শরীর ও মন
শক্তিশালী হাড় গঠনে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা
২৮ আগস্ট ২০২৩, সোমবারক্যালসিয়াম শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অত্যাবশ্যক। শরীরে শক্তিশালী হাড় গঠন করতে এবং এর স্থায়িত্ব বজায় রাখতে আমাদের ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। দেহের ৯৯ শতাংশ ক্যালসিয়াম হাড়ের মধ্যে থাকে। মস্তিষ্ক এবং শরীরের অন্য অন্য অংশের মধ্যে স্বাস্থ্যকর যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য ক্যালসিয়াম বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। ক্যালসিয়াম পেশি এবং কার্ডিওভাসকুলার ফাংশনে ভূমিকা রাখে।
ক্যালসিয়ামের উৎস
আমাদের শরীরে নিজে নিজে ক্যালসিয়াম উৎপাদন করে না বা করতে পারে না। সুতরাং আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম আমাদেরকে খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। ক্যালসিয়াম বেশি রয়েছে এমন খাবারের মধ্যে রয়েছে-
* দুগ্ধজাত পণ্য যেমন দুধ, পনির এবং দই;
* সবুজ শাকসবজি যেমন কলা, পালং শাক ইত্যাদি;
* সাদা মটরশুঁটি;
* সামুদ্রিক পোনামাছ;
* ক্যালসিয়াম-সুরক্ষিত রুটি, সয়াপণ্য এবং কমলা জুস।
ক্যালসিয়াম শোষণ করার জন্য আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি’র প্রয়োজন। কেননা আমরা যদি খাবারে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম দুইটা একসঙ্গে না রাখি অথবা সমপরিমাণ না রাখি, তাহলে শুধু ক্যালসিয়াম সেবনে আমরা যতটুকু উপকার পাওয়ার কথা ততটুকু পাবো না। কিছু নির্দিষ্ট খাবার যেমন ডিমের কুসুম ও বিশেষ ধরনের মাশরুম থেকে আমরা ভিটামিন ডি পেতে পারি। ক্যালসিয়ামের মতো কিছু খাবারের উৎপাদকরা তাদের পণ্যে ভিটামিন ডি যুক্ত করে থাকে।
বয়স অনুযায়ী ক্যালসিয়াম সেবন
আমরা আমাদের প্রয়োজনমতো বা পরিমিত ক্যালসিয়াম সেবন করছি কিনা তা আমরা কীভাবে বুঝবো? জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট’র মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের এবং গর্ভাবস্থা ও বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
ক্যালসিয়ামের অভাবে স্বাস্থ্যের সাধারণত যে সমস্যাগুলো হতে পারে
ক্যালসিয়ামের অভাবে মানব শরীরে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্করা যদি কম পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করেন তাহলে তাদের অস্টিওপোরোসিস এবং অট্টালিকর হাড়গুলো সহজেই ফ্র্যাকচার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। বাচ্চাদের বেড়ে ওঠার জন্য ক্যালসিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেসব শিশুরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম সেবন করে না বা করতে পারে না তারা প্রথম যে সমস্যাটার সম্মুখীন হয় তা হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণ উচ্চতা না বাড়া এবং এর সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়া।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে ক্যালসিয়ামের পরিপূরকসমূহ
আমাদের প্রতি দিনকার খাবারে অনেক সময় আমাদের শরীরের যতটুকু ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন ততটুকু আমরা পাই না। আর সেজন্যই ক্যালসিয়ামের পরিপূরক হিসেবে বাজারে থাকা কিছু স্বাস্থ্যকর পণ্য আমরা ব্যবহার করতে পারি। ক্যালসিয়াম কার্বনেট এবং ক্যালসিয়াম সাইট্রেট হলো বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দেয়া ক্যালসিয়ামের পরিপূরক। তবে ক্যালসিয়ামের পরিপূরক গ্রহণ করার আগে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। যদি কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস এই ধরনের সমস্যায় ভোগেন তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়ামের পরিপূরক সেবন করুন।
বেশি ক্যালসিয়াম খারাপ ফলাফল বয়ে আনতে পারে
অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ তা ভালো কিছুই হোক আর খারাপ কিছুই হোক। যদি খুব বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম সেবন করেন তাহলে অবশ্যই আপনি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগবেন। কীভাবে বুঝবেন আপনি যে ক্যালসিয়ামের পরিপূরক গ্রহণ করছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কিনা? যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সেবন করে থাকেন তাহলে আপনার যে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে তা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, পেটের বিভিন্ন সমস্যা এবং অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদিও ব্যাপারটা বিরল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুব বেশি ক্যালসিয়াম রক্তে ক্যালসিয়াম জমা করতে পারে- একে হাইপারকালেসিমিয়া বলা হয়। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন ক্যালসিয়ামের পরিপূরক গ্রহণ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবে এই বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খাজা বদরুদজোদা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।
মন্তব্য করুন
শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন
শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত
৯৫ ভাগ কিশোরীকে টিকা দেয়ার টার্গেট/ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকা পেল ১১ শিক্ষার্থী

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]