ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

বিএনপি’র গণমিছিলে নেতাকর্মীদের ঢল

জনগণ সরকারকে না বলে দিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবারmzamin

দেশের মানুষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘না’ জানিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, আজকে এই রোদ-বৃষ্টির মধ্যে লাখো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে, এদেশের মানুষ সরকারকে না জানিয়ে দিয়েছে। দেশের মানুষ শেখ হাসিনার সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। গতকাল বিকালে রাজধানীতে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র গণমিছিল শেষে নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। 

এর আগে সরকার পতনের একদফা’র দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আলাদাভাবে দুটি গণমিছিল করে। দুটি গণমিছিলেই দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ দেখা যায়। রামপুরা ও কমলাপুর স্পটকে ঘিরে দুপুর থেকেই জড়ো হতে থাকে বিএনপি নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে উত্তরের গণমিছিলের অগ্রভাগ কাকরাইল ও শেষ ভাগ রামপুরা ব্রিজ পার হয়ে বাড্ডায় গিয়ে ঠেকে। একইভাবে দক্ষিণের গণমিছিলের অগ্রভাগ ফকিরাপুল ও শেষ ভাগ কমলাপুর ছাড়িয়ে যায়। নেতাকর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে ওই এলাকা। নেতাকর্মীদের জটে রামপুরা থেকে নয়াপল্টন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা সাড়ে ৩টায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র গণমিছিল রামপুরা বেটারলাইফ হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হয়। এরপর গণমিছিল মৌচাক, মালিবাগ, কাকরাইল হয়ে নয়াপল্টনের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। একই সময় ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি’র গণমিছিল কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে পীরজঙ্গি মাজার, আরামবাগ, ফকিরাপুল হয়ে নয়াপল্টনে যোগ দেয়। এরপর নয়াপল্টনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  

বিএনপি ছাড়াও গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ (নুর), গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া), লেবার পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য গণমিছিল করে। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক এনডিএম ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সংবাদ সম্মেলন করে।
এদিকে সমাবেশে প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল ইসলাম যখন বক্তব্য দিতে মাইক হাতে নেন তখন শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যেই তিনি বক্তব্য দেন। নেতাকর্মীরাও বৃষ্টিতে ভিজে মহাসচিবের বক্তব্য শুনেন। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সমস্ত অনৈতিক কাজগুলো করছে। দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক করে রেখেছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এই মুহূর্তে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। সকলের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নেয়া হচ্ছে। আজকে জনগণ রাস্তায় নেমে যে আওয়াজ তুলছে আওয়ামী লীগের সে আওয়াজ কেড়ে নেয়ার শক্তি নেই। আসুন আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। 

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেরা আক্রমণ করে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাবে। দলের নেতাকর্মীদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বুকে সাহস ও শক্তি নিয়ে ভয়াবহ এই দানব সরকারকে পরাজিত করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনেই সরকারকে পরাজিত করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে জনগণের সরকার করতে হবে। বৃষ্টির মধ্যে আপনারা কষ্ট করছেন, সামনে আরও কষ্ট হবে। এই সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে আমরা এদেশে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। 

একদফা দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে এবং একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
এসময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগের এক মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে আওয়ামী লীগের কেউ নিরাপদে থাকতে পারবে না। আমরা বলতে চাই- আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশের একজন মানুষও নিরাপদে থাকতে পারবে না। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব থাকবে না। তাই এ আপদ বিদায় করতে হবে। তিনি বলেন, এ সরকারের লজ্জা থাকলে তারা বিদায় নিতো। পুলিশের ওপর ভর করে, বিএনপি নেতাকর্মীদের খুন ও গুম করে তারা ক্ষমতায় আছে। আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে বিদায় করবো।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মারার চক্রান্ত করছে। তাকে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে খালেদা জিয়ার মুক্তি মানেই গণতন্ত্রের মুক্তি বলিও মন্তব্য করেন তিনি।  গয়েশ্বর বলেন, আমরা যখন আন্দোলনের কর্মসূচি দেই তখন রাস্তায় এত নেতাকর্মী কোথায় থাকে? নেতাকর্মীরা মাঠে থাকলে পুলিশ এর মধ্যে সাহস পাবে না। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন এই আন্দোলনে সকলকে সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকতে হবে।   

ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ। এ ছাড়া সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, মোহাম্মদ শাহজাহান, ডা. এজেএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, আতাউর রহমান ঢালী, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফজলুল হক মিলন, এমরান সালেহ প্রিন্স, মীর সরফত আলী সপু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ডা. রফিকুল ইসলাম, রকিবুল ইসলাম বকুল, শামা ওবায়েদ, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আজিজুল বারী হেলাল, অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, কাদের গণি চৌধুরী, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী প্রমুখ।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status