দেশ বিদেশ
ভালো থাকুন সোহান ভাই
ফরিদুর রেজা সাগর
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার
সোহানুর রহমান সোহান। আমার খুব প্রিয় পরিচিত একজন মানুষ। যেহেতু আমার বাবা একজন চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন, সেহেতু স্বাভাবিকভাবে এদেশের যারা চলচ্চিত্র পরিচালক তাদের প্রতি আমি সবসময় অন্যদৃষ্টিতে তাকাই, অন্যভাবে তাকাই। বাবাকে দেখেছি একজন পরিচালক হিসেবে, কীভাবে আমাদের মানুষ করেছেন। কীভাবে চলচ্চিত্র জগৎকে ভালোবেসেছেন। সুতরাং যেকোনো চলচ্চিত্র পরিচালকের ক্ষেত্রে আমার সেই জিনিসটাই বেশি করে মনে হয়। যে কারণে চলচ্চিত্র পরিবারের সন্তানদের দেখলে আমি আমার বাবার কথা মনে করি। সোহান ভাইয়ের অনেক গুণ ছিল। যে গুণগুলোর সঙ্গে আমার বাবার অনেক মিল খুঁজে পেতাম।
সোহানুর রহমান সোহান যে ছবিটি দিয়ে প্রথম বিখ্যাত হয়েছিলেন সে ছবিটার নাম ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এই ছবিতে তিনি উপস্থাপন করেছিলেন প্রখ্যাত নায়িকা মৌসুমীকে। মৌসুমী তখন কেবলমাত্র একটি প্রডাক্টের মডেল হয়ে আমাদের এই জগতে পা দিয়েছেন। সেই সময় তিনি মৌসুমীকে আবিষ্কার করেন এবং কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবিতে তাকে নেন। মৌসুমীর জয়যাত্রা সেই ছবি থেকে শুরু। ছবির জগতে মৌসুমীকে প্রথম তিনিই এনেছিলেন। নৃত্য পরিচালক আজিজ খান শাকিব খানকে নিয়ে এসেছিলেন তার কাছে। তিনি শাকিব খানের মাঝখানে সেই প্রতিভা খুঁজে পেয়েছিলেন। যেটা দেখার দৃষ্টি তার ছিল। বহু নতুন শিল্পী, কাহিনীকারকে, সংগীত শিল্পীকে সোহান ভাই প্রথমবারের মতো তার চলচ্চিত্রে ঠাঁই দিয়েছেন। তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনা ছাড়াও চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে আমি দেখেছি পরিচালকদের জন্য তার কি পরিমাণ ভালোবাসা। তিনি প্রথমেই পরিচালক সমিতির অফিসকে আধুনিক করার জন্য একটি ফ্যাক্স মেশিন স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন এবং সেই ভাবে একটি ফ্যাক্স মেশিন যোগাড় করলেন। আমি তখন দেখেছি তিনি সেই অফিসটাকে সাজানোর জন্য কী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। পরিচালকরা যাতে ভালো ভালো ছবি পান সে জন্য কতো জায়গায় কতোজনকে অনুরোধ করেছেন। সোহানুর রহমান সোহানের আর একটা ব্যাপার খুব বেশি করে মনে পড়ছে। কিছুদিন আগে তার জন্মদিন ছিল। তিনি আসলেন, আমাদের সঙ্গে গল্প করছেন, তখনই আমাদের অনন্যা রুমা বললেন সামনে তো আপনার জন্মদিন- সোহান ভাই তখন চমৎকৃত হলেন। তোমরা আমার জন্মদিন মনে রাখো? রুমা বললো, কেন মনে রাখবো না? আপনি তো আমাদের একজন গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রিয় মানুষ।
সোহান ভাই খুবই খুশি হলেন এবং বললেন যে, ঠিক আছে। আমার জন্মদিনে আমি আসবো, যত কাজই আর যত ব্যস্ততাই থাকুক। আমার জন্মদিন এখন থেকে চ্যানেল আই’র সঙ্গেই উদ্যাপন করবো। সোহান ভাই নিজে যেহেতু একজন পরিচালক সেহেতু তিনি নিজেই উপলব্ধি করলেন যে, ‘শোন তোমাদের একটা তারকাকথন অনুষ্ঠানে যদি আমি বসে বসে আমার জন্মদিনের কথা বলি তাহলে সেটা এমন কোনো দর্শক দেখবে না। আমার সঙ্গে একজন কাউকে নিয়ে আসি। রুমা বললো, আপনি আসলেই অনুষ্ঠানের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও যদি কাউকে নিয়ে আসেন তো নিয়ে আসতে চান তাহলে নিয়ে আসুন। আমরাই তাকে আপনার পক্ষ থেকে দাওয়াত দিবো। যদি নামটা বলে দেন।
সেদিনের অনুষ্ঠানে সোহান ভাই নিজেই আসেনি, এসেছিলেন আর এক বিখ্যাত নায়িকা অপু বিশ্বাস। তিনিও সোহান সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
সোহান ভাই সেদিন অনেক আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। চলচ্চিত্র জগৎকে বড় করার স্বপ্নের কথা শুনিয়েছেন। আজকে সোহানুর রহমান সোহান আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমাদের চলচ্চিত্র জগৎ নিশ্চয়ই আগের চেয়ে বড় হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমরা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছি। প্রতিবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য ছবি জমার সংখ্যা বাড়ছে। সবকিছু মিলিয়ে সোহান ভাই আপনাকে এতটুকু আশ্বস্ত করতে পারি যে, আপনি চলচ্চিত্রকে হাত ধরে যে জায়গায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিলেন সেই দিকেই আমরা আমাদের চলচ্চিত্রকে নিয়ে যাবার চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। আপনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন।