দেশ বিদেশ
প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল জরিপ করছে বিবিএস
এক জরিপেই মিলবে ১৯৪ ধরনের তথ্য
স্টাফ রিপোর্টার
(৩ মাস আগে) ৯ জুন ২০২৩, শুক্রবার, ১২:৪৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৫০ অপরাহ্ন

দেশের নাগরিকদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং জনমিতিক তথ্য জানতে আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপ পরিচালনা করছে বিবিএস। প্রতি ১০ বছর অন্তর এই জরিপটি করা হয়। তবে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরিপটি পরিচালিত হচ্ছে। সংস্থাটির সবচেয়ে বড় এই জরিপে ১৩টি মডিউলের মাধ্যমে ১৯৪টি সূচকের তথ্য পাওয়া যাবে। এতে থাকবে নাগরিকের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে ব্যাংকিং সুবিধা ও অভিবাসনের তথ্যও। বৃহস্পতিবার বিবিএস অডিটরিয়ামে জরিপটি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন। পহেলা জুন থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত বাছাইকৃত খানায় জরিপটি পরিচালিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে খানার অবস্থান, গৃহের কাঠামো, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, ব্যাংকিং সুবিধা, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন, বিদেশ ফেরত এবং জলবায়ু প্রভাব সম্পর্কে তথ্য জানা যাবে।
জনশুমারির মাধ্যমে সকল নাগরিকের আর্থসামাজিক সব তথ্য পাওয়া যায় না বলে সব দেশেই শুমারি পরিচালনার পর বৃহৎ আকারে জরিপ পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এ জরিপটির মাধ্যমে লাখ ১০ হাজার খানায় তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সারা দেশে ২ হাজার ৮৫৬ জন গণনাকারী এ জরিপের কাজ করছেন।
জরিপে ট্যাবের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। যেখানে ১২১টি প্রশ্ন রয়েছে। আর বিবিএসর-এর প্রধান কার্যালয় থেকে এসব গণনাকারীকে রিয়েল টাইম মনিটরিং করা হবে। তথ্যগত ভুল এড়াতে ১৪০ জন্য কর্মকর্তা সংশোধনের জন্য কাজ করছেন। এসময় জরিপ কাজ সরাসরি মনিটরিং করার পদ্ধতি সম্পর্কেও অবহিত করা হয়। পরবর্তীতে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের মাধ্যমে জরিপ কাজের বাস্তব দিকের বিভিন্ন বিষয়গুলো সামনে আসে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লৌহজংয়ের হলদিয়া গ্রামের গৃহবধূ শারমিন আক্তার। কথায় জড়তা আছে, স্পষ্ট বলতে পারেন না। মায়ের বাড়িতেই সংসার। স্বামী ঢাকায় দর্জির কাজ করেন। সপ্তাহান্তে বাড়ি আসেন। তথ্য সংগ্রহকারীরা শারমিনের কাছে তার পরিবারের আয় কী, কোথায় বাজার করেন, কীভাবে টাকা খরচ করেন, পরিবারের কেউ প্রবাসে আছেন কি না, স্মার্ট ফোন আছে কি না, নিজেদের আলাদা ঘর আছে কি না এমন অনেক তথ্য জানতে চান। শারমিনকে ১৯৪টিরও বেশি তথ্য দিতে হয়েছে আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপের মাঠকর্মীদের। এগুলোই দেশের বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতি নির্ধারণ করবে। জানাবে অর্থনৈতিক ও অভিবাসনসহ ১৯৪ ধরনের তথ্য।
একই জেলার টঙ্গিবাড়ি উপজেলার পরিসংখ্যান কর্মকর্তা অনামিকা এসব তথ্য সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, অনেকেই তথ্য দিতে চান না। কোথাও আবার ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তা নিয়েও তথ্য নিতে হয়েছে। আর প্রশ্নপত্র অনেক বড় হওয়ায় তথ্য নিতেও অনেক সময় লেগে যায়।
বিবিএস উপ-পরিচালক (মুন্সিগঞ্জ জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, সবার সহযোগিতায় ভালোভাবে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। তবে রেমিট্যান্স ও জমি সংক্রান্ত তথ্য অনেকে দিতে চান না। আমরা কৌশলে সংগ্রহ করছি। অনেকে মনে করেন জমি ও রেমিট্যান্সের তথ্য দিলে কর দিতে হবে।
বিবিএসের যুগ্ম সচিব মো. দিলদার হোসেন জানান, এ জরিপের উদ্দেশ্য হলো জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রমাণনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ, উন্নয়ন কর্মসূচী প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও গবেষণা কাজে বিভিন্ন আর্থ সামাজিক ও জনমিতিক সূচকের বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করা।
উল্লেখ্য, এই জরিপের ফলে আপনার বসতঘরের সব ধরনের তথ্য যেমন পাকা, নাকি কাঁচা এসব তথ্যও জানা যাবে। মেঝে কাঁচা নাকি পাকা নাকি টাইলস করা এ ধরনের ১০টি প্রশ্ন থাকবে। পরিবারের মানুষ টিউবয়েলের পানি পান করেন কীভাবে বা বিশুদ্ধ পানির উৎস কী-এ সম্পর্কিত প্রশ্ন আছে জরিপে। প্রবাসী আয় আছে কি না বা পরিবারের কোনো সদস্য কোনো সময় প্রবাসী আয়ে সম্পৃক্ত ছিলেন কি না-এমন তথ্যও নেওয়া হচ্ছে জরিপে। এছাড়া গত সাতদিনে কোনো উপার্জন হয়েছে কি না বা উপার্জন হলেও তা খরচ হয়েছে কীভাবে, কোন বাজারে বাজার করেন, পরিবারটি কি পুরুষ প্রধান নাকি নারী প্রধান-জরিপে মিলবে এসব তথ্যও। এছাড়া ব্যাংক লেনদেন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নেয়া হবে তথ্য প্রদানকারীর কাছ থেকে।