শরীর ও মন
শ্বেতি রোগ ও সমাধান
অধ্যাপক ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
৫ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবারশরীরের ত্বকের রং ধরে রাখে ত্বকে উপস্থিত মেলানিন নামক রঞ্জক। যা তৈরি হয় মেলানোসাইট নামক কোষ দ্বারা। এই কোষগুলো যখন কোনো কারণে এই রঞ্জক তৈরি করতে পারে না বা করে না তখন ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় সাদা সাদা দাগ বা শ্বেতির উৎপত্তি দেখা দেয়। জরিপে প্রকাশ সারা বিশ্বে-০.১ থেকে ২% লোক এই রোগে ভোগেন। যদি কারও শ্বেতি দেখা দেয় আর শুরুতে চিকিৎসা না করালে এই দাগগুলো ধীরে ধীরে ত্বকে বাড়তে থাকে। শ্বেতি রোগের অনেক ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। এর মধ্যে ওষুধ খাওয়া ও মলম লাগানো এক ধরনের চিকিৎসা। ফটো থেরাপি, এক্সাইমার লেজার ও সার্জারিও করা হয়। এক একটি রোগীর ক্ষেত্রে একেক ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা। তবে কোন চিকিৎসায় রোগী ভালো হবে সেটি বুঝে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
চিকিৎসাসমূহ
শ্বেতির অত্যাধুনিক চিকিৎসা আরম্ভ হওয়ার আগে যে সার্জিক্যাল চিকিৎসা করা হতো তা হলো- স্কিন গ্রাফটিং: সুস্থ জায়গার চামড়া নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় একটু ক্ষত করে বসানো। সাকশন ব্লিস্টার গ্রাফটিং: সুস্থ জায়গার চামড়ায় কৃত্রিমভাবে ফোস্কা বানিয়ে সেখান থেকে ওই ফোস্কার উপরের চামড়া কেটে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় বসানো। মিনি/পাঞ্চ গ্রাফটিং: ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় ছোট ছোট ফুটো করে ৩ মি.মি থেকে ৪ মি.মি দূরত্বে গ্রাফটিং করা।
প্রচলিত চিকিৎসা
এই চিকিৎসা দু’রকমের হয়-১.কালচার মেলানোসাইট ট্রান্সপ্লানটেশন ও ২. নন কালচার মেলানোসাইট ট্রান্সপ্লানটেশন। এই দু’টির মধ্যে সবচেয়ে ভালো ও জনপ্রিয় চিকিৎসা হলো নন কালচার মেলানোসাইট ট্রান্সপ্লানটেশন।
নন মেলানোসাইট ট্রান্সপ্লানটেশন
এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর ১০ সে.মি স্কোয়ার চামড়া থেকে ১০০ সে.মি স্কোয়ারের ক্ষেত্রফলের চিকিৎসা সম্ভব এবং সেটাও কিন্তু মাত্র একটা সিটিংয়েই (১-৩ ঘণ্টায়) করে ফেলা যায়।
কিন্তু শর্ত একটাই- শ্বেতি যেন গত এক বছরে একই থাকে, কোনোভাবে বাড়লে এই চিকিৎসা করা যাবে না। যদিও এই শর্ত আগে যে সার্জিক্যাল চিকিৎসাগুলো ছিল সেক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে শ্বেতি একবার শুরু হলে সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়তে থাকে। এই স্টেবেল অবস্থায় আনার জন্য কিছু ওষুধ দেয়া হয় যেগুলো হলো- ইমিউনো-সাবপ্রেসেন্ট।
নতুন চিকিৎসার সুবিধাসমূহ
* একটি ছোট জায়গা (১০ সে.মি স্কোয়ার) চামড়া থেকে লাখ লাখ মেলানোসাইট নিয়ে অনেকটা বড় জায়গা (১০০ সে.মি স্কোয়ার) চিকিৎসা করা যায়।
* বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এক সিটিংয়ে ১-৩ ঘণ্টার মধ্যে পুরো চিকিৎসা করে ফেলা সম্ভব।
* ত্বকের সুস্থ স্বাভাবিক রং এবং গঠনের মিল এই চিকিৎসা করে সবচেয়ে বেশি ফিরে পাওয়া সম্ভব।
* বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে অপারেশন করা হয়।
* আলাদা করে কোনো কালচার ল্যাবরেটরি দরকার পড়ে না (যে কারণে খরচ কম), এবং এই চিকিৎসার ফলাফল অনেক ভালো।
* ৯০-৯৪% ক্ষেত্রে রোগ সম্পূর্ণভাবে নিরাময় হয়ে যায়।
* বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এক বছরের মধ্যে পুরোপুরি স্বাভাবিক ত্বক ফিরে পাওয়া যায়।
২টি প্রশ্ন প্রায় লোকেই করে থাকে আর সেটি হলো শ্বেতি কতো দিনে ভালো হয় এবং এর চিকিৎসা কতো দিন পর্যন্ত চলে। কারও কারও ক্ষেত্রে তিন থেকে চার বছরও লাগতে পারে। এই ক্ষেত্রে রোগীকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। যেসব রোগীরা ধৈর্য ধরে থাকে এবং সুচিকিৎসায় বর্তমানে শ্বেতি রোগের ভালো ফলাফল পায়। তাই শ্বেতি রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
লেখক: চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ ও চিফ কনসালট্যান্ট, কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার। যোগাযোগ- ০১৭১১৪৪০৫৫৮