বিবিধ
২০১৯ সালের পর থেকে কাশ্মীরে যেসব পরিবর্তন হয়েছে
অনলাইন ডেস্ক
(১ বছর আগে) ৬ আগস্ট ২০২৩, রবিবার, ২:৪৪ অপরাহ্ন
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা দেয়া সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে প্রচুর রিট আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের চার বছরের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। ২০১৯ সালে সরকারে ওই কঠিন পদক্ষেপে জম্মু ও কাশ্মীর দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হয়েছে।
এখন ওই ধারা বাতিলে সৃষ্ট রাজনৈতিক টানাপোড়েন কেন্দ্রীয় সরকার কখন কীভাবে সমাধান করে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামো পুনরুদ্ধার করবে, তারও কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ এখনও নেই।
রেডিফ ডটকম লিখেছে, বোর্ডের দাবি কেন্দ্র শাসিত পূর্ববর্তী রাজ্য স্তরে কাশ্মীরে মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা। ২০১৯ সালের ৫ই অগাস্ট কেন্দ্রের ওই পদক্ষেপের ফলে বিজেপির ভাসাভাসা কার্যক্রম ছাড়া কেবল রাজনৈতিক শূন্যতা ক্রমশই বেশি হচ্ছে। সেখানে অন্যান্য বঞ্চিত মূলধারার দলগুলো, বিশেষ করে ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি), পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) এবং কংগ্রেস রাজনৈতিক আলাপে বঞ্চিতই হয়েছে। ধারা বাতিলের ফলে এই দলগুলোর কাশ্মীরের মালিকানা বা অধিকার কেন্দ্রিক আলোচনা উপেক্ষিত হয়েছে।
আলতাফ বুখারির নেতৃত্বে নতুন ‘আপনি পার্টি’, সাজাদ গনি লোনের ‘পিপলস কনফারেন্স’ এবং গুলাম নবী আজাদের ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ আজাদ পার্টি সক্রিয়। কিন্তু রাজনৈতিক-সাংবিধানিক শূন্যতায় তাদের প্রকৃত মূল্য অপরীক্ষিতই রয়ে গেছে। এই দলগুলো এনডিএ’র দিকে ঝুঁকছে বলে মনে করা হচ্ছে।
যাইহোক এই ধারা বাতিলের পর থেকে জম্মু কাশ্মীরে শান্তি পুনরুদ্ধার এবং দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম আগের তুলনায় এখন উল্লেখযোগ্য অর্জন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘকাল পরে সেখানে জনসাধারণের সামাজিক জীবনের বিভিন্ন দিকগুলো কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই স্বাভাবিক রুটিনে ফিরেছে।
সেই হিসেবে কাশ্মীরে মানুষেস্বস্তির অনুভূতি স্পষ্ট হলেও অন্যদিকে সাধারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ৩৭০ ধারা বাতিল পর্যাপ্ত কিংবা বিকল্পও নয়। জনপ্রিয় প্রতিনিধিত্বমূলক ক্ষমতা কাঠামোকে দীর্ঘ সময় ধরে অস্বীকার করার নিজস্ব অন্তর্নিহিত নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ ধারা বাতিলের থেকে সেখানে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তনও দেখছেন অনেকে। কাশ্মীর বিষয়ে প্রবীণ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সায়্যিদ মালিক বলেন, ওই ধারা বাতিলের পর থেকে আগের তুলনায় কাশ্মীরে শান্তি ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার বিষয়টি সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ আজাদ পার্টির সভাপতি গুলাম নবী আজাদ বলেন, ৩৭০ ধারা বাতিলের মত অনেক জিনিসই কেন্দ্রের করা উচিত ছিল না। এই ধারা বাতিল এখানকার মানুষের স্বার্থে ছিল না; যদিও একটি জিনিস নিশ্চিত, সেটি হলো এই ধারা বাতিল সন্ত্রাসবাদ এবং পাথর নিক্ষেপের অবসান ঘটিয়েছে।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরি ও পুঞ্চে যে ঘটনা ঘটেছে তা উদ্বেগের বিষয়। সন্ত্রাসের কার্যক্রম কারও স্বার্থের বিষয় নয়।
ওই ধারা বাতিলের কাশ্মীরে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন, পর্যটন ও শিক্ষায় পরিবর্তনের দাবিও করা হচ্ছে। এএনআই লিখেছে, জম্মু-কাশ্মীরে সড়ক ও সেতু নির্মাণে গত চার বছরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। এই কয়েক বছরে সেখানকার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ চলছে। সড়কে মানসম্মত ঢালাইয়ের কাজ করা হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরের কমবেশি সব জেলাতেই মানসম্মত সড়ক যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। মানসম্মত ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। দৃষ্টি নন্দন সড়ক যোগাযোগ তৈরি হয়েছে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন তহবিলের আওতায় ৫৮ হাজার ৪৭৭ কোটি রুপির ৫৩টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। সড়ক, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, পর্যটন, কৃষি ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কাজের এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
চার বছর আগে ওই ধারা বাতিলের পর সড়ক নির্মাণের গতি দিনে ৬ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ২০ দশমিক ৬ কিলোমিটার হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের মোট সড়কের দৈর্ঘ দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ১৪১ কিলোমিটার।
এছাড়া ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংস্কার হচ্ছে। সেখানে নতুন নতুন সুযোগ ও প্রবৃদ্ধির পথ তৈরি হয়েছে। কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইন্টারন্টে পরিষেবার সহজলভ্যতা কাশ্মীরে ডিজিটাল ব্যবসার কার্যক্রম সম্প্রসারণের অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।
৩৭০ ধারা বাতিল পরবর্তী সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। ওই ধারা বাতিল বা রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য স্থিতিশীল ও প্রতিবন্ধকতাবিহীন শিক্ষার পরিবেশ বজায় রয়েছে।
সূত্র: রেডিফ ডট কম