শরীর ও মন
শিশুদের শীতকালীন সমস্যা
ডা. সৈয়দা নাফিসা ইসলাম
১৭ নভেম্বর ২০২৩, শুক্রবারঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা শীতকালে সবারই কমবেশি হয়ে থাকে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার এবং একইসঙ্গে সংক্রমণের তীব্রতাও বেশি হয়। আর অন্য কোনো কারণে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা থাকলে এসব সমস্যা আরও বেশি হবে। সাধারণত ঠাণ্ডা লাগা, ফ্লু, এলার্জি, হাঁপানি সব অসুখের শুরু মোটামুটি একই রকম লক্ষণ দিয়ে। তাই আলাদা করার চিহ্নগুলো জানা থাকলে চিকিৎসা নেয়া সহজ হবে।
সাধারণ ঠাণ্ডা (Common Cold)
এ অবস্থায় আক্রান্ত শিশুর নাক দিয়ে অনর্গল পানি পড়া, শরীরের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পাওয়া বা হাল্কা জ্বরজ্বর ভাব, অরুচি বা খেতে অনিচ্ছা এবং সামান্য গলাব্যথা থাকতে পারে। নাক বন্ধ থাকলে শিশুর নাকে ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত লবণ-পানির ড্রপ (নরসল ড্রপ) ব্যবহার নিরাপদ। বাল্বসাকার বা পাম্প দিয়ে নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। মধু মিশ্রিত কুসুম গরম পানি ও স্যুপ খাওয়ালে কিছুটা উপশম হবে।
ঠাণ্ডার এলার্জি (Cold Allergy)
বেশি সংবেদনশীল শিশুদের সাধারণত শীত এলেই বারবার ঠাণ্ডার উপসর্গ দেখা দেয় অথবা প্রায় সম্পূর্ণ শীতকালজুড়েই ঠাণ্ডা লেগে থাকে। যাকে কোল্ড এলার্জি বা শীতকালীন সংবেদনশীলতা বলা যেতে পারে। অনেক বয়স্ক ব্যক্তিও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন বা শীতজুড়ে অসুস্থ থাকেন। এর বেশির ভাগ হয়ে থাকে কোল্ড এলার্জির কারণে।
শীতকালে আর্দ্রতা কম থাকে, আবহাওয়া শুষ্ক ও বাতাস ঠাণ্ডা থাকে। এসবই সংবেদনশীলতার উদ্রেক করে তাই ঠাণ্ডা লেগে যায়। এ কারণে হাঁচি, কাশি, সর্দি ইত্যাদি দেখা দেয়। প্রচণ্ড শীতে ঠাণ্ডা বাতাস অনেকের জন্য এলার্জেন হিসেবে কাজ করে এবং এ কারণে সৃষ্ট উপসর্গকে কোল্ড এলার্জি বলা হয়।
তাই এসব পরিহার করে চলা উচিত। ঠাণ্ডা বাতাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মাস্ক বা মুখবন্ধনী ব্যবহার করা যেতে পারে, যেটা বর্তমানে করোনার জন্য সবাই ব্যবহার করছি। সালবিউটামল ইনহেলার নেয়া যেতে পারে। কারণ এ ওষুধ শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিরসনে কার্যকর। দীর্ঘমেয়াদি ভালো থাকার জন্য মন্টিলুকাস ট্যাবলেট খেতে হয়।
অ্যালার্জিক রাইনাটিস
মৌসুমি রোগ। সাধারণত ঠাণ্ডা আলাদা করা কঠিন। তবে এলার্জি রাইনাটিস শীত ছাড়াও অন্য মৌসুম অর্থাৎ বসন্ত, গ্রীষ্ম এবং শরতের শুরুতে হতে পারে। নাক বন্ধ অনুভূতি বেশি মাত্রায় হয়। সহজে কমতে চায় না। সাধারণত জ্বর বা কাশি থাকে না। শিশুকে ডাক্তার দেখানো জরুরি। এ রোগের সঙ্গে চোখ, মুখ, ত্বকে চুলকানি, হাঁচি পড়া ক্লান্ত ভাব হয়।
ব্রংকিওলাইটিস
শীতকালে বেশি হয়। ২ মাস থেকে ২ বছরের বেশি হয়ে থাকে। সর্দি দিয়ে শুরু হয়ে কাশি হয়। প্রচণ্ড কাশি সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। তবে এসব শিশুকে দেখতে সুস্থ মনে হয়। শ্বাসকষ্ট শুরু হলেই দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।
সাধারণ চিকিৎসা
ষ নাক-গলা পরিষ্কার রাখুন, (বাল্বসাকার বাল্ব সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন)।
ষ জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল ওষুধ খাওয়াতে পারেন।
ষ পর্যাপ্ত পানি ও খাদ্য খাওয়ান।
ষ শ্বাসকষ্টের জন্য নেবুলাইজার (ইপ্রাটোপিয়াম, সালববটালিন) অথবা ব্রঙ্কোডাইলেটর সিরাপ (ব্রডিল বা সালমলিন সিরাপ) খাওয়ানো দরকার।
মনে রাখবেন, এন্টিবায়োটিকের কোনোই প্রয়োজন নাই।
প্রতিরোধ ও সতর্কতা
শিশুকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।
শিশুকে স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে রাখা যাবে না। উষ্ণ আবহাওয়ায় স্বাভাবিক আলো-বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে রাখতে হবে।
শীতের তীব্রতা অনুযায়ী হালকা ও নরম কাপড় পরিধান করাতে হবে।
ধুলা-বালি, ধোঁয়া থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে, বড়দের শিশুর ঘরে বা সামনে ধূমপান করা যাবে না।
অবশ্যই মনে রাখতে হবে চিকিৎসায় অসুস্থতা না কমলে কিংবা বেশি শ্বাসকষ্ট অথবা শুধুমাত্র দেখে যদি মনে হয় বেশি অসুস্থ তাহলে দেরি না করে শিশু ডাক্তার দেখান।
লেখক: কনসালট্যান্ট, শিশু বিভাগ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চেম্বার: (১) ডা. নাফিসা’স চাইল্ড কেয়ার, শাহ্ মখদুম, রাজশাহী। (২) আমানা হাসপাতাল, ঝাউতলী মোড়, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী। মোবাইল: ০১৯৮৪-১৪৯০৪৯
মন্তব্য করুন
শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন
শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত
৯৫ ভাগ কিশোরীকে টিকা দেয়ার টার্গেট/ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকা পেল ১১ শিক্ষার্থী

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]