ঢাকা, ২১ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

মণ্ডপে মণ্ডপে ব্যস্ততা চলছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি

সুদীপ অধিকারী
১৮ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার
mzamin

আর মাত্র দুই দিন। আসছে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসব। দুষ্টের বিনাশ ও সৃষ্টের পালন করতে বছর ঘুরে আবারো দুর্গতিনাশিনী দশভুজা ‘দুর্গা’ আসছেন। আর দুর্গার এই আগমনকে ঘিরে মন্দিরে মন্দিরে ব্যস্ততা বেড়েছে। বাঁশের কাঠামোর ওপর বিচালি দিয়ে তৈরি করা অবয়বকে মাটি দিয়ে পূর্ণতা দেয়া হয়েছে। মৃৎশিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ রূপ নিয়েছে দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, সিংহসহ মহিষাসুরবধের কাহিনী। শুক্রবার ষষ্ঠী তিথিতে বিল্ব বৃক্ষ বা বেল গাছের পূজার মাধ্যমে আবাহন করা হবে দেবী দুর্গাকে। সেই বৃক্ষের শাখা প্রতিষ্ঠা করা হবে দেবীর ঘটে। ঢাকঢোল আর কাঁসর বাদ্যে দেবীর বোধন পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। 

সরজমিন রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও আড়ম্বরের সঙ্গে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিমা তৈরির কাজও শেষের দিকে।

বিজ্ঞাপন
এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ। বাহারি সব রঙ আর কাঠ-কাপড়ের ফ্রেমের কারুকাজ দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুরো ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণ। রঙ-বেরঙের আলোর ছটা সৌন্দর্যের মাত্রা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বাঁশ বেঁধে আগত নারী-পুরুষ দর্শনার্থীদের জন্য পৃথক স্থান তৈরি করা হয়েছে। মন্দিরের  নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। পূজা-সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় মন্দিরের পূজা ও সারা বছর প্রতিমা রেখে দেয়ায়, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিমা তৈরিতে অন্য মণ্ডপের তুলনায় একটু বাড়তি নজর দেয়া হয়। আর হাতে সময় না থাকায় কিছুটা নির্ঘুম রাত পার করছেন তারা। 

চাউর আছে ঢাকার জমকালো দুর্গাপূজার মধ্যে বনানী মাঠের পূজা অন্যতম। তাই গুলশান-বনানী পূজা উদ্‌যাপন ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এখানকার প্যান্ডেল থেকে শুরু করে প্রতিমা তৈরি, সাজসজ্জা ও আলোক ছটাতে বিশেষ নজর দেয়া হয়। এবারো এখানে  ব্যতিক্রম আয়োজন করা হয়েছে। উপকরণ বাঁশ, কাঠ, পাটি, মাটির কলস, পাটের বস্তাসহ আমাদের দেশীয় পণ্যের ঐতিহ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুরো পূজা মণ্ডপটিকে। মণ্ডপটি তৈরিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিল্পী জয় প্রকাশ জানান, গুলশান-বনানী পূজা উদ্‌?যাপন ফাউন্ডেশনের মণ্ডপে আমি কাজ করছি কনসেপ্ট আর্টিস্ট হিসেবে। আমি মূলত একটা ভাবনা নিয়ে এখানে কাজ করছি। সেই ভাবনা হলো- আমাদের দেশীয় যেই মেটিরিয়ালসগুলো যেমন-বাঁশ, শীতল পাটি, খেঁজুরের পাটি এসব একত্রিত করে বাংলা মায়ের জন্য একটা সোনার মন্দির তৈরির চেষ্টা করেছি। মূলত ঢাকার মতো একটা কর্পোরেট এলাকায় আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। পূজার দিন ঘনিয়ে আসায় দম ফেলানোর সময় পাওয়া যাচ্ছে না। 

রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণেও দুর্গাপূজার জমকালো আয়োজন করা হয়েছে। হলদে বর্ণের বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পূজার মূল মণ্ডপ। বিভিন্ন কারুকাজ ও নানা রঙে ফুটিয়ে তেলা হয়েছে প্রতিমাগুলোকে। দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিকের মোহনীয় রূপ দূরের রাস্তা থেকে মানুষের নজর কারছে। পূজা প্রাঙ্গণ ও রাস্তার দু’ধারের পুরোটাই রঙিন আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। এর মাঝে মাঝে বিভিন্ন আকারের ফ্রেম এই সৌন্দর্যকে দিয়েছে অন্য একমাত্রা। এখানেও নারী-পুরুষের মণ্ডপে প্রবেশের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও রমনা কালী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ মন্দির, ধানমণ্ডির রায়বাজার নিমতলা মন্দির, আখড়া মন্দির, দুর্গা মন্দির, স্বামীবাগের লোকনাথ মন্দির, রমনা কালী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, শাখারী বাজার, বনশ্রী, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন স্থানে শারদীয়া দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এসব মণ্ডপে পূজার পাঁচদিনই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌?যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার জানান, সারা দেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ৩২ হাজার ৪০৭টি। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, এ বছর রাজধানীতে ২৪৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। আমাদের পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। ২৪শে অক্টোবর দশমী তিথি শেষে দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে দেবীকে বিদায় জানানো হবে।    

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status