বাংলারজমিন
কালাইয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে এনজিও পরিচালক উধাও
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবারজয়পুরহাটের কালাইয়ে গবাদিপশু দেয়ার নামে প্রায় ৫ হাজার গ্রাহকের এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে সওজ (স্মার্ট অর্গানাইজেশন অব জয়পুরহাট) নামের এক এনজিও’র পরিচালক। রাতারাতি অফিসে তালা ঝুলিয়ে আসবাবপত্র নিয়ে পালিয়েছে প্রতারকরা। কয়েকদিন ধরে অফিসে তালা ঝুলানো দেখে ফেরত যাচ্ছেন গ্রাহকরা। কোনো উপায় না দেখে আফছার আলী নামে এক গ্রাহক বৃহস্পতিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা যায়, ২০২৩ সালে কালাই উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে গবাদিপশু পালনের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে উপজেলার মাত্রাই বাজারে সওজ নামে একটি এনজিও’র কার্যক্রম শুরু করে। সমিতিটি চালানোর জন্য প্রতিটি গ্রামে ১৫-২০ সদস্যের ২-৩টি করে সমিতি গঠন করেন এই চক্রটি। গ্রাহকদের জমানো অর্থের বিনিময়ে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি দেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের নিকট থেকে ভর্তি ফি বাবদ ১০০ টাকা এবং সাপ্তাহিক সঞ্চয় ৫০ টাকা করে জমা নেয় তারা। গত ৯ মাসে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ হাজার। এসবে আকৃষ্ট হয়ে আমানতকারীরা সেখানে সঞ্চয় জমা করেন। মাত্রাইসহ আশপাশের প্রায় শতাধিক গ্রামের ৫ হাজার গ্রাহকের প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তারা উধাও। শুধু তাই নয়, যারা কর্মী হিসেবে কাজ করতেন তাদের মধ্যে ২০ জনের নিকট থেকে জামানত বাবদ ৩ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে বলে জানান সওজ এনজিও’র মাত্রাই শাখার ব্যবস্থাপক মফিদুল ইসলাম।
থানায় লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৯ মাস আগে উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের আরবাব গ্রামে ১৬ সদস্যের একটি সমিতি গঠন করে এনজিও’র কর্মীরা। সেদিন নির্বাহী পরিচালক কালাই উপজেলার শকুনা গ্রামের বাসিন্দা জয়নুল হোসেন এ সমিতিতে উপস্থিত ছিলেন। সঙ্গে এনজিও’র ব্যবস্থাপক মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা গ্রামের বাসিন্দা মফিদুল ইসলাম এবং মাত্রাই গ্রামের বাসিন্দা মাঠকর্মী সুমাইয়া আক্তারও উপস্থিত ছিলেন। ১৬ জনের ভর্তি ফিসহ সঞ্চয় জমা হয়েছে ৩২ হাজার ৮শ’ টাকা। গত বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি সমিতির সদস্যদের গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুধবার রাতে অফিসের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন পরিচালক। সদস্যরা এসে অফিসের মূল গেটে তালা ঝুলানো দেখে হইচই শুরু করেন। এরপর সমিতির পক্ষে গ্রাহক আফছার আলী বাদী হয়ে থানায় ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এনজিওকর্মী সুমাইয়া আক্তার বলেন, আমি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। এইচএসসি পাস করে বাড়িতেই ছিলাম। পরিচালক জয়নুলকে ১০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে সেখানে কাজ করছি। এখন সবাই পলাতক। গ্রাহকরা আমার বাড়িতে ভিড় করছে। গ্রাহকের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫ হাজারের কম না, বরং বেশিই হবে। সওজ এনজিও’র পরিচালক জয়নুল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে জানান, বিপদে পড়ে তিনি এলাকা ছাড়া হয়েছেন। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজের জন্য তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সঞ্চয় বা ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা জন্য নয়। তাদের ব্যাপারে ইউএনও খোঁজ নিতে বলেছেন। তদন্ত চলমান। কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারি বলেন, পরিচালকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি বলেন, সমিতির সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।