দেশ বিদেশ
৪ঠা নভেম্বর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের মহাসমাবেশ
স্টাফ রিপোর্টার
২ অক্টোবর ২০২৩, সোমবারসরকারি দলের সংখ্যালঘুবান্ধব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ৪ঠা নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। একইসঙ্গে আগামী ৬ই অক্টোবর বিকাল ৪টায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সমাবেশ ও মিছিল করবে বলে জানানো হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর ঐক্যমোর্চা যৌথভাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয়া হয়।
নির্বাচনের আগেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন শারদীয়া দুর্গাপূজা। দেশের এমন পরিস্থিতিতে পূজার নিরাপত্তা নিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘পূজা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালায়ে বৈঠক হয়েছিল। সেখানে বলেছি, ২০২২ সালে শারদীয় দুর্গাপূজায় কোনো ঘটনা ঘটেনি। যা ঘটেছিল, তা ২০২১ সালে। অর্থাৎ সরকার চাইলে ঘটবে না, সরকার না চাইলে ঘটবে। এটা এখনকার বাংলাদেশের বাস্তবতা। প্রশাসন, সব রাজনৈতিক শক্তি যেন এক জোট হয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের স্বার্থে রুখে দাঁড়ায়। পূজা চলার সময়ে সবার ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা দেখতে চাই। যাতে কোনো গণ্ডগোল না হয়, সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকে। যদিও ইতিমধ্যে মূর্তি ভাঙার কাজ শুরু হয়ে গেছে।’ ২০২১ সালে কুমিল্লা জেলার এক মণ্ডপে হামলার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘এক জায়গায় ধরা পড়লো আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বললো, লোকটা পাগল। এই পাগলের পেছনের চক্রান্তকারীদের আজও গ্রেপ্তার করা হয়নি। গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করলে এ ঘটনা ঘটতো না।’ এ সময় আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বেশ কয়েকটি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে। ২০২১ সালের মধ্যে এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে আসেনি। তাই ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও এর নেতৃত্বাধীন ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর ঐক্যমোর্চা সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করে এসেছে।
সর্বশেষ কর্মসূচির মধ্যে ছিল গত ৮ থেকে ২৩শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিভাগভিত্তিক জেলা ও মহানগর পর্যায়ে সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন ও গণঅবস্থান।’ তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে এ কর্মসূচি শুরু হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ২২শে সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা থেকে ২৪শে সেপ্টেম্বর ভোর ৬টায় তা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরইমধ্যে এ কর্মসূচি একটানা ৩৪ ঘণ্টা চলার পরপরই আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনশনস্থলে এসে অক্টোবর মাসের মধ্যেই জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করার আশ্বাস দেন। কবির বিন আনোয়ার তখন বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো নিয়ে বর্তমান সরকারের কাজ চলমান রয়েছে। এরমধ্যে তিনটি আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বৈষম্য বিলোপ আইন সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আছে। দেবোত্তর সম্পত্তি আইনটি ধর্ম মন্ত্রণালয়ে আছে। সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের কাজটি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সে কারণেই আমরা সবার আগে কমিশন গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছি। অক্টোবরের মধ্যেই এই কমিশন গঠন করা হবে।’ রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘ইতিমধ্যে গত ২৭শে সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আগামী ৬ই অক্টোবর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে আগামী ৪ঠা নভেম্বর শনিবার বেলা ২টায় একই স্থানে মহাসমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি আগামী ৬ই অক্টোবর শুক্রবার বিকাল ৪টায় সারা দেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দলের প্রতিশ্রুতি অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় তা অনুষ্ঠিত হবে বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে।’ বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ, জগন্নাথ হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে প্রমুখ।