দেশ বিদেশ
সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ড শ্রমিকের মরদেহ
গুমের অভিযোগ, ওসিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৩ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবারচট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মো. রাসেল নামের এক জাহাজ কাটার শ্রমিককে হত্যার পর মরদেহ গুমের অভিযোগে সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ, তদন্ত কর্মকর্তা মুকিব হাসানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। রোববার দুপুরে নিহত শ্রমিকের পিতা মো. ইউনুস মিয়া বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হকের আদালতে মামলাটি করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে থানায় এ সংক্রান্ত কোনো মামলা হয়ে থাকলে সেটির প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।
মামলায় সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ, তদন্ত কর্মকর্তা মুকিব হাসানসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন- সাউদার্ন সালভেজ ও এমভি হানিমধুর স্বত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান, সাউদার্ন সালভেজের ব্যবস্থাপক মুছাদ্দেক মিয়া, ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ ও এনামুল। গত ২৬শে আগস্ট সকালে সীতাকুণ্ডের মাদামবিবির হাট নেভী গেটের দিদারের কলোনির বাসা থেকে মো. রাসেল পরিত্যক্ত জাহাজ কাটার কাজে যান। ওই কাজের দায়িত্ব নেয়া ফারুক, হেলপার মহিউদ্দীন ও এনামুল নামের তিন ব্যক্তি রাসেলকে এই কাজে নিয়ে যান। পরদিন রাত পর্যন্ত রাসেল ফিরে না আসলে পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজে নামেন। রাসেলের বাবা ইউনুস মিয়া জানতে পারেন মামলার প্রধান আসামি আসাদুজ্জামান জাহাজের লোহা কাটার কাজ নিয়ে তা বিভিন্ন কাটারম্যান শ্রমিক দিয়ে বাস্তবায়ন করতেন। তারই মালিকানাধীন পুরাতন স্ক্র্যাপ জাহাজে রাসেল কাটারম্যান হিসেবে কাজে গিয়েছিলেন। আর দুই নম্বর আসামি মুছাদ্দেক ছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে ইউনুস মিয়া আসাদুজ্জামান ও মুছাদ্দেকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, তাদের স্পিডবোট নষ্ট থাকায় শ্রমিকদের পানিতে নেমে সাঁতার কেটে যে ফেরিতে খাবারের ব্যবস্থা আছে ওই জাহাজে যেতে বললে সবাই সেখানে গেলেও রাসেল যাননি। এ নিয়ে রাসেলের সঙ্গে মুছাদ্দেক ও অন্য আসামি ফারুক আহমেদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে রাসেলের সহকারী মহিউদ্দিনকেও জোর করে সাঁতরিয়ে ওই ফেরিতে পাঠানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই হারিয়ে যান রাসেল।
এজাহারে বলা হয়, মহিউদ্দিন যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ওই জাহাজে থাকা তিন শ্রমিক রনি, শাহজাহান ও শিপন চিৎকার শুরু করে জানান, রাসেল পানিতে পড়ে গেছে। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও রাসেলকে পাওয়া যায়নি। রাসেলকে খুঁজে পাওয়া না গেলে তার সহকারী মহিউদ্দিনকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে প্রতিষ্ঠানের অফিসে নিয়ে যান মুছাদ্দেক। দুইদিন তাকে সেখান থেকে বাসায় যেতে দেয়া হয়নি। এজাহার সূত্রে জানা যায়, রাসেলের কোনো সন্ধান না পেয়ে ২৭শে আগস্ট রাত ১২টায় সীতাকুণ্ড থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে যান ইউনুস মিয়া। কিন্তু থানার ওসি ও সেকেন্ড অফিসার রাত ৪টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখেও অভিযোগ নেননি। পরদিন রাত ১০টায় পুনরায় থানায় গেলেও জিডি না নিয়ে উল্টো তদন্ত কর্মকর্তা মুকিব হাসান ইউনুস মিয়াকে হুমকি দেন।
জানা গেছে, ইউনুস মিয়াকে প্রথমদিন রাতভর বসিয়ে রেখে অভিযোগ না নেয়ায় পরদিন সকালে মৌখিকভাবে বিষয়টি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজিকে জানায়। এরপর মামলার বাদী রাতে অভিযোগ করতে গেলে সেকেন্ড অফিসার মুকিব হাসান হুমকি দিয়ে অশালীন গালাগাল দিয়ে বলে, ‘ডিআইজি আমার কি করবে? আমি যে রিপোর্ট দেবো ওটাই হবে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেবো। আর ওসি মামলা না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এসব নিয়ে মামলা করিও না, আমাদের সমস্যা হবে। মালিককে ডেকে কিছু টাকা নিয়ে দেবো। পরে ১ নম্বর আসামি হুমকি দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বলে, মরদেহ পাইলে আরও টাকা দেবেন।’ এজাহারে মরদেহ উদ্ধারের বর্ণনা দিয়ে আরও বলা হয়, গত ৯ই সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় বাড়বকুণ্ড ভোলাইপাড়া বেড়িবাঁধ এলাকায় স্থানীয় লোকজন একটি মরদেহ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে ইউনুস ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি নিজের ছেলে রাসেলের বলে শনাক্ত করেন। কিন্তু ওসি বাদীকে ছেলের মরদেহ না দিয়ে জানান, ‘ডিএনএ টেস্ট ছাড়া মরদেহ দেয়া যাবে না।’ বাদীকে তার সন্তানের মরদেহ না দিয়ে পরবর্তীতে আনজুমান মফিদুল ইসলামকে দিয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেন ওসি। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমি এখন মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলবো।’ যদিও পরে উনার ফোনে আর সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি।