শরীর ও মন
অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসা ও কিছু অভিজ্ঞতা
ডা. এম এ হক
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার
১। ‘আমার একটা বাচ্চা আছে মেয়ে, চার বছর বয়স। সবকিছু স্বাভাবিক খেলাধুলা চলাফেরা পড়াশোনা। কিন্তু নাম ধরে ডাকলে তাকায় না। স্বাভাবিক কথা বলেÑ কমিউনিকেশন করে না।’
২। ‘আমার মেয়ের বয়স ২৫ মাস, কথা বলে। না সব শুনে এবং বুঝতে পারে।’
৩। ‘আমার মেয়ের বয়স চার বছরের মতো। ওর আই কন্টাক্ট নাই আর মাঝে মাঝে দুই একটা কথা বলে আর কিছু অ্যাবনরমাল ভঙ্গি করে, এখন আমি কি করতে পারি?’
৪। ‘আমার বেবীর বয়স ৫ বছর ৩ মাস।
উপরে চারজন অভিভাবকের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো। এভাবেই শত শত অভিভাবক তাদের সন্তানের কষ্ট নিয়ে আমাদের নিকট সমাধানের জন্য আসেন। যে দিন থেকে অভিভাবকেরা বুঝতে পারেন তাদের সন্তান অন্য সন্তানের মতো স্বাভাবিক নয়। সেদিন থেকেই তারা সকল প্রকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যে যখন যেখানে বলছেন তারা সেখানে ছুটে যাচ্ছেন। শুধু একটু উপকারের আশায়। আমার সন্তান যেন কথা বলতে পারে, আমার সন্তানের কমনসেন্স ফিরে আসে। আমার সন্তান নিজের কাজ যেন নিজেই করতে পারে শুধু এই আশায়। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় এক সময় তারা হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। কারণ সমগ্র মডার্ন চিকিৎসকদের নিকট এর কার্যকরী কোনো ওষুধ নেই। ইউরোপ, আমেরিকায় এদের চিকিৎসায় কোনো ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। ভারত এবং বাংলাদেশে শুধু ঘুমের, খিঁচুনির এবং হাইপারের জন্য ম্যানেজমেন্ট স্বরূপ কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধ যতদিন সেবন করবে ততদিন এই সমস্যা কম থাকবে। ওষুধ বন্ধ করলেই আবার পূর্বের মতো একই সমস্যা। এখানে মডার্ন চিকিৎসকেরও কিছু করার নেই। সমগ্র বিশ্বে একই অবস্থা। মাঝে মধ্যে ফেসবুকের মাধ্যমে স্টেম সেল থেরাপি নামের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির তথ্য পাওয়া যায়। তারা মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা (ভারতে) অর্থাৎ আট হাজার ডলার প্যাকেজ মূল্য নিয়ে থাকেন। এ ধরনের থেরাপি নেয়া অসংখ্য রোগী আমাদের সেন্টারে এসেছে। আবার ছুটছে স্পীচ, অকুপেশনাল থেরাপি সেন্টারে। সিরিয়াল নেয়ার জন্য সেকি প্রতিযোগিতা! তারা মনে করছেন থেরাপি দিতে পারলেই বুঝি আমার সন্তান স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তারা এটা চিন্তা করেন না যে, মস্তিষ্ক বিকাশজনিত সমস্যায় থেরাপি কীভাবে উপকার? বছরখানেক ছোটাছুটির পর আবার সেই হতাশা। ততদিনে নিজের ক্যারিয়ার, সংসার, নিজের শরীর, নিজের জীবনের আনন্দ সব শেষ। এখন নিজেই যেন আরেকজন মানসিক রোগী হয়ে গেছেন। সন্তানের বয়স চার থেকে পাঁচ বছর হলে এই সকল অভিভাবকেরা আবার নতুন আশা নিয়ে ছুটে চলেন স্পেশাল স্কুলে। এখানে আরেক জগৎ। সে কথা আরেকদিন অভিভাবকদের অভিজ্ঞতা হিসেবে তুলে ধরবো।
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার এক ধরনের নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারস; যেখানে অনেক ধরনের মানসিক সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা একসঙ্গে ঘটে। ফলে, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশুর পরিপূর্ণ মানসিক বৃদ্ধি ঘটে না। এ ধরনের নিউরোলজিক্যাল সমস্যায় মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়; জন্মগ্রহণের ১৮ মাস থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুর আচরণগত এবং মানসিক সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়। শিশুর কথা বলা বা ঠিকমতো শব্দ উচ্চারণ করা, নতুন বিষয় বুঝতে পারা বা শেখা কিংবা সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা তার জন্য বেশ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
সর্বোপরি, অটিজম শিশুদের চিকিৎসায় অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে, ভালো মানের ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে শিশুদের বুদ্ধি, ধৈর্য, আই-কন্ট্রাক্ট, আচরণ, কথা বলা সর্বোপরি শিশুদের সেন্স ফিরিয়ে আনার মাধ্যমেই সফলতায় পৌঁছানো সম্ভব। এ ছাড়াও অতিরিক্ত চঞ্চল শিশুদের আচরণও স্বাভাবিক হয়। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সফলতা অভিভাবকদের নিকট আশার আলো যুগিয়েছে।
লেখক: পিএইচ.ডি; এম. ফিল; ডিএইচএমএস। চিকিৎসক ও গবেষক (ক্রনিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার)।
চেম্বার: নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্স সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর, ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭০৭-০৭৩১ ৪১
মন্তব্য করুন
শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন
শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত
৯৫ ভাগ কিশোরীকে টিকা দেয়ার টার্গেট/ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকা পেল ১১ শিক্ষার্থী

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]