ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

দাবি আদায়ে অনড় ঐক্য পরিষদ

স্টাফ রিপোর্টার
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন ও দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ বাস্তবায়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, সমতলে আদিবাসীদের জন্য আলাদা ভূমি কমিশনসহ সরকারি দলের গত নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নে গণঅনশন ও গণসমাবেশ কর্মসূচি পালন করছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ। টানা ৪৮ ঘণ্টার অনশনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, মহিলা ঐক্যপরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি শিখা মণ্ডলসহ বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হলেও বাকিরা শরীরে স্যালাইন পুশ করে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।  জানা গেছে, দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দেয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার গণঅনশন ও গণসমাবেশ শুরু করেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের নেতাকর্মীরা। রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত শহীদ মিনারেই অবস্থান করবেন তারা। তবে অনশন ও অবস্থানের ৩০ ঘণ্টার মাথায় শনিবার দুপুরে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। গতকাল সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে দেখা যায়, অনশনকারীদের মধ্যে ৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারীকে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আরও কয়েকজন অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে আছেন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের একটি চিকিৎসক দল অনশনে অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। দলটির সহকারী অধ্যাপক পিসি দাস বলেন, রানা দাশগুপ্তের ডায়াবেটিস আছে। অনশনের কারণে তার ব্লাড প্রেসারও কমে গেছে। আবার যেহেতু তিনি খাচ্ছেন না, সেহেতু তার পানিশূন্যতা কাটানোর জন্য স্যালাইন দেয়া হয়েছে। অবস্থা বেগতিক হলে তাকে হাসপাতালে নেয়া লাগতে পারে। তবে তিনি কোনোভাবেই এখান থেকে যেতে চাচ্ছেন না।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান ও না খাওয়ার কারণে রানা দাশগুপ্তসহ অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি জেএল ভৌমিক বলেন, আমাদের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হলেও অবস্থান ও সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। এই দাবি আদায়ের আন্দোলনে রানা দাশগুপ্তের কিছু হলে দেশে আগুন জ্বলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। 

এদিকে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, এই দেশে আমাদের জন্ম। আমাদের বাবা-মায়ের জন্ম। এখানেই আমাদের বসবাস। এই দেশের জন্য আমাদের এত আত্মত্যাগ। তারপরও আমরা এই দেশে সংখ্যালঘু। এদেশের হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সকলে মিলে আমরা বাঙালি হতে পারি না! আমরা সবাই বাংলা ভাষায় কথা বলি। একে অপরের বিপদে আপদে এগিয়ে যাই। আমরা সাদা কালো, ছোট-বড় সবাই এক বাংলাদেশি। তাই দাবি আদায়ে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা। তারা বলেন, গত এপ্রিল মাসে আমাদের দাবিগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমরা বলেছিলাম, আপনাদের নির্বাচনে অঙ্গীকার  করা দাবিগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমাদের জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে এক আশাহীনতা ও আস্থাহীনতা তৈরি হয়ে গেছে। আর এই আশাহীনতা ও আস্থাহীনতা যদি অব্যাহত থাকে তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তখন কিন্তু আমাদের কোনোভাবেই দায়ী করা যাবে না।

এদিকে অনশনরত স্থানে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার উপস্থিত হয়ে ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের যেই দাবি তার সঙ্গে আমরা সঙ্গতি প্রকাশ করছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে যেই দাবিগুলো ছিল তার বেশির ভাগই প্রক্রিয়াধীন। কিছু দাবি সংসদে উপস্থাপনও হয়েছে। কিছু আছে ধর্ম মন্ত্রাণলয়ে। সবগুলোই যাচাই-বাছাই চলছে। তাই আমার অনুরোধ আপনারা আর অনশন চালিয়ে যাবেন না। আপনারা ইতিমধ্যেই অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথা হয়েছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন- যেহেতু আমাদের ইশতেহারে আছে, সেহেতু সেগুলো বাস্তবায়ন হবে। তাই আমরা আশাকরি কাজগুলো দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।

এর প্রেক্ষিতে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, যেই দাবিগুলো নিয়ে আমরা এখনে অবস্থান করছি তা সরকারেরই দেয়া প্রতিশ্রুতি। সরকারকেই এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- কিছু আইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগিয়ে আছে। কিন্তু এইগুলো ১ বছর আগেও এগিয়ে ছিল। কিন্তু গত একবছরে এইগুলো সংসদে উপস্থাপনের যেই প্রক্রিয়া তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে আমাদের আশা এবং আস্থা দুটোই হারিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের সাহায্য করার জন্য আমরা এই আইনের খসড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছিলাম। কবির বিন আনোয়ারের কাছেও জমা দিয়েছিলাম। যাতে এটার ওপর বেস করে তারা এগিয়ে যেতে পারেন। আজকে তারা অনুরোধ করছেন। আমরা সেই অনুরোধে বিশ্বাস করে করে বলতে চাই- আপনাদের কথা রাখতে হবে। আগামী অক্টোররের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এই বিশ্বাস রেখেই আমরা আমাদের গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আগামী ৬ই অক্টোবর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে আমাদের মহাসমাবেশ পালিত হবে।  

 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status