দেশ বিদেশ
সংকটাপন্ন ভুবন
গুলির ঘটনায় ৭ দিনেও গ্রেপ্তার নেই
শুভ্র দেব
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবাররাজধানীর তেজগাঁও এলাকার বিজি প্রেসের সামনে শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ মামুনের ওপর হামলার সময় গুলিবিদ্ধ আইনজীবী ভুবন চন্দ্র শীলের (৫২) শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। এখনো তার জ্ঞান ফিরেনি। তার ব্রেন কাজ করছে না। ব্রেন অনেকটা অচল হয়ে গেছে। শুক্রবার রাতে চিকিৎসকরা তার মাথায় অস্ত্রোপচার করেছেন। প্রায় ৩ ঘণ্টার এই অস্ত্রোপচারের পর তাকে ৪৮ ঘণ্টার বিশেষ তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় তার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে প্রতিটা মুহূর্ত অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে কাটাচ্ছেন। ভুবনের স্ত্রী রত্না রানী শীল মানবজমিনকে বলেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। চিকিৎসকরা কোনো আশাই দিচ্ছেন না। সম্পূর্ণ ঝুঁকির মধ্যে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। এদিকে, গুলির ঘটনার সাত দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যরা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি। ১৮ই সেপ্টেম্বর রাতের ওই ঘটনার পরের দিন ভুবনের স্ত্রী রত্না রানী শীল বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন। মামলার মূল তদন্ত ডিএমপি’র তেজগাঁও বিভাগ করলেও ছায়াতদন্ত করছে ডিবি ও র্যাব। কিন্তু তাদের কেউ জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেননি। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলছেন, এখনো কোনো ক্লু উদ্ঘাটন করা যায়নি।
গুলির ঘটনায় একটি ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা ফুটেজ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তবে ফুটেজটি অস্পষ্ট। এখান থেকে কাউকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনের বক্তব্যও অস্পষ্ট। সে বলছে, তার কাছে চাঁদা চেয়েছে কারাবন্দি আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন। চাঁদা না দেয়াতে তার ওপর হামলা করেছে ইমনের অনুসারীরা। বাস্তবে সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত এই আসামি ২০ বছরের বেশি সময় জেলখেটে ৩ মাস আগে মুক্তি পেয়েছে। জেল থেকে বের হয়ে সে বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদাবাজি শুরু করেছে। চাঁদাবাজির সত্যতা ও বিভিন্ন তথ্য গোয়েন্দারা পেয়েছেন। জেল থেকে বের হয়ে আবার অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিল মামুন। এজন্য সে একটি বাহিনীও গঠন করেছে। এসব খবর যায় কারাবন্দি সন্ত্রাসী ইমনের কাছে। মূলত চাঁদাবাজি, এলাকা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরেই এই হামলা। চলতি মাসেই আদালতে হাজিরা দিতে গেলে ইমনের অনুসারীরা মামুনকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়।
পরে ১৮ই সেপ্টেম্বর রাতে মগবাজারের পিয়াসা বার থেকে বের হয়ে প্রাইভেট কারে করে শুক্রাবাদের বাসায় যাচ্ছিলেন মামুন। তার সঙ্গে ছিলেন খোকন ও মিঠু নামের দুজন। তেজগাঁও বিজি প্রেসের কাছাকাছি যাওয়ার পর মামুন কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে আসা অস্ত্রধারীকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দেন। এ সময় ওই অস্ত্রধারীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। কিন্তু সেই গুলি গিয়ে লাগে পাশ দিয়ে যাওয়া পথচারী ভুবন ও আরিফুল নামের আরেকজনের গায়ে। পরে ইমনের অনুসারীরা মামুনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে পালিয়ে যায়। পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, হুমকির সূত্র ধরে সন্দেহ করা হচ্ছে ইমনের নির্দেশেই এই ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া মামুন নিজেও এ ঘটনায় ইমন জড়িত থাকার বিষয়টি জানিয়েছে। তবে ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ আলামত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। ফুটেজ নিয়ে পুলিশ ও ডিবি চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এখন তাদের পরিচয় জানা ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আরেকটি সূত্র বলছে, মামুনের ওপর হামলা যারা করেছে তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে করেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে মামুনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল।
সুযোগের অপেক্ষায় ছিল তারা। আর ওইদিনই তারা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত তারা মামুনকে হত্যার সেই সুযোগ পায়নি। ঘটনার পরদিন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, মামুন বলেছে ১২ তারিখ মামুন কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে ইমন গ্রুপের সদস্যরা তাকে হুমকি দেয়। ধারণা করছি ইমন গ্রুপের সদস্যরাই মামুনের ওপর হামলা করেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এনামুল হক মিঠু বলেন, তদন্ত চলছে। তবে উল্লেখ করার মতো অগ্রগতি নাই। ডিএমপি’র তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আজিমুল হক মানবজমিনকে বলেন, এ ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার নেই। হামলায় অংশগ্রহকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন মানবজমিনকে বলেন, গুরুত্বসহকারে এই ঘটনায় আমরা কাজ করছি। তবে হামলায় সরাসরি জড়িত এরকম কাউকে এখনো শনাক্ত করতে পারছি না। আমাদের ব্যাটালিয়ন ও গোয়েন্দা শাখা ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করছে।