শরীর ও মন
পাইলস বা অর্শ রোগ নিয়ে কিছু কথা
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল হাই
১৫ জুলাই ২০২৩, শনিবার
সংখ্যা বিচারে পাইলস বা অর্শ রোগ চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি অন্যতম রোগ। নারী-পুরুষ-শিশু কেউ এই রোগের আওতার বাইরে নন। কেন এ রোগ হয়, বা কীভাবে হয়- এ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। বিবর্তনবাদীরা মনে করেন, মানুষ যখন দাঁড়ানো শিখেছিল, তখন থেকেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব; মাধ্যাকর্ষণজনিত কারণে শরীরের রক্তপ্রবাহ নিচের দিকে চাপ অনুভব করার কারণেই মলদ্বারের রক্তনালিগুলো স্ফীত হয়ে অর্শ রোগের উৎপত্তি হয়েছিল। তবে প্রায় সব চিকিৎসাবিজ্ঞানী এ রোগ হওয়ার পেছনে আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণকে দায়ী করেছেন। একসময় মানবজাতির প্রধান খাদ্য ফলমূল হলেও ক্রমে ক্রমে তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। ফলমূলের বদলে মাংসসহ কিছু জাঙ্কফুড আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যে স্থান করে নেয়। নতুন খাবারগুলোর অনেক পদই নানাভাবে আমাদের বিপাক প্রক্রিয়া ও স্বাস্থ্যসম্মত মল তৈরিতে নেতিবাচক প্রভাব রাখে। এতে করে মলত্যাগের সময় মলদ্বারের আশপাশের মাংসপেশিগুলোকে অতিরিক্ত স্ট্রেস নিতে হয়, যা মলদ্বারের রক্তনালিগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে। এতে করেই রক্তনালিগুলো স্ফীত হয়ে পাইলসের সৃষ্টি হয়।
খারাপ জীবনাাচরণের মধ্যে রয়েছে সঠিক সময় খাবার না খাওয়া, সঠিক সময়ে মলত্যাগ না করে মল ধরে রাখার প্রবণতা, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম না করা, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকা ইত্যাদি।
যাই হোক, পাইলসের উপসর্গগুলো কখনো কখনো অন্য অনেক রোগ যেমন কোলন ও রেক্টাল ক্যান্সারেরও উপসর্গ হতে পারে।
চিকিৎসা: প্রথমাবস্থায় খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা পদ্ধতির পরিবর্তন ও মল নরম রাখার পরামর্শ দেয়া হয়।
প্রতিবেলা খাবারের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার রাখুন। শাকসবজি এবং ফলের মধ্যে প্রচুর আঁশ থাকে। যা অন্ত্রনালিতে বিপাক প্রক্রিয়ার পরও যথেষ্ট পরিমাণে অন্ত্রনালিতে অবশিষ্টাংশ হিসেবে থেকে যায় এবং মলের মধ্যে মিশ্রিত হয়ে পানি ধরে রাখে মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং সর্বোপরি মলকে নরম রাখে। অপরদিকে মাংস বা মাছ জাতীয় খাবার অন্ত্রনালিতে বিপাক প্রক্রিয়ার পর অন্ত্রনালিতে তার অবশিষ্টাংশ খুবই অল্প থাকে, এবং মলকে নরম রাখার ব্যাপারে কোনো ভূমিকাই রাখে না। সুতরাং অর্শ রোগীর চিকিৎসায় খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কখনো কখনো মল নরম রাখার জন্য লাগজেটিভ জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। পাইলসের জায়গায় ব্যথা থাকলে ব্যথানাশক মলম লাগানো যেতে পারে। গরম পানিতে কোমর ডুবিয়ে রাখলেও যথেষ্ট উপকার হয়। কিছু কিছু ট্যাবলেট যেমন উরড়ংসরহ + ঐবংঢ়বৎরফরহ কয়েক মাস সেবন করলে রোগের প্রাথমিক অবস্থা অনেকটাই কেটে যায়।
অগ্রবর্তী দ্বিতীয় মাত্রা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ মাত্রার পাইলসে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তবে মনে রাখতে হবে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণ এবং প্রাথমিক অবস্থায় সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে কষ্টকর শল্যচিকিৎসা এড়ানো সম্ভব।
সমাজে এ রোগ নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। মানুষের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে নানা জায়গায় গড়ে উঠেছে অপচিকিৎসার বিশাল নেটওয়ার্ক। তাই রোগ সম্বন্ধে জানতে হবে এবং এ রোগ সম্বন্ধে সবাইকে সচেতন করতে হবে।
লেখক: (চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ) জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চেম্বার: ১২, স্টেডিয়াম মার্কেট, সিলেট।
ফোন: ০১৭১২-২৯১৮৮৭
মন্তব্য করুন
শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন
শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত
৯৫ ভাগ কিশোরীকে টিকা দেয়ার টার্গেট/ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকা পেল ১১ শিক্ষার্থী

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]