প্রথম পাতা
‘আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না’
স্পোর্টস ডেস্ক
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার
তামিম ইকবালকে ছাড়াই বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। গুঞ্জন ছড়ায়, শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিশ্বকাপে শুধু ৫ ম্যাচ খেলার প্রস্তাব করেছিলেন তামিম। যে কারণে দেশসেরা ওপেনারকে ওয়ার্ল্ডকাপ স্কোয়াডে রাখেনি বিসিবি। তবে তামিম বললেন, কাউকেই ৫ ম্যাচ খেলার বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। বরং বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে তাকে খেলতে মানা করা হয়েছিল।
ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে মাঠে ফেরেন তামিম ইকবাল। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটি ওয়ানডেও খেলেন তিনি। তৃতীয় ম্যাচে বিশ্রাম চান তামিম। তিনি জানিয়েছিলেন, বিশ্বকাপের আগে পিঠের পুরনো চোট নিয়ে সাবধানতা অবলম্বনেই তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে চাননি তিনি। তবে এরপর গোটা দৃশ্যপটই পাল্টে যায়। চোটের অজুহাতে তামিমকে বাদ দিয়ে বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করে বিসিবি। বিশ্বকাপ দলে জায়গা না পাওয়া নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে গতকাল নিজের ফেসবুকে ১২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা দেন তামিম। তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় আপনাদের স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি কোনো সময় কাউকে বলিনি যে, ৫টা ম্যাচের বেশি খেলতে পারবো না। এই কথাটা কোনো সময়ই হয়নি। আমি নিশ্চিত (সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন) নান্নু ভাইও বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। এই একটা মিথ্যা কথা, ভুল কথা... আমি জানি না কীভাবে গণমাধ্যম এই কথাটা পেলো, কিংবা কে এই কথাটা ছড়িয়েছে! এই জিনিসটা পুরোপুরি মিথ্যা।’
আগামী ৫ই অক্টোবর শুরু হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ৭ই অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে তামিমকে না খেলা কিংবা লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করার প্রস্তাব করেছিলেন বিসিবি’র এক উচ্চপদস্থ কর্তা। তামিম বলেন, ‘মিডিয়াতে যে জিনিসটা আসছে, ইনজুরি কিংবা ৫ ম্যাচ খেলার শর্ত- আমার মনে হয় না আমার বিশ্বকাপে না খেলার পেছনে এর কোনো প্রভাব আছে। আমি এখনো ইনজুরড হইনি। ব্যথা থাকতে পারে, কিন্তু আমি এখনো চোটে পড়িনি। বোর্ডের শীর্ষ পর্যায়ের একজন আমায় ফোন করলেন। তিনি আমাদের ক্রিকেটের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই জড়িত। উনি বললেন যে, তুমি তো বিশ্বকাপ খেলতে যাবে। তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলাতে হবে। এক কাজ করো, আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলো না তুমি। আমি বললাম, ভাই এটা তো আরও ১২-১৩ দিনের কথা। এই সময়ের মধ্যে আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবো। আমি কী কারণে খেলবো না।’
এরপর তামিমকে লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংয়ের প্রস্তাবও দেয়া হয়। তামিম বলেন, ‘(বিসিবি’র সেই কর্তা তামিমকে বলেন) তুমি যদি খেলো, তাহলে আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তোমাকে আমরা নিচে ব্যাটিং করাবো।’
তামিম বলেন, ‘আমি ১৭ বছর ধরে এক পজিশনে ব্যাটিং করেছি। কোনো দিন নিচে ব্যাটিং করিনি। আমার এমন কোনো অভিজ্ঞতাও নেই। স্বাভাবিকভাবেই তার কথাটা আমি ভালোভাবে নিইনি। আমি কিছুটা উত্তেজিতও হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কাছে বিষয়টি পছন্দ হয়নি। আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমাকে জোর করে অনেক জায়গায় বাধা দেয়া হচ্ছে।’
তামিম বলেন, ‘আমি বললাম দেখেন, আপনারা একটা কাজ করেন যদি আপনাদের এমন চিন্তাধারা থাকে তাহলে আপনারা আমাকে পাঠায়েন না। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। প্রতিদিন আপনারা আমাকে একেকটা নতুন জিনিসের মুখোমুখি করবেন, আমি এই জিনিসগুলোয় থাকতে চাই না। তারপরও ফোনে উনার সঙ্গে আমার অনেক কথাবার্তা হয়। সেগুলো এই প্ল্যাটফরমে না বলাই ভালো। এটা আমার আর উনার মধ্যেই থাক। তারপরও বলেছি যদি এগুলো হয় আমাকে রাখিয়েন না। আমি এই নোংরামোর মধ্যে থাকতে পারবো না।’
এশিয়া কাপের আগে আফগানিস্তান সিরিজ চলাকালে হুট করে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে অবসর ভেঙে ফিরে আসেন। তবে এশিয়া কাপ না খেলে বিশ্রাম চেয়েছিলেন তামিম। বাংলাদেশের সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক জানালেন, অবসর ভেঙে ফিরে আসার পর ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করেছেন তিনি। তামিম বলেন, ‘সবাই জানেন, আমি অবসরে যাই, অবসরে যাওয়ার কারণ ছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ফিরে আসি। এরপর যে দুই মাস আমি প্রচ- পরিমাণ কষ্ট করি নিজেকে ফিট করার জন্য। আমি নিশ্চিত, যারা সম্পৃক্ত ছিল, ফিজিও থেকে শুরু করে- আমি নিশ্চিত সবাই একমত হবেন, এমন কোনো সেশন বা এক্সারসাইজ নেই যেটি তারা চেয়েছেন আমি করিনি।’
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। সেই ম্যাচে ফিল্ডিং করলেও ব্যাটিংয়ের সুযোগ হয়নি তামিম ইকবালসহ বাংলাদেশের কারোরই। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ হারলেও ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ছিলেন তামিম। ৫৮ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তামিম বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে ৩০-৩৫ ওভার ফিল্ডিং করলাম, দুর্ভাগ্যবশত ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাইনি। পরের ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ এলো। আমরা ম্যাচটা হেরে যাই। তবে ওই সময় আমার দরকার ছিল কিছুটা রান করা, ব্যাটিংটা কেমন হচ্ছে সেটা পর্যবেক্ষণ করা। যেভাবে ব্যাটিং করেছি তাতে অনেক খুশি ছিলাম। আমি মাত্র ৪৪ রান করেছি, তবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম বড় কিছুর জন্য। তবে সেটি হয়নি দুর্ভাগ্যজনকভাবে। সে ম্যাচের পর আমি মানসিক দিক দিয়ে খুশি ছিলাম। যা শেষ ৪-৫ মাস হয়েছে, সেগুলো মাথায় অতটা ছিল না সেভাবে। খেলতে মুখিয়ে ছিলাম আবার, বিশ্বকাপ খেলতে উদ্গ্রীব ছিলাম।’
তামিম বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই এতদিন পর যখন ক্রিকেট খেলবেন, চোট থেকে সেরে উঠেছেন, ব্যথা অস্বস্তি থাকবেই। প্রথম ম্যাচের পরও ব্যথা অনুভব করেছি। যখন খেলা শেষ হলো, আমার অবস্থান ফিজিওকে বললাম যে আমি কেমন বোধ করছি। ঠিক ওই মুহূর্তে তিনজন নির্বাচক ড্রেসিংরুমে আসেন। তাদের বলি, আমার শরীর এখন এমনই থাকবে। ব্যথা থাকবে। দল যখন নির্বাচন করবেন, এটা মাথায় রেখে করবেন।’
তামিম জানান, ফিজিওর রিপোর্ট অনুযায়ী গত ২৬শে সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে খেলার জন্যও ফিট ছিলেন তিনি। তামিম বলেন, ‘যখন হোটেলে যাই, আমাকে পরীক্ষা করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটা, যেটা ফিজিওর রিপোর্টে ছিল- প্রথম ম্যাচের পর এমন পেইন হয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচের পর এমন পেইন হয়েছে। সেই দিনের হিসাবে ২৬ তারিখের (নিউজিল্যান্ড সিরিজের ৩য় ওয়ানডে) ম্যাচও খেলতে পারতাম আমি। ২৬ তারিখ আমাদের অনুশীলন ছিল, ২৭ তারিখ আমাদের ট্রাভেলিং ছিল, ২৮ তারিখ (মূলত ২৯শে সেপ্টেম্বর) একটা অনুশীলন ম্যাচ। তারপর এক-দুই তারিখে (২রা অক্টোবর) আরেকটি প্র্যাকটিস গেম। তখন মেডিকেল টিম মনে করে যে, আমি যদি এখন রেস্ট নিই, আমি যদি দ্বিতীয় প্র্যাকটিস ম্যাচটা খেলি তাহলে পর্যাপ্ত সময় পাবো। রিহ্যাবও হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে প্রথম ম্যাচটা খেলার জন্য খুব ভালো অবস্থায় থাকবো।’
তামিম বলেন, ‘কোনো জায়গায় বলা হয়নি পাঁচ ম্যাচ-দুই ম্যাচ, ইনজুরি, খেলতে পারবো না এতকিছু। হ্যাঁ আমার শরীরে পেইন ছিল যেটা অস্বীকার করছি না।’
বিশ্বকাপ খেলতে গতকাল ভারতে গিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বিশ্বকাপ স্কোয়াডকে শুভকামনা জানিয়ে তামিম বলেন, ‘আমি আশা করি, ১৫ জন বিশ্বকাপে গিয়েছে, তারা যতটুকু সম্ভব বাংলাদেশের জন্য সাফল্য নিয়ে আসবে।’
শেষে তামিম বলেন, ‘আরও অনেক কিছুই ঘটেছে এটা আপনারা দেখেছেন আমি নিশ্চিত। একটা কাহিনী বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে, দুটো কাহিনী ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। কিন্তু একজনের সঙ্গে তিন-চার মাসে যদি সাত-আটটা কাহিনী হয় তাহলে সেটা ইচ্ছাকৃত হয়। আর একটা কথা আমাকে সবাই মনে রাখিয়েন। ভুলে যাইয়েন না।’