দেশ বিদেশ
সাজিদার সংসার চলে নৌকায় মানুষ পারাপার করে
জাহিদ সুমন, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) থেকে
২১ নভেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবারজীবিকা নির্বাহ করার জন্য কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু হয় সাজিদার খেয়া পারাপার। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। কখনো কখনো নৌকায় বৈঠা রেখেই ছুটে যান বাড়িতে রান্নাসহ অন্য কাজে। নৌকায় মানুষ পারাপার করেই জীবন চলে এই নারীর।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের মাদার নদীর তীরে কালিঞ্চী গ্রামে বাড়ি সাজিদা খাতুনের (৩২)। সুন্দরবন সংলগ্ন গোলাখালী আর কালিঞ্চী গ্রাম আলাদা করেছে মাদার নদী। গোলাখালী গ্রামটি একেবারে সুন্দরবনের বুকের মধ্যে অবস্থিত। প্রায় ৯০০ বিঘা আয়তন। ৯৮টি পরিবারে লোকসংখ্যা ৮০০ জন। গ্রামে কোনো দোকানপাট কিংবা প্রতিষ্ঠান নেই। প্রায় সাড়ে আটশ’ বিঘার জমির মালিক অন্য এলাকার মানুষ। তারা এসব জমিতে মাছ চাষ করেন। ভেটখালী থেকে নদীপথে অথবা কালিঞ্চী থেকে মাদার নদী পার হয়ে গোলাখালী যেতে হয়। মাদার নদীতে খেয়া পারাপার করেন সাজিদা। প্রায় ৪ বছর ধরে তিনি এ কাজ করছেন।
খেয়া পার হওয়ার সময় কথা হয় সাজিদার সঙ্গে। তিনি জানান, এলাকায় কাজ না থাকায় ৪ বছর আগে তার স্বামী ফারুকি গাজী ভারতে গেছেন কাজের সন্ধানে। দুই মেয়ে নিয়ে মাদার নদীর চরে কালিঞ্চী গ্রামে নদীর চরে বসবাস তাদের। বড় মেয়ে ফারহানা খাতুন পড়েন কালিঞ্চী আবদুল গফফার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এইচএসসি পাস করার পর তাকে নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা করানোর ইচ্ছা তার। ছোট মেয়ে সোমা স্থানীয় আকবর আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়েন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নদীতে থাকতে হয় সাজিদাকে। স্বামী ভারতে যাওয়ার পর আর যোগাযোগ করেননি। ৪ জনের সংসার। দুই মেয়ের লেখাপড়া। সব মিলিয়ে তাদের মাসে ব্যয় হয় ৬-৭ হাজার টাকা। মানুষ পারাপারের জন্য তিনি মাসে পাঁচ হাজার করে পান। আর বাইরের মানুস পার হতে জনপ্রতি নেন পাঁচ টাকা। এতে দিনে ৩০-৬০ টাকা আয় হয়। সব মিলিয়ে দুমুঠো খেয়ে কোনো রকমে সংসার চলে তার।
কালিঞ্চী গ্রামের বাচ্চু বলেন, সাজিদার স্বামী দীর্ঘদিন ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। তারপর থেকে সাজিদার সংসার নদীতে খেয়া দিয়ে বহন করতে হয়। সাজিদা খাতুন বলেন, মানুষ ব্যবসা করতে পারলে হাতে টাকা থাকে। মানুষ তাদের এলাকায় বেড়াতে আসে। তখন নদী পার হয়ে গোলাখালী আর সুন্দরবন দেখতে এলে তার আয় বাড়ে। তখন একটু ভালো থাকতে পারেন।