দেশ বিদেশ
যে ঘটনায় বিব্রত আরিফ, কথাও রাখতে পারেননি
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার
সংস্কারের পর সিলেটের সারদা হল মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু উদ্বোধনের ঘণ্টাখানেক আগে সারদা হলের ভেতরে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীদের হামলার ঘটনায় বিব্রত হন তিনি। এ কারণে তিনি উদ্বোধন অনুষ্ঠান স্থগিতও করেছেন। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে হারুন নামের এক স্বেচ্ছাসেবক দলকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজে শনাক্ত করে আরও কয়েকজন কর্মীকে খুঁজছে। গত বৃহস্পতিবার সিলেটে অনুষ্ঠিত হয় ভৈরব থেকে সিলেট পর্যন্ত বিএনপি’র রোডমার্চ। এ রোডমার্চে অংশ নিতে নগরের দক্ষিণ অংশ থেকে আসে স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি মিছিল। আর ওই মিছিল থেকে নগরের সারদা হলে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি ১২ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টি দেখবেন বলে সংস্কৃতিকর্মীদের আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু কথা রাখতে পারেননি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান তিনি করতে পারেননি। সংস্কৃতিকর্মীরা জানিয়েছেন, সিলেটে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। রোডমার্চের বহরে যোগ দেয়া একটি মিছিল থেকে এ হামলার ঘটনা ঘটেছিল। সেটি পরে পুলিশের তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে তারা আন্দোলনে রয়েছেন। গতকাল সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে সারদা হলের সংস্কার কাজের উদ্বোধনও থেমে আছে বলে জানান তারা। সম্মিলিতি নাট্যপরিষদ সিলেটের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত জানিয়েছেন- আমরা বলেছিলাম একটি রাজনৈতিক দলের মিছিল থেকে হামলা হয়েছিল। ওইদিন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা সংস্কৃতিকর্মীদের বেধড়ক পিঠিয়েছে। এখনো অনেকেই গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে জানান তিনি। সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনার দিনই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সংস্কার শেষে সারদা হলের উদ্বোধনের কথা ছিল। সেজন্য স্টেজ নির্মাণ সহ প্রস্তুতি শেষ হয়েছিল। কিন্তু হামলার ঘটনার পর মেয়র পরিস্থিতি বিবেচনায় উদ্বোধনের অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন। তারা জানান, সিলেট সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে সারদা হলে নতুন করে সংস্কার করা হয় এবং সেটি সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এরপর থেকে সংস্কৃতিকর্মীরা সারদা হলে নিয়মিত রিহার্সেল ও অনুষ্ঠান করছেন। কিন্তু হামলার ঘটনা সবাইকে বিব্রত করেছে। যারা হামলা করেছিল তারা পরবর্তীতে ঘটনাটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে করে সংশ্লিষ্টরা আরও বিব্রত হন বলে জানান তারা। এদিকে কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) সুমন চৌধুরী জানিয়েছেন, সারদা হলে যারা হামলা করেছে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আজহার উদ্দিন অনিকের নেতৃত্বে সার্কিট হাউসে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে হামলাকারীরা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী সারদা হলের ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, যারা হামলা করেছে এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে দলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ ঘটনার দায় সিলেট বিএনপি নেবে না।
সংস্কৃতিকর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি: সারদা হলে হামলার ঘটনায় লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল তারা সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। সম্মিলিত নাট্যপরিষদ সিলেটের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত’র সভাপতিত্বে ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তীর পরিচালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে সিলেটের সর্বস্তরের সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ ও নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীরা অংশ নেন। স্মারকলিপিতে সংহতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট, সম্মিলিত নাট্যপরিষদ সিলেট, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ সিলেট বিভাগ, আবৃত্তি শিল্পী সংসদ, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, চারুশিল্পী সমন্বয় স্পর্শ সিলেটের নেতৃবৃন্দ। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন, বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ রায়বর্মণ রানা, বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস প্রমুখ। বক্তারা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় চিহ্নিত হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানিয়ে বলেন- আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। বক্তারা সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রতি অবিলম্বে সারদা স্মৃতিভবন উদ্বোধনের মাধ্যমে খুলে দেয়ার জোর দাবি জানান। তারা সংস্কৃতিবিরোধী সকল অপতৎপরতা বন্ধে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।