ঢাকা, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ রজব ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় ছত্রাকজনিত চর্মরোগ হলে

ডা. জেসমীন আক্তার লীনা
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার

কিছু ধরনের ছত্রাকের কারণে ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়। তবে এ রোগটি তেমন জটিল নয়। বেশির ভাগ সংক্রমণেরই কার্যকরী চিকিৎসা আছে। কিন্তু চিকিৎসা না করলে কোনো ক্ষেত্রে বেশ জটিলতা তৈরি হয়। 

যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে:
-দাদ জাতীয় সংক্রমণ মানুষের মাধ্যমে ছড়ায়।
-ব্যবহৃত বিছানার চাদর,  তোয়ালে, চিরুনি, এ ছাড়া অন্যান্য ব্যক্তিগত সামগ্রী অন্য  কেউ ব্যবহার করলে।
-এ ছাড়া আরও কিছু কারণ আছে।

লক্ষণ ও উপসর্গগুলো:
শরীরের ত্বকের কোনো অংশে, কি ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ করেছে তার উপর নির্ভর করে এর লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ। ত্বকে যে ধরনের ছত্রাক চর্মরোগগুলো বেশি দেখা যায় তা হলো-
১. ডারমাটোফাইট ইনফেকশন (Dermatophyte infections) 
এক্ষেত্রে সাধারণত ত্বক, নখ এবং চুল আক্রান্ত হয়। এই ধরনের সংক্রমণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ধরন হলো:
এথলেটস ফুট (Athletes foot (Tinea pedis and tinea manuam):
প্রতি ১০০ জনে ২৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির এই ধরনের চর্মরোগ হয়। ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়ার মিলিত সংক্রমণের ফলে ত্বক শুষ্ক, লালচে, খসখসে হয় এবং খোসপাঁচড়ার মতো চুলকায়। মাঝে-মধ্যে ত্বকে ফুঁসকুড়িও দেখা যায়। হাতের তালুর ভাঁজে, আঙ্গুলের পাশে এবং পায়ের আঙ্গুলের মাঝে এই সংক্রমণ বেশি দেখা যায়।
আক্রান্ত স্থান থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে যেমন সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার মাধ্যমে এই রোগ হতে পারে।
নখের সংক্রমণ (Nail Infections):
নখের ছত্রাকজনিত চর্মরোগকে Oûchomycosis বলে। এর মধ্যে সাধারণত Tinea Unguium রোগটিই বেশি হতে দেখা যায়। এতে নখ ভঙ্গুর এবং অনেক ক্ষেত্রে পুরু নখ নষ্ট হয়ে যায়। পায়ের নখ এবং হাতের নখ উভয়ই এতে আক্রান্ত হতে পারে।
দাদ (Ringworm on the bodz (Tnea Corporis):
শরীরের যে অংশগুলো উন্মুক্ত থাকে যেমন- পেট এবং হাত-পা সেই অংশগুলো ছত্রাকের সংক্রমণের ফলে লালচে হয়ে যায় এবং রিং-এর মতো  গোলদাগ পড়ে। 

মাথার ত্বকে দাদ:
সাধারণত অল্পবয়সী ছেলে- মেয়েদের বিশেষ করে যারা শহরাঞ্চলে থাকে তাদের এই সংক্রমণ হয়। এর ফলে চুল পড়ে যায় এবং আক্রান্ত স্থানে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এই সংক্রমণের কোনো লক্ষণ  বোঝা যায় না এবং এই সংক্রমণ একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে যেতে পারে।

২. ছত্রাক সংক্রমণ
এই ধরনের ছত্রাকজনিত চর্মরোগগুলো হলো-
ইন্টারট্রিগো (Intertrigo):
ক্যানডিডা অ্যালবিকানস (Candida albicans) নামক ছত্রাকের সংক্রমণের মাধ্যমে এই রোগ হয়। এটি ত্বকে এবং পরিপাকতন্ত্রে বাস করে। ত্বকের সঙ্গে ত্বকের স্পর্শ লাগে এমন অংশে যেমন- বগলে, কুঁচকিতে, শরীরের মেদ/ভুঁড়িতে, স্তনের নিচে যেখানে উষ্ণ এবং স্যাঁতসেঁতে বা ভিজা থাকে সেসব অংশে এর সংক্রমণ হয়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে ফোঁড়া হয়, চুলকায়, দাগ পড়ে এবং আক্রান্ত স্থানে হলদেটে সাদা রঙের দাগ পড়ে ছৌদ বা ছুলি (Pityriasis Versicolor):
এই সংক্রমণের কারণে  ফর্সা এবং ফ্যাকাশে ত্বকে গাঢ় দাগ এবং কালো ত্বকে হালকা দাগ পড়ে। এই সংক্রমণ  টিনিয়া ভার্সিকোলার (Tinea versicolor) নামেও পরিচিত। 
থ্রাশ (Thrush (Candida albicans):
ক্যানডিডা অ্যালবিকানস নামক ছত্রাক আমাদের আশেপাশেই থাকে কিন্তু খুব কমই সমস্যা ঘটায়। বেশি অসুস্থ থাকলে, বহুমূত্র নিয়ন্ত্রণে না থাকলে, অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে এই ছত্রাকগুলো দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে এবং সংক্রমণ ঘটায়। এর ফলে মুখ, জিহ্বা, যোনিপথ এবং ত্বকের যেসব অংশে ভাঁজ পড়ে সেসব অংশ সংক্রমিত হয়। অনেক সময় পুরুষদের যৌনাঙ্গে লালচে ফুঁসকুড়ি হয়। এ ছাড়া ছোট বাচ্চাদের মুখে এবং ন্যাপি এরিয়ায় (ঘধঢ়ঢ়ু ধৎবধ- যেখানে  মল শুষে নেয়ার জন্য শিশুর পাছা ও দুই পায়ের মাঝখানে তোয়ালে জড়িয়ে রাখা হয় সেখানে): hrush হতে দেখা যায়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা
সাধারণত শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ত্বক, নখ এবং চুলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে চিকিৎসা করা হয়।
চিকিৎসকের  পরামর্শ  অনুযায়ী রোগের ধরন, মাত্রা এবং রোগীর বয়স অনুসারে চিকিৎসা করাতে হবে।

চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে-
-আক্রান্ত স্থানে ছত্রাক প্রতিরোধক ক্রিম, লোশন এবং পাউডার লাগানো।
-ছত্রাক নাশক ওষুধ সেবন।

প্রতিরোধে করণীয়
-নিয়মিত গোসল করতে হবে ও  ভালোমতো শরীর মুছতে হবে।
-পোশাক এবং অন্তর্বাস যথাসম্ভব ঢিলেঢালা পরতে হবে।
-সুতির মোজা ও অন্তর্বাস ব্যবহার করতে হবে।
-অপরের ব্যবহৃত তোয়ালে, চিরুনি ব্যবহার করা যাবে না। 
-বিছানার তোষক, চাদর ও কাপড় কিছুদিন পর পর পরিষ্কার ও রোদে শুকাতে হবে।
-মাথার ত্বকে দাদ-এ আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত বালিশ, টুপি, চিরুনি, কাঁচি ফেলে দিতে হবে বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
-ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

অবহেলা ও চিকিৎসা না করলে ছত্রাকজনিত চর্মরোগের ফলে ত্বকের উপরিভাগের থেকে শরীরের অভ্যন্তরে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে শুরুতেই চিকিৎসা করতে হবে। 
লেখক: (চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি) রোগ বিষেজ্ঞ, স্যার সলিমুল্লাহ্‌? মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা। 
চেম্বার: আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল 
মিরপুর রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা। প্রয়োজনে-০১৭২০-১২১৯৮২

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status