন। বাংলাদেশে কেউ আত্মহত্যা করেছে কিনা সেই তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন না করলেও কাজ না করে ঘরে বসে মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে টাকা আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এসএমএস পাঠাতো চক্রটি।
রাজধানীর হাতিরঝিল ও কাফরুল থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে নেমে পৃথক অভিযানে ইতিমধ্যেই এ চক্রের প্রধান চীনা নাগরিক ঝাং জি ঝাহ্যাং (৬০) সহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এই চক্রের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত রয়েছে। তারা আত্মগোপনে রয়েছে। তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।