শরীর ও মন
অটিজম শিশু অস্থির হলে করণীয়
ডা. এমএ হক, পিএইচডি
২০ নভেম্বর ২০২৩, সোমবারঅস্থিরতা অটিজম শিশুদের স্বাভাবিক একটি বিষয়। কখনো কখনো এই অস্থিরতা স্বাভাবিকের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। সারাক্ষণই একটা কিছু করতে হবে। কেউবা শুধু হাঁটতে থাকে, কেউবা হাত নাড়াতে থাকে, কেউ শুধু আঁকা-বুঁকি করতে থাকে, কেউ ঘরের দ্রব্যসামগ্রী জানালা দিয়ে বাইরে ফেলতে ব্যস্ত, আবার কেউ বইপত্র, খেলনা, ঘরের জিনিসপত্র সবকিছু ভেঙে ফেলতে ব্যস্ত। হরেক রকম শিশুর হরেক রকম ব্যস্ততা। এ সকল শিশুরা আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে এলে সকলেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকে। শিশু মহলেও এই অস্থির শিশুরা ত্রাস। অনেক বাবা-মা এই অস্থিরতার ব্যাপারটি লক্ষ্য করতে চান না। তাদের কাছে এটা যেন শিশুর স্বাভাবিক ব্যবহারেরই অংশ। বিষয়টি মোটেও তা নয়।
অস্থিরতা সম্পন্ন শিশু যখন স্কুলে যায়, তখন স্কুল থেকেও অভিভাবকদের নিকট অভিযোগ আসে যে, তার সন্তান অস্থির, অমনোযোগী এবং অন্য শিশুদের বিরক্ত করে এতে অন্যদের সমস্যা হচ্ছে। এই অস্থিরতা এক বিশেষ ধরনের নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার। আমরা যাকে অঃঃবহঃরড়হ উবভরপরঃ ঐুঢ়বৎ অপঃরাব উরংড়ৎফবৎ বা সংক্ষেপে অউঐউ বলি। এর লক্ষণ হচ্ছে- চঞ্চলমনা, হঠাৎ সাত-পাঁচ না ভেবে কোনো কাজ করা, ছটফট স্বভাব ও দুরন্তপনা। এরা এতই অস্থির হয় যে, পড়ালেখায় মনোসংযোগ করতে পারে না। ক্লাসে এরা ভীষণ অমনোযোগী। বাসায়ও পড়ালেখা করে না। ধৈর্যের এত অভাব যে, শান্তভাবে এরা কিছুই করতে পারে না। অনেক শিশু অকারণেই অন্যের সঙ্গে ঝগড়া বা মারামারি করে। এরা নিজেদের জিনিসপত্র সম্পর্কে উদাসীন, সহজেই ভেঙে ফেলে বা হারিয়ে ফেলে। এ সকল শিশুরা অন্যদের সামাজিক জীবন বিপর্যস্ত করে তোলে।
সমাধান: শিশুটিকে ধীরস্থির হতে সবার সাহায্য প্রয়োজন। বাবা-মা, পরিবারের লোকজন ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকার যথেষ্ট সহনশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দৈনন্দিন জীবনে শিশুটির যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। অস্থিরতা সম্পন্ন শিশুর জন্য তার বাবা-মায়ের পারিবারিক ও সামাজিক জীবন বিপর্যস্ত হতে পারে। কিন্তু তার জন্য তাকে মারধর বা রাগারাগী করা যাবে না। অস্থিরতা সম্পন্ন শিশুর বাবা-মায়েরা ঘাবড়ে যাবেন না। আপনার শিশুর ব্যাপারে সতর্ক হোন ও সঠিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করুন এবং তাদের যত্ন নিন।
সবশেষে: অস্থিরতাসম্পন্ন শিশুর এবং শিশুর বাবা-মায়ের নিকট থেকে অস্থিরতার লক্ষণসমূহ ও পারিবারিক রোগ-ব্যাধির ইতিহাস এবং পিতা-মাতা উভয় পরিবারের জেনেটিক তথ্য সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট করলে এর সমাধান সম্ভব। আমরা আমাদের চিকিৎসায় এভাবেই সফলতা পাচ্ছি।
লেখক: পিএইচডি (স্বাস্থ্য), এমফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। চিকিৎসক ও গবেষক (ক্রনিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার)।
চেম্বার: ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রিন রোড, পান্থপথ, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৭১২-৪৫০৩১০