ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

হাজার ছাড়ালো ডেঙ্গুতে প্রাণহানি

স্টাফ রিপোর্টার
২ অক্টোবর ২০২৩, সোমবার

দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু এক হাজার ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দু’লাখ অতিক্রম করেছে আগেই। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়। জুলাইতে এসে তা ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। দেশে ইতিমধ্যে ডেঙ্গু রোগী মৃত্যু ও শনাক্তে পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭ জন মারা গেছেন। এ পর্যন্ত এক হাজার ছয় জনের প্রাণ গেছে ডেঙ্গুতে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খাতায় নেই।

ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একদিনে আরও ২ হাজার ৮৮২ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। রাজধানীর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে গ্রামে। মৃত্যুও বেশি গ্রামে। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ২ লাখ ৬ হাজার ২৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৮৩ হাজার ৮৫১ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ লাখ ২২ হাজার ৪৩৭ জন। মৃত এক হাজার ছয় জনের মধ্যে নারী ৫৬৮ জন এবং পুরুষ ৪৩৮ জন। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ৩৫৮ জন এবং রাজধানীতে ৬৪৮ জন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৮৮২ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬২৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ২৫৩  জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ২ হাজার ৮৮২ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৩৫৭ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ১২০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬ হাজার ২৩৭ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ২ লাখ ৬ হাজার ২৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ আক্রান্ত ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৫৩ জন এবং নারী ৮০ হাজার ৯৩৫ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯২৫ জন। অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইতে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন শনাক্ত এবং প্রাণহানি ৩৪২ জন। সেপ্টেম্বরে শনাক্ত রোগী ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন এবং মারা গেছেন ৩৯৬ জন। 

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না কেন- এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ তার এক প্রবন্ধে বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলোয় মূল রোগী ডেঙ্গু। ডেঙ্গু রোগীর চাপে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। আক্রান্ত প্রিয়জনদের হাসপাতালে ভর্তির আকুতি চোখে পড়ার মতো। হাসপাতালে জায়গা পাওয়া নিয়েও চলেছে হাতাহাতি। আগে যেখানে এককভাবে ঢাকায় প্রায় সব সংক্রমণ হতো এখন ঢাকা সিটি চাপা পড়ে গেছে ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যায়। মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে রেকর্ড করেছে। সিটি করপোরেশনগুলো নানা ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর রাশ টানা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এতদিন মহানগরীগুলোর ২/৩ কোটি মানুষ ডেঙ্গু ঝুঁকিতে ছিল। সব জেলায় ছড়িয়ে পড়ায় এখন ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হলো ১৬/১৭ কোটি। আগের ২/৩ কোটি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীতে আমরা যদি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ না করতে পারি তা হলে ১৬/১৭ কোটি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে আমরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো? সেই ২০০০ সালে যে প্রথম ব্যাপকহারে ঢাকায় ডেঙ্গু হলো তারপর ২২ বছর কেটেছে, এখনো আমরা ডেঙ্গুর কাছে হেরে যাচ্ছি, এডিস মশা আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আমরা একটা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো গড়ে তুলতে পারলাম না দুই দশকেও। তিনি বলেন, যখন ডেঙ্গু অনেক বেড়ে যায়, মিডিয়ায় হইচই শুরু হয়, তখন স্থানীয় সরকার, সিটি করপোরেশনের বাড়তি কিছু উদ্যোগ দেখা যায়। কিন্তু ততদিনে যা হওয়ার তা হয়েই যায়। মিডিয়ায় যখন কোনো বিষয় আলোচনায় আসে তখন তা ঘটে যাওয়ার পরে আসে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ডেঙ্গু নগরায়ণের রোগ, বিশেষত অপরিকল্পিত নগরায়ণের। আমাদের নগরায়ণের উপাদানের মধ্যে আছে এডিস মশার প্রজনন স্থান। পাকা বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা তৈরির সময় জমে থাকা স্বচ্ছ পানি এডিস মশার আঁতুড়ঘর। নগরায়ণে গাড়ির চাকা বেশি ঘোরে, টায়ার পুরনো হয়, ফেলে রাখা পুরনো টায়ারে দিব্যি ঘর-সংসার পাতে এডিস মশা। এখনকার জীবনে ব্যবহৃত হয় সীমাহীন ডিসপোজাবল প্লাস্টিক কন্টেইনার; পচে না, ধরে রাখে পানি যেখানে আরামে বংশবিস্তার করে এডিস। সেই গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ওশেনিয়া অঞ্চলে সংক্রমণের পর থেকে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ডেঙ্গু। তিনি বলেন, এখন যত ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়, তার ৭০ শতাংশের ঠিকানা আমাদের এই এশিয়া। ক্রমান্বয়ে নগরায়ণ আরও বাড়বে, নগরায়ণের বৈশিষ্ট্য গ্রামেও ছড়াবে। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে জলবায়ুতে উদ্ভট সব ঘটনা; শীতকালে শীত পড়ছে না, বর্ষার বৃষ্টি যাচ্ছে শীতকালে; দীর্ঘায়িত হচ্ছে ডেঙ্গুর সিজন। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status