বাংলারজমিন
বন্ধের দাবি এলাকাবাসীর
শ্রীমঙ্গলে হস্ত কুটিরশিল্প ও বাণিজ্যমেলায় হস্তশিল্প নেই
এম ইদ্রিস আলী, শ্রীমঙ্গল থেকে
৪ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার
শ্রীমঙ্গলে হস্ত কুটিরশিল্প ও বাণিজ্যমেলার নামে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। হস্ত কুটিরশিল্প মেলার নাম ভাঙিয়ে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে একটি চক্র দর্শনার্থীদের নানান বিনোদনের পসরা বসিয়ে এ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে লুটেপুটে নিচ্ছে। সংঘবদ্ধচক্রটি বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলাসহ বিভিন্ন রাইডের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্কের প্রবেশ মূল্য দিয়ে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করে মেলার অন্যতম আয়ের খাত তৈরি করেছে। অন্যদিকে হস্ত কুটিরশিল্প মেলার আড়ালে শিশুদের জন্য নানান খেলনার দোকান, ক্রোকারিজ, কসমেটিক্স, প্রসাধনী, জুতা, কাপড়-চোপড়, সার্ট প্যান্ট, কোটের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মোট অঙ্কের সেলামি দিয়ে মেলায় বসানো হয়েছে। ফলে শহরের ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায় লোকসানের শঙ্কায় অবিলম্বে এ মেলা বন্ধের দাবিতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। এ মেলা অবিলম্বে বন্ধের জন্য স্মারকলিপিও দিয়েছে প্রশাসনের কাছে। ব্যবসায়ীরা দ্বারস্থ হচ্ছেন স্থানীয় এমপি, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কাছে। তাদের দাবি যদি এ মেলায় হস্ত কুটিরশিল্পের তৈরির পণ্য বিক্রি করা হতো তাহলে ব্যবসায়ী মহলের কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু এ বাণিজ্যমেলার আড়ালে এ মেলায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা নানান ধরনের খেলনা, ক্রোকারিজ, কসমেটিক্স, জুতা, কাপড়-চোপড়ের দোকান বসিয়ে শহরের স্থায়ী ব্যবসায়ীদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর শহরের ভানুগাছ রোডস্থ রেলওয়ে মাঠে এ মেলা আয়োজন করেছে ‘মা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো উদ্বোধন না করা হলেও গত এক সপ্তাহধরে পুরোদমে এ মেলা চলছে। মেলার ভেতরে একটি ব্যানার টাঙ্গানো রয়েছে। গত সোমবার বিকাল ৩টায় এ মেলায় প্রবেশ করে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা অর্ধশতাধিক স্টলে নানা বয়সীদের গেঞ্জি, কাপড়-চোপড়, ত্রিপিস, সার্ট, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের কাপড়, জুতা, কসমেটিক্স, বাচ্চাদের নানা খেলনা, প্রসাধনী, স্যুট কোট, ক্রোকারিজসহ নানা প্রকারের খাবারের দোকানসহ সবধরনের পণ্যের দোকান নিয়ে বসেছেন। তবে যে উদ্দেশ্যে মেলার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে, পুরো মেলা ঘুরে হস্ত কুটিরশিল্পের কোনো স্টল বা দোকানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ শিশু, তরুণদের আকৃষ্ট করতে বা যেকোনো বয়সী দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, ঘূর্ণায়মান চড়কিসহ বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে এ মেলায়। মেলা প্রাঙ্গণের মূল ফটকের পাশেই রয়েছে, মনোরম ফোয়ারা। মেলার মধ্যস্থলে আয়োজক সংগঠনের একটি কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য মেলার ভেতরে টিকিটের হার লিখে সাইবোর্ড টাঙ্গানো রয়েছে। যেমন- নাগরদোলা টিকিট কাউন্টারে লিখা রয়েছে- নাগরদোলায় প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা, মেডি ঘোড়া প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা, নৌকা ভ্রমণ, সুপার চেয়ার, মিনি রেলগাড়ি প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা। এ ছাড়া মেলায় ওয়াটার বল তৈরি করা হয়েছে, এর প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করে টিকিট কাউন্টার খোলা হয়েছে। স্লিপার ও জাম্পিং প্রবেশ মূল্য জন প্রতি ১০ মিনিট ১০০ টাকা ও ওয়াটার বোট প্রবেশ মূল্য ৫ মিনিট ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস টিকিট কাউন্টার ট্রেনের প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা আর নৌকা প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা লিখা রয়েছে।
আর মেলার স্টলের বাইরে বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য ৩০ থেকে ৫০ টাকার টিকিটে ভূতের বাড়ি নামে একটি ঘর বানানো হয়েছে। ভূতের বিনোদন দেখতে এটিতে টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। মেলাতে বিনোদনের জন্য ৯টি ইভেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। যার সবকটিতেই নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা গুণতে হয়। প্রবেশ পথে মেলায় ঢুকতে একেকজনকে ২০ টাকায় টিকিট কিনে ঢুকতে হয়। তবে মেলা আয়োজকরা শহরে মাইকিং করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে বলেছেন যারা টিকিট কিনে মেলায় প্রবেশ করবে, তাদের জন্য রয়েছে, লটারির মাধ্যমে আকর্ষণীয় পুরস্কার। সে লক্ষ্যে কেনা এ টিকিটের একটি অংশ মেলায় রাখা টিনের তৈরি একটি ড্রামের বাক্সে রাখারও ব্যবস্থা রয়েছে। বলা হচ্ছে, মেলায় বিক্রীত টিকিটে লটারির মাধ্যমে আকর্ষণীয় পুরস্কার দেয়া হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলে। এদিকে মেলা অবিলম্বে বন্ধের দাবিতে প্রশাসনের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে শ্রীমঙ্গল শহরের বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতি। সংগঠনটির আহ্বায়ক ব্যবসায়ী ফজলুর রহমানের স্বাক্ষরিত ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, হস্ত ও কুটিরশিল্পের নামে বাণিজ্যমেলায় হস্ত কুটিরশিল্পের নামে একটি দোকানও নেই। গত ২৮শে সেপ্টেম্বর দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে ইউএনও বরাবরে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এর অনুলিপি দেয়া হয়েছে বিভিন্ন স্থানে।
স্থানীয় এমপি ড. উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদের বাসভবনে গিয়ে ব্যবসায়ী সমিতি ও বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ মেলা বন্ধে বিস্তারিত আলাপ করেছেন। তিনি তাৎক্ষণিক ইউএনও ও থানার ওসিকে ডেকে বিষয়টি সরজমিন তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
মেলার আয়োজক জাবেদ হোসেন লিটন মুঠোফোনে বলেন, মেলার পারমিশনে যে যে শর্ত দেয়া হয়েছে, তার সবগুলো আমরা পালন করছি। ভ্যাট, ট্যাক্স, এলআর ফান্ডসহ সবকিছু দিয়ে একমাসের জন্য আসছি।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম বলেন, আসলে ওরা মেলার অনুমতির জন্য আমাদের এখানে এপ্লিকেশন করার পর প্রতিবেদনের জন্য আমরা চেম্বার অব কমার্সে পাঠিয়েছি। তারপর পুলিশ সুপারের দপ্তরে পাঠিয়েছি। তখন ওখান থেকে দিয়েছে যে, করা যেতে পারে। তারপর উপজেলা থেকে আমরা রিপোর্ট নিয়েছি। তার পরিপ্রেক্ষিতে সবাই যখন বলছে, আমরা মেলার পারমিশন দিয়েছি। এখন স্থানীয় ব্যবসায়ীগণ যে অভিযোগ দিয়েছেন, তা আমি এখনো পাইনি। পেলে দেখবো।