প্রথম পাতা
শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের চেয়ে পণ্যের দাম কম
মো. আল-আমিন
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবারবিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম ক্রমান্বয়ে কমলেও দেশের বাজারে এর ছিটেফোঁটাও প্রভাব নেই। বরং উল্টো কোনো কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল হওয়ায় কিছুদিন আগেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি আকাশ ছুঁয়েছিল। কিন্তু অল্প দিনের ব্যবধানে দেশটিতে আর সেই অবস্থা নেই।
দেশটির মূল্যস্ফীতি এখন বাংলাদেশের অর্ধেক। দুই বছরের ব্যবধানে দেশটির অনেক খাদ্যের দামও বাংলাদেশের চেয়ে কমেছে। শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আদমশুমারি ও পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে দেশটিতে চিনি, পিয়াজ, মরিচ, রসুন, সয়াবিন তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম।
শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে বাংলাদেশি মুদ্রায় এক কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪৫ টাকায় (এক টাকা সমান দশমিক ৩৪ শ্রীলঙ্কান রুপি ধরে)। অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়ে শ্রীলঙ্কায় তিন গুণ কমে চিনি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কায় প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়, পক্ষান্তরে বাংলাদেশে রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা থেকে আড়াইশ’ টাকায়।
এদিকে বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম আরও কমেছে।
বাংলাদেশে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হওয়া আদা শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি কেজি আদার দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। অর্থাৎ পণ্যটি বাংলাদেশের চেয়ে কয়েক গুণ কমদামে শ্রীলঙ্কার বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
পিয়াজের দামও শ্রীলঙ্কায় কিছুটা কম। বাংলাদেশি মুদ্রায় দেশটিতে এক কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়। ঢাকায় যেটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। এ ছাড়া বাংলাদেশে প্রতি কেজি লবণের দাম ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, শ্রীলঙ্কায় প্রতি কেজি লবণের দাম ৩৫ টাকা। দেশটিতে মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, বাংলাদেশে প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ১৩৫ টাকা। শ্রীলঙ্কায় প্রতি কেজি শুকনা মরিচের দাম ৪০৮ টাকা আর বাংলাদেশে প্রতি কেজি শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকায়।
ফলের দামও শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশে বেশি। রাজধানীর বিভিন্ন ফলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৩০০ টাকার নিচে কোনো বিদেশি ফল পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকাংশ ফলের দামই ৩৫০ টাকার উপরে। রাজধানীতে প্রতি কেজি মাল্টা ৩৮০, কমলা ৩৫০, ছোট কমলা ৩২০, গ্রিন আপেল ৪০০, গালা আপেল ৩৫০, সুজি আপেল ৩৩০ টাকা এবং আনার (ডালিম) ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় প্রতি কেজি আপেল ও কমলা বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৫ থেকে ১০০ টাকায়।
বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম আরও কমেছে: এদিকে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম আরও কমেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মাসভিত্তিক ফুড প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসের চেয়ে আগস্ট মাসে বিশ্ববাজারে খাদ্যের মূল্যসূচক অনেক কমেছে। গত বছরের মার্চে এই সূচক রেকর্ড উচ্চতায় ওঠার পর জুলাই মাসে তার মান প্রায় ৩৯ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে। এফএও ফুড প্রাইস ইনডেক্স বলছে, জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যসূচক ১২১ দশমিক ৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর ২০২২ সালের মার্চ মাসে এই সূচক রেকর্ড ১৫৯ দশমিক ৭ পয়েন্টে উঠেছিল। এরপরের চার মাসেও এর মান ১৫০-এর উপরে ছিল। কিন্তু গত বছরের জুলাই মাসে তা ১৪০-এর ঘরে নেমে আসে। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা কমে ১৩০ দশমিক ২ পয়েন্ট হয়। এফএও’র তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম অনেক কমেছে। গত বছরের জুলাই মাসে ভোজ্য তেলের মূল্যসূচক ছিল ১৬৯ পয়েন্ট। চলতি বছরের জুলাই মাসে মূল্যসূচক ৩৯ পয়েন্ট কমে ১২৯ দশমিক ৮ শতাংশীয় পয়েন্টে নেমে আসে। আগস্ট মাসে তা আরও কমে ১২৫ দশমিক ৮ শতাংশীয় পয়েন্টে নেমে এসেছে।
একই চিত্র দেখা গেছে দুগ্ধপণ্যের মূল্যসূচকেও। চলতি বছরের আগস্টে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১১১ দশমিক ৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে এফএও, যা আগের বছরের জুলাই মাসের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কম।
গত মাসে আমিষ পণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচকও কমেছে। গত বছরের জুলাইয়ে আমিষ পণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ১১৭ দশমিক ৮ শতাংশীয় পয়েন্ট। চলতি বছরের আগস্ট মাসে এই মূল্যসূচক কমে ১১৪ দশমিক ৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। জুলাই মাসে আমিষ পণ্যের মূল্যসূচক ছিল ১১৮ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আমিষ পণ্যের এই সূচকমানে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে।
তবে বিশ্ববাজারে চিনির মূল্যসূচক এখনো কমেনি। এপ্রিল, মে ও জুন মাসের তুলনায় চিনির মূল্যসূচক কিছুটা কমলেও গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় বিশ্ববাজারে এই পণ্যটির মূল্যসূচক বেড়েছে। যদিও বিশ্ববাজারের চেয়ে বাংলাদেশে চিনির মূল্যবৃদ্ধির হার অনেক বেশি।