দেশ বিদেশ
আরিফের হাত ধরে সারদা হলে সংস্কৃতিকর্মীরা
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২ অক্টোবর ২০২৩, সোমবারপ্রায় ১৫ বছর ধরে ‘বেদখল’ ছিল সিলেটের সারদা হল। এটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিলেট সিটি করপোরেশন। এ কারণে সিটি করপোরেশনের নতুন ভবন নির্মাণের সময় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সারদা হলে দাপ্তরিক সহ নানা কার্যক্রম চালিয়েছিল সিলেট সিটি করপোরেশন। এতে নষ্ট হয়ে যায় হলের সাংস্কৃতিক পরিবেশ। এমনকি ভবনের সামনে পরিণত হয়েছিল গাড়ি ডাম্পিং এলাকায়। সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মিলনস্থল সারদা হলের এমন দশায় বারবার নগর কর্মকর্তাদের ভবন ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেছিলেন সংস্কৃতিকর্মীরা। সিটি করপোরেশনের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ অনেক আগে শেষ হলেও সারদা ভবন ছেড়ে যাচ্ছিল না সিটি করপোরেশন। এ কারণে বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামতে হয়েছিল সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীদের। গত বছরের শেষ দিকে সারদা হল ফিরে পাওয়ার দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা। নগরের ক্বীন ব্রিজের পাদদেশে এই হলের অবস্থান। সামনে সুরমা নদী। পাশে সর্কিট হাউস। পর্যটক স্থান বলা হয় এই স্থানকে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এটিকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ সংস্কৃতিকর্মীরা যখন আন্দোলন শুরু করেন তখন বিষয়টি নজরে আসে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। আন্দোলনরত সংস্কৃতিকর্মীদের দাবি মেনে নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন; ৪ মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষে সারদা হল সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। কিন্তু ৪ মাসে সে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। কারণ, সিলেট সিটি করপোরেশনের দখলে থাকা অবস্থায় সারদা হলের পুরনো সব কাঠামো নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল। এজন্য নতুন করে অনেক কাজ করতে হয়েছে সারদা হলে। এতে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তবে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কাজ শেষ হলে সংস্কৃতিকর্মীরা ফের ফিরে পাবে সারদা হল। গত সেপ্টেম্বর সিলেটের সারদা হলের সংস্কার কাজ উদ্বোধনের কথা ছিল মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। সেজন্য হলের সামনে স্টেজ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু উদ্বোধনে আগে রোডমার্চে অংশ নিতে যাওয়া একটি মিছিল থেকে সারদা হলে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন সংস্কৃতিকর্মী আহত হন। এ ঘটনায় বিব্রত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ওইদিন সারদা হলের সংস্কার কাজের উদ্বোধন বাতিল করে দেন। পরে সংস্কৃতিকর্মীদের দাবির মুখে তিনি গতকাল গিয়ে সংস্কারের পর নতুন করে নির্মিত সারদা হলের উদ্বোধন করেন। এতে সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত মানবজমিনকে জানিয়েছেন, দীর্ঘ ১৫ বছর পর সারদা হলে ফিরতে পেরে সংস্কৃতিকর্মীরা খুশী। সিটি করপোরেশনের নতুন ভবন নির্মাণ উপলক্ষে এটি সিটি করপোরেশন নিজের কাজে ব্যবহার করেছিল। এতে করে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছিল। এখন সংস্কৃতিকর্মীদের পদচারণায় ফের মুখরিত হয়ে উঠলো সারদা হল। এজন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্টরা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, সারদা হল হচ্ছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী একটি হল। এখানে আমার হাত ধরে সংস্কৃতিকর্মীরা ফিরতে পেরেছেন এতে আমি খুশী। তারা আরও কিছু দাবি জানিয়েছে। এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সারদা হলে সংস্কৃতিকর্মীদের উপর হামলা তার জন্য একটি বিব্রতকর ঘটনা। এই হামলা দুঃখজনক বলেও জানান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।