ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

কর্মশালায় সিইসি

এক শতাংশ ভোট পড়লেই নির্বাচন আইনগতভাবে বৈধ

স্টাফ রিপোর্টার
৫ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবার

এক শতাংশ ভোট পড়লেই নির্বাচন আইনগতভাবে সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল রাজধানীর নির্বাচন ভবনে ‘অবাধ ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা’- শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ মন্তব্য করেন। কর্মশালায় সাবেক দুই নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের দেশে যদি ১ শতাংশ ভোট পড়ে, ৯৯ শতাংশ না পড়ে লিগ্যালি দ্যাট ইজ রাইট (আইনগতভাবে এটা বৈধ)।  বৈধতার প্রশ্ন উঠতে পারে।  বাট দ্য কোয়েশ্চেইন অব লিগ্যালিটি উইল নট অ্যারাইজ। সো দেয়ার ইজ এ কনফ্লিক্ট বিটুইন লিগ্যালিটি অ্যান্ড লেজিটিমেসি। আমরা লেজিটিমেসি নিয়ে মাথা ঘামাবো না। আমরা দেখবো ভোটটা অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ হয়েছে কি না। এক শতাংশ লোক মাত্র ভোট দিয়েছে। তারপরও যদি দেখি ভোটার যারা এসেছিলেন, তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হয়নি, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে এবং তারা নির্বিঘ্নে, স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আইনগত দিক থেকে লিগ্যালিটি আর লেজিটিমেসি। লিগ্যালি একটা জিনিস হলে লিগ্যালি ভ্যালিড। বাট লেজিটিমেসি (বৈধতা) একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। যেখানে পারসেপশন তৈরি হয়। আমি ওই বিরোধে যেতে চাচ্ছি না। নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করবে একটি ল’ফুল নির্বাচন করতে। আর রাজনৈতিক সমাজ লেজিটিমেসি নিয়ে ফাইট করবে। নির্বাচন কমিশন এই বিষয় নিয়ে ফাইট করবে না।  পোলিং এজেন্ট প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আপনারা প্রায় বলেন- এজেন্টদের নামতে দেবে না, কারণ পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে ফেলবে। তাদেরকে শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ মারধর করতে পারে, নানা কারণ থাকতে পারে।  অনেক সময় দেখি ১০০ জনের জায়গায় ১৫০ জন পোলিং এজেন্টের নাম দেয়। পরে যদি আমরা দেখি ভোটের আগে ১৫০ জন গ্রেপ্তার হয়ে গেছেন। তখন আমাদের একটা নেগেটিভ ইমপ্রেশন নিতে হবে কেন তারা এক মাস আগে গ্রেপ্তার হলেন না, কেন তারা দুই মাস আগে গ্রেপ্তার হলেন না। ভোটের আগের দিন সবাই উধাও হয়ে গেলেন কেন? তিনি বলেন, আমরা সৎভাবে ভোট করতে চাচ্ছি। কোনো দলের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করতে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। সেজন্য একটা তালিকা যদি আগে দেয়া হয়, এরপরে থেকে যদি গ্রেপ্তার হতে থাকে। দেখা গেল ১০ জন বাকি আছে ১৪০ জনই গ্রেপ্তার হয়ে গেলেন। একটা বিষয় মিন করে যে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিশেষ একটা উদ্দেশ্যে। আমরা সরকারকে এটা জানাবো যদি তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে হয় ছয় মাস আগেই সবাইকে গ্রেপ্তার করে ফেলেন। আর যদি না করেন তবে নির্বাচনের পরে গ্রেপ্তার করে ফেলেন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ঠিক হবে না। এতে আমরা কলঙ্কিত হবো বলে মনে করি। পোলিং এজেন্ট না থাকলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একজন শক্তিশালী প্রার্থী দুর্বল পোলিং এজেন্টদের বের করে দেন। সিইসি আরও বলেন, ব্যাপক ভোটার যদি এসে ভোটদান করেন। কে এলো কে এলো না সেটা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাবো না। আমার জেনুইন টার্নআউট হয়েছে ৭০ শতাংশ। তারপরে যদি কনটেস্টেটেড হয়, তাহলে কনটেস্টের ক্ষেত্রে আমাদের অল্পকিছু রেফারির ভূমিকা থাকবে। কনটেস্টটা হবে পার্টিদের মধ্যে। ওরাই ওদের অবস্থান সুদৃঢ় রাখবে। সেই ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাস করি, ইফেকটিভ কনটেস্ট হলে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভারসাম্য সৃষ্টি হয়ে যায়। আমাদের দায়িত্বটা সেই ক্ষেত্রে অনেকটা কমে আসে। সেই জন্য আমরা ইনক্লুসিভ নির্বাচন লাইক করি, এটা আমাদের দায়িত্ব না কাউকে নিয়ে আসা। তবুও আমরা আমাদের নৈতিক অবস্থান থেকে অনেকবার দাওয়াত করেছি আসুন, আমাদের সঙ্গে চা খান। ডিও লেটার পর্যন্ত লিখেছি, এর বেশি আমরা আর কিছু করতে পারছি না।
তিনি বলেন, দেখা যায় বিদেশি কিছু লোক এসে আমাদের দেশে কথা বলেন। অথচ আমরা আমেরিকায় গিয়ে ওইভাবে কথা বলতে পারছি না। এর কারণ হতে পারে আমেরিকা বাংলাদেশের চেয়ে শক্তিশালী, এটা হতেও পারে, নাও হতে পারে, আমি ঠিক জানি না। তিনি বলেন, এই অবস্থাটা আমরাই সৃষ্টি করে দিয়েছি। এটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। এটার জন্য আমি গর্ববোধ করি না। তিনি আরও বলেন, সুশীল সমাজও রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। আমরা এমন সুশীল সমাজ এখনো তৈরি করতে পারিনি যারা সর্বজন শ্রদ্ধেও, যারা নির্মোহ থেকে পক্ষপাতিত্ববিহীনভাবে জাতিকে গাইড করতে পারে। সেই সুশীল সমাজের জন্য আমাদের প্রত্যাশা থাকবে। বয়স হয়েছে, হয়ত পরবর্তী প্রজন্ম ওই ধরনের সুশীল সমাজ দেখবে।  সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, দেশে প্রধান দু’টি দল দুই মেরুতে। এদের এক হতে হবে, ভোট সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন সুন্দর করার মূল লক্ষ্য নিবন্ধিত দলকে এক করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তভাবে কাজ করতে হবে। মানুষকে বিশ্বাস করাতে হবে যে, দুই দল না এলেও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে। তিনি বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচনে কারচুপি হয়। ব্যালট বাক্স ছিনতাই হতেও আগে দেখা গেছে। 
নির্বাচন কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি বলেন, ভোট অবাধ করতে সবাইকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভালো ভূমিকা নিতে হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় বাধা দেয়া হয়, যাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভালো ভূমিকা পালন করতে হবে। পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সবকিছু নির্ভর করবে নির্বাচনী পরিবেশের ওপর।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূয়সী প্রশংসা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি (ভিসি) অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্তমান নির্বাচন কমিশন বেস্ট ও সেরা। এ কমিশনের আওতায় ৯০০ টির বেশি নির্বাচন হয়েছে। সব নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি ও বদিউল মজুমদারের মধ্যে পার্থক্য নেই। বদিউল আলম মজুমদার বিএনপি’র সুরে কথা বলে। বিএনপি ও জামায়াত গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের চাপ আসবে না। এ সময় নির্বাচন ভালো হয়েছে। কিছুটা ব্যত্যয় হলে বিএনপি-জামায়াতের কারণে হয়েছে। নির্বাচনে অংশ ও বর্জন তাদের অধিকার। কিন্তু বাধা দেয়ার অধিকার তাদের নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সব জায়গায় তিন রকম মডেল আলোচনা হচ্ছে। একটা মডেল হচ্ছে একতরফা নির্বাচনের দিকে বর্তমান সরকার এগোচ্ছে। বিএনপি আসলে আসবে, না এলে না আসবে। কতগুলো জোট বা ছোট ছোট দল গঠন করে একটু ভোট বাড়িয়ে তুলনামূলক অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা। দ্বিতীয় মডেল হচ্ছে, এভাবে যদি নির্বাচন পার করা হয়, বর্তমান সরকার পার হয়ে যাবে কিন্তু বেশিদিন টিকা যাবে না। দুই মাস পর আবার নির্বাচন দিতে হবে যেটা বিএনপিকে একবার দিতে হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। তৃতীয় মডেল হচ্ছে, বিএনপি’র জামায়াত-হেফাজত এখনো তারা আন্দোলনে সর্বশক্তি ব্যয় করে নাই। তারা হয়তো সামনে নির্বাচনের আগে সমস্ত শক্তি নিয়ে মাঠে নামবে। এই সরকারকে পতন ঘটাবে। এবং একটা ওয়ান- ইলেভেনর মতো একটা সিভিল মিলিটারি গভর্মেন্ট আসবে। তখন নির্বাচন হবে দুই বছর পরে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে পোলিং এজেন্টের ভূমিকা আরেক রকম হবে। তাই মনে হয় পোলিং এজেন্ট নিয়ে আলোচনা সময়োপযোগী এজেন্ডা এখন না। আমরা বলতে চাই, আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হতে হবে। অবশ্যই সেটা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এর একটু ছাড় দিলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status